Friday , April 19 2024
You are here: Home / রাজনীতি / মোদি দানবের মতো আচরণ করেছে, তাকে স্বাগত জানাতে পারছি না
মোদি দানবের মতো আচরণ করেছে, তাকে স্বাগত জানাতে পারছি না

মোদি দানবের মতো আচরণ করেছে, তাকে স্বাগত জানাতে পারছি না

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে ছিলেন মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে তাদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব। এসময় ভারতের দাঙ্গার ঘটনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা করার সমালোচনাও করেন তারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে না পারার জন্য দুঃখপ্রকাশও করেন তারা।

রবিবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসবেন, আমরা দুই হাত প্রসারিত করে থাকবো তাকে বুকে নেওয়ার জন্যে। কিন্তু যে সময়ে তিনি বাংলাদেশে আসছেন সেই সময়ে দুই হাত প্রসারিত করে থাকা নয়, দুই হাত শক্ত করে রাখতে হবে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, অসাম্প্রদায়িক মানবের দেশ ভারত যে দানবীয় ব্যবহার করেছে তারপর তার (নরেন্দ্র মোদি) এই মুহুর্তে বাংলাদেশে আসা এবং তাকে স্বাগত জানাতে না পারা আমরা দুঃখিত।

তিনি আরও বলেন, গতকাল (রোববার) পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা যথাযথ সম্মান করবো। নিশ্চয়ই তাকে যথাযথ সম্মান অবশ্যই করবেন। কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষ দামোদর নরেন্দ্র মোদিকে এবার সম্মান করতে পারছে না। একজনও তাকে সম্মান করবে না। এই অবস্থায় তিনি আসবেন কী আসবেন না আমরা জানি না।

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী একা আওয়ামী লীগের পালন করার কোনও অধিকার নেই মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান নিয়ে আমাদের কোনও কথা নেই। আমরা চিনি আমাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং জন্মদিন পালন করলে বাংলাদেশের সব লোককে নিয়ে সেটা পালন করা উচিত এবং করতে হবে। শুধু আওয়ামী লীগ বা শুধু সরকার যদি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে চায় করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের নেতা, বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী একা আওয়ামী লীগের পালন করার কোনও অধিকার নেই।

তিনি আরও বলেন, শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনার বাবা হতে পারেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আ স ম আবদুর রবের বাবা, সিরাজুল আলম খানের বাবা, নুরে আলম সিদ্দিকীর বাবা, তোফায়েল আহমেদের বাবা, বলতে গেলে আমারও বাবা। তাহলে আমার বাবার জন্মদিন, আ স ম আবদুর রবের বাবার জন্মদিন, শাহজাহান সিরাজের বাবার জন্মদিন, লতিফ সিদ্দিকীর বাবার জন্মদিন পালন করতে হলে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। তিনি দেশের প্রতিটি মানুষের বঙ্গবন্ধু, শুধু আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু নন। সেজন্য নেত্রী শেখ হাসিনা আপনি একটু ভেবে দেখবেন, ৪২ বছর লিবিয়া শাসনের পর কর্নেল গাদ্দাফি ক্ষমতা ও জীবনও হারিয়েছেন, মিশরে হোসনি মোবারক …। আপনাকেও বলি, আপনি ভালো হয়ে যান, মানুষের নেতা হোন, শুধু বড় বড় কথা বলবেন না।

অনুষ্ঠানে একাত্তরে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনেরস্মৃতিচারণ করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। এসময় দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও তুলে ধরেন তিনি।

আ স ম আবদুর রব বলেন, এখনও সিরাজুল আলম খান বেঁচে আছেন, আসম রব বেঁচে আছে। পতাকাকে অসম্মান করলে, অস্বীকার করলে পতাকার কিছু আসবে যাবে না। এই জাতি যতদিন থাকবে, বাংলাদেশের পতাকা ততদিন থাকবে। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্দিকে, শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার, নিউমার্কেট থেকে রেলভবন পর্যন্ত এই জায়গায় লক্ষ জনতা-শিশু উপস্থিত ছিলেন। সেদিন কারফিউ ছিল, হরতাল ছিল। এরমধ্যেই লক্ষ জনতার সমাবেশ হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, সিরাজুল আলম খান, নিউক্লিয়াস-বিএলএফ এসব অস্বীকার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ঘটে নাই। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ধাপে ধাপে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়া-এটা করেছিলেন সিরাজুল আলম খান। ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে তোফায়েল ভাই দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা মামলা থেকে বেরিয়ে আসার পরে।

তিনি আরও বলেন, এখন যে প্রচারণা দেখা যাচ্ছে, সিরাজুল আলম খানকে তারা নিউক্লিয়াস স্বীকার করতে রাজি না, ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন স্বীকার করতে রাজি না। নিজের পরিবার, গোষ্ঠী, আত্মীয় স্বজনের অবদানকে শুধু তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে ইতিহাসকে বিকৃত করে, ইতিহাসকে অস্বীকার করে। এগুলো অস্বীকার করা মানে মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা। ২ মার্চকে অস্বীকার করে কোনও লাভ হবে না।

তিনি বলেন,  আজকে যারা ভোট ডাকাতি করে, যারা ক্যাসিনো চালায়, টাকা বিদেশে নিয়ে যায়, যারা জনগণের অধিকার-কর্তৃত্ব স্বীকার করে না সেই ভোট ডাকাতদের মুজিববর্ষ পালন করার কোনও অধিকার নাই।

আ স ম আবদুর রব বলেন, আওয়ামী লীগ না করলে এখন মুক্তিযোদ্ধা হয় না। আওয়ামী লীগ করলে সে মুক্তিযোদ্ধা, তা না হলে রাজকার। এই মানসিকতা নিয়ে যারা আছে তারা কী…? বর্তমান সরকার দেশকে ধবংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে টাকার গোডাউন। এই সরকারকে বিদায় না করলে জাতির ভবিষ্যৎ একটা অভিশাপের দিকে পড়বে। গণঅভ্যুত্থান ছাড়া, গণআন্দোলনকে এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকারকে পরিবর্তন করা যাবে না। আমি সরকারকে বলবো, আপনাদের যেতে হবে। কিভাবে যাবে, কখন যাবেন সেটাই প্রশ্ন।

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকে ২ মার্চ ভোটাধিকার দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। যখন ভোটই নাই, ভোটের অধিকার নাই, মানুষ ভোট দিতে যায় না। ভোটাধিকার দিবসের নামে  আমাদের সঙ্গে সবচাইতে বড় প্রতারণা ও রসিকতা করা হয়েছে।

জেএসডির কার্যকরী সভাপতি সা কা ম আনিসুর রহমান খান কামালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুল মঈন খান, গণফোরামের ড. রেজা কিবরিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জেএসডির তানিয়া রব, সিরাজ মিয়া, ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় আ স ম আবদুর রবের হাতে পুস্পস্তবক দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নুরুল হক নূর।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!