Thursday , April 18 2024
You are here: Home / Uncategorized / ডিসি সুলতানাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ
ডিসি সুলতানাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ

ডিসি সুলতানাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ

সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড দেওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে করা এফআইআর মামলা হিসেবে গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘেষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়।

এদিন মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দণ্ড দেয়া-সংক্রান্ত ঘটনায় প্রশ্ন তুলেন আদালত। ওই ঘটনায় আরিফুল ইসলামকে দণ্ড দেয়া হলেও স্বীকারোক্তির স্থানে আসামির নাম দেখানো হয় ‘মো. রফিকুল ইসলাম’। আবার আসামির বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘মৃত. মো. রফিকুল ইসলাম’।

দণ্ড দেয়ার বিষয়ে আদালতের নজরে আসা বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত বলেছেন, আমরাও (বিচারকরা) নিজেরাও এসব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেক কিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোনো কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা দেয়ার বৈধতা প্রশ্নে দায়ের করা রিটের শুনানিতে সোমবার (২৩ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এসব বিষয়ে তুলে ধরা হয়। আদালতে আজ সাংবাদিক আরিফের পক্ষে শুনানিতে আছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

শুনানির শুরুতে আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিক আরিফকে সাজাপ্রদান সংক্রান্ত নথিপত্রের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এবং এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ নথি দিয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন কতটুকু আইনসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, সাংবাদিক আরিফকে সাজা দেয়া হয়েছে ১৩ মার্চ, অথচ সাজার কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১৪ মার্চ। আবার সাজা দেয়ার আগেই তাকে জেলে পাঠানো হলো, এটা কীভাবে সম্ভব? ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামির নাম এবং বাবার নাম একই লেখা হয় কীভাবে?

জবাবে আদালত বলেন, আমি নিজেও এসব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেক কিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোনো কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়।

ইশরাত হাসান বলেন, স্বীকারোক্তিতে আসামি আর বাবার নাম একই। সেখানে আসামির নাম নেই। তাহলে কেন তাকে সাজা দেয়া হবে? তাহলে আরিফ তো সেই ব্যক্তি না। এমনকি স্বীকারোক্তিতে আরিফের কী অপরাধ তারও কোনো বর্ণনা নেই। এরপরও এ মামলায় আর কি থাকতে পারে? এ মামলায় এখন যদি নতুন করে আর কোনো নথি আসে তাহলে তার দ্বারা আদালত মিস লিড হতে পারে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, বাড়ি থেকে ধরে তুলে নিয়ে সাজা দেয়া আইনসম্মত নয়। এছাড়াও দুজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে একই বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মদ ও গাঁজা একসঙ্গে খাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে মদ ও গাঁজা কীভাবে খাওয়া যেতে পারে? এমনকি ঠিকানাও টেম্পারিং করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মদ খাওয়ার অপরাধে সাজা দিয়েছে কিন্তু গাঁজার অপরাধে দেয়নি। তাহলে গাঁজা কোথায় গেল? এ মামলায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আরিফের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়নি।

আইনজীবীর শুনানি শেষ হলে আদালত বলেন, যেহেতু তিনি (সাংবাদিক আরিফ) হাইকোর্টে এসেছেন সেহেতু তিনি তার নিজের পিটিশনার করলে ভালো হবে। আপনারা তাকে পিটিশনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করুণ। আমরা আদেশ দিতে চাই, নইলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ওনার (সাংবাদিক আরিফ) হাতভাঙা। তখন আদালত বলেন, প্রয়োজনে উনি টিপসই দিয়ে মামলার পিটিশনে স্বাক্ষর করুক। আমরা বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি। এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা মামলাটি শুনতে চাই।

গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ।

এ বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়। এ ঘটনায় কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!