রমজানের সিয়াম পালনের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা ফরজ নয় সুন্নত-মুস্তাহাব। এ রোজা পালনের মর্যাদা অনেক বড় এবং অনেক সওয়াব সহ শারীরিক উপকার ও রয়েছ।
শাওয়ালের ছয় রোজা ধারাবাহিকভাবে অথবা বিরতি দিয়ে রাখা ভালো। কারও যদি রমজানের কাজা রোজা থেকে থাকে, প্রথমে রমজানের কাজা আদায় করে নেবে, এরপর শাওয়ালের রোজা রাখবে। যারা পবিত্র রমজানের যথাযথ কদর করেননি তাদের উচিত আল্লাহর কাছে তওবা-ইস্তেগফার করে রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া। গোনাহ ছেড়ে দিয়ে নেক আমলের দিকে ফিরে আসা, অন্যথায় দুনিয়া এবং আখেরাতে আল্লাহতায়ালার ভয়াবহ শাস্তি অনিবার্য।
হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের সিয়াম ৩০ রোজা ১০ মাসের সিয়ামের ৩০০ রোজার সমতুল্য; আর শাওয়ালের ছয় রোজা দুই মাসের ৬০ রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের সিয়াম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।”[সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরমিজি, সুনানে নাসায়ী ও সুনানে ইবনে মাজাহ]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য বাণী দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পরে ছয়দিন রোজা রাখবে সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল:যে ব্যক্তি একটি নেকি করবে সে দশগুণ সওয়াব পাবে।”অন্য বর্ণনাতে আছে- “আল্লাহ এক নেকিকে দশগুণ করেন। সুতরাং এক মাসের রোজা দশ মাসের রোজার সমান। বাকী ছয়দিন রোজা রাখলে এক বছর হয়ে গেল।”[সুনানে নাসায়ী, সুনানে ইবনে মাজাহ] হাদিসটি সহিহ আত-তারগীব ও তারহীব (১/৪২১) গ্রন্থেও রয়েছে।
সহিহ ইবনে খুজাইমাতে হাদিসটিএসেছে এ ভাষায়- “রমজান মাসের রোজা হচ্ছে দশ মাসের সমান। আর ছয়দিনের রোজা হচ্ছে- দুই মাসের সমান। এভাবে এক বছরের রোজা হয়ে গেল।”
হাম্বলি মাযহাব ও শাফেয়ি মাযহাবের ফিকাহবিদগণ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখা একবছর ফরজ রোজা পালনের সমান। অন্যথায় সাধারণ নফল রোজার ক্ষেত্রেও সওয়াব বহুগুণ হওয়া সাব্যস্ত। কেননা এক নেকিতে দশ নেকি দেয়া হয়।
এ ছাড়া শাওয়ালের ছয় রোজারাখার আরও ফায়দা হচ্ছে- অবহেলার কারণে অথবা গুনাহর কারণেরমজানের রোজার উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে সেটা পুষিয়ে নেয়া।কেয়ামতের দিন ফরজ আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথমনামাযের হিসাব নেয়া হবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন –অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার নামাজ দেখ, সেকি নামায পূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি নামাযে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামায লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন, দেখ আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি নফল নামায থাকে তখন বলেন, “নফল নামায দিয়ে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূর্ণ কর।”- এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।[সুনানে আবু দাউদ]
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শাওয়াল মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে সারা বছর রোজা রাখার ফজিলত অর্জন করার জন্য তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলাই উত্তম ফজিলত দানকারী। তার কাছেই যাবতীয় কল্যাণ লাভে মুমিন বান্দার বিনীত আবেদন।
লেখকঃ মোঃ আব্বাস আলী
সহকারী অধ্যাপক (ব্যবস্থাপনা বিভাগ)
জি, টি ডিগ্রী কলেজ, কোটচাঁদপুর।
ঝিনাইদহ।