নূরুন্নবী বাবু ॥ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের আলোচিত সেই শিল্পী মেম্বরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে কুষ্টিয়া সদর ইউএনও অফিস থেকে গঠিত তদন্ত দল। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর নিকট অভিযোগের ভিত্তিতে আজ (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে তদন্ত করেছেন সদর উপজেলা মহিলা বিষায়ক কর্মকর্তা মর্জিনা খাতুন ও সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আবু রায়হানের তদন্ত দল। এ সময় বটতৈল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এম এ মোমিন মন্ডল সহ সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য (মেম্বার) শিল্পী ওই এলাকার ৪ ওয়ার্ডের রোকেয়া খাতুনসহ অর্ধশত নারীর কাছে থেকে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মাতৃকালীন ভাতা ও চাকুরী দেয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এভাবে গত ৩ বছরে ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের শত শত নারী পুরুষের কাছে থেকে বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই প্রভাবশালী শিল্পী মেম্বর। পরে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে ওই শিল্পী মেম্বর ও তার স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও সন্তানেরা এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। এর আগেও ওই শিল্পী মেম্বারের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন ইউনিয়ন কার্যালয়ে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবার ভুক্তভোগীদের মধ্যে শুধু ৪ নং ওয়ার্ডের ৩২ জন নারী অভিযোগ করেন সদর ইউএনও অফিসে ।
শুধু তাই নয় টাকা নিয়ে কোন প্রকার কার্ড না করে দেয়ায় ভুক্তভোগী রোকেয়া খাতুন নামের এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী টাকা ফেরত চাওয়ায় ওই বৃদ্ধাকে মারধর করেন অভিযুক্ত শিল্পী মেম্বর ও তার স্বামী হাসান এমন অভিযোগ করে রোকেয়া খাতুন। এ ঘটনার পর ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় উপস্থিত হয়ে শিল্পী মেম্বরের বিচার চেয়ে ৩২ জন মহিলা সাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র জমা দেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। এ ঘটনার পর ইউএনও অফিসে অভিযোগের কথা শুনে তাৎক্ষণিক বটতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ মোমিন মন্ডল ওই দিন ১৭ নভেম্বর অভিযুক্ত ইউপি মহিলা সদস্য শিল্পীকে সাময়িক বরখাস্ত করেন বলে সাংবাদিকদের জানান। এর পরে গত ২৪ নভেম্বর মাসিক সভায় সেই বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করেন।
এদিকে ওই ইউপি মহিলা সদস্য শিল্পীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটির ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান। কিন্তু ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা জানানো হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা না নিয়ে তিনি তদন্ত কমিটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করে কয়েকজন সাংবাদিক ডেকে ওই ইউপি সদস্য শিল্পীর বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এদিকে বিধবাভাতা-বয়স্কভাতা, চাকুরী দেয়াসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। পরে তারা ইউএনও কাছে শিল্পী মেম্বারের বিচার চেয়ে একটি অবেনপত্র জমাদেন। সে সময় ইউএনও জুবায়ের হোসেন চৌধুরী ভুক্তভোগীদের কথা শোনেন এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এরই পেক্ষিতে ইউএনও অফিস থেকে গঠিত তদন্ত দল আজ মঙ্গলবার দুপুরে তদন্তে আসেন এবং ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলেন। পরে তদন্ত দলের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মর্জিনা খাতুন এর মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। অভিযোগকারীদের মধ্যে আরো কয়েকজন বাকী আছে, কাল তদন্ত শেষ হবে। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে অভিযোগের শতভাগ সত্যতা পাওয়া গেছে। আরেক কর্মকর্তা আবু রায়হান এর মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের তদন্ত শেষ, আগামী কাল তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। তবে তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।