Monday , December 2 2024
You are here: Home / Uncategorized / দাম বেশি, তাই খাওয়া কমেছে

দাম বেশি, তাই খাওয়া কমেছে

ঢাকা অফিস : টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে দিন দিন লম্বা হচ্ছে লাইন। আমদানি বেড়েছে, বাজারে এসেছে নতুন পেঁয়াজও। তবু আগুনদামে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস।
এক বছর আগে দেশে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ টাকার নিচে। চলতি বছরের মে-জুন মাসেও পেঁয়াজের দাম এ রকমই ছিল। ঈদুল আজহার আগে পর্যাপ্ত জোগান থাকলেও পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। ক্রমেই বাড়তে বাড়তে পেঁয়াজের দাম অক্টোবরে আকাশচুম্বী হয়। লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকা পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

পেঁয়াজের এই মাত্রাতিরিক্ত দামের প্রভাব পড়েছে সবার ওপর। দোকানদাররা জানান, বেহিসাব দাম বৃদ্ধির এই চক্করে বেশি লাভবান হয়েছেন পেঁয়াজের মোকামের আড়তদাররা, যাঁরা মৌসুমে কম দামে পেঁয়াজ কিনে জমিয়ে রেখেছেন। জানা গেছে, দাম বাড়ায় পাইকারি বিক্রেতাদের বিক্রি কমেছে, তবে মুনাফার ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি। আগে বেশি পেঁয়াজ বেঁচে যে মুনাফা হতো, এখন কম বেঁচেই সেটা উঠছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর পড়েছে বাড়তি খরচের চাপ। মানুষ গৃহস্থালিতে ব্যবহার কমিয়ে স্বল্প পেঁয়াজে তরকারি খাচ্ছে।

পেঁয়াজের অগ্নিমূল্যের প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁও। মালিকরাও মাছ, মাংস, সবজি ও অন্যান্য তরকারিতে পেঁয়াজ কম দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, পেঁয়াজ তরকারির মান বৃদ্ধি করে, কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবহারের পরিমাণ কমেছে। কোনো কোনো মালিক বলছেন, পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে মান ঠিক রাখা হয়েছে। আবার দামের তুলনায় খদ্দেরকে দেওয়া পদের পরিমাণও কমিয়েছেন কেউ কেউ।

পাবনার সাঁথিয়ার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রহিম। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। গতকাল মঙ্গলবার

সকাল ১১ তাঁকে দেখা গেল কয়েক বস্তা পেঁয়াজ নিয়ে আড়তে বসে আছেন। কথোপকথনে জানালেন, পেঁয়াজের বিক্রি কমে গেছে। আগে এক দিনে আট থেকে ১০ বস্তা বা কখনো এর চেয়েও বেশি বিক্রি হয়েছে, এখন দু-তিন বস্তা বিক্রি করতেই দিন পার। মোট কথা চড়া দামের কারণে টাকার হিসাবে আগের সমান বিক্রি হলেও ওজনের হিসাবে পেঁয়াজ বিক্রি কমে গেছে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বললেন, ‘আমার একজন ক্রেতা কমপক্ষে এক পাল­া বা পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতেন। দাম চড়া হওয়ায় এখন এক কেজি পেঁয়াজ কিনছেন তিনি। আগে ৩০-৩৫ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি, যাতে পাঁচ কেজিতে দাম পড়ত ১৫০ থেকে ১৭৫ টাকা। কিন্তু এখন দেশি পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার বেশি দামে।’

কেবল রহিম নন, আরো পাঁচজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় পেঁয়াজ বিক্রি কমে যাওয়ার কথা। সেলিম নামের এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জানালেন, রাজধানীর একটি বড় হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট দুই দিন পর পর এক বস্তা করে পেঁয়াজ কিনত, কিন্তু এখন সেটা কমে গেছে। এক সপ্তাহ পর এক বস্তা পেঁয়াজ নিয়ে গেল আজ

প্রায় আধাকেজি পেঁয়াজ নিয়ে কারওয়ান বাজার সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন দিনমজুর সেলিম। তিনি কারওয়ান বাজারে সবজি উঠানো-নামানো ও পৌঁছানোর কাজ করেন। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করে বাসায় ফিরছিলেন। পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৩০০ টাকা আয় হয়েছে, যার এক অংশ অর্থাৎ ১১০ টাকা দিয়ে আধাকেজি পেঁয়াজ কিনেছি। চাল ও সবজি নিয়ে বাসায় ফিরব।’ তিনি জানালেন, আগে এক কেজি বা বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ কিনলেও বাড়তি দামের কারণে এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

রাজধানীর কয়েকটি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা গেছে, ভাত খাওয়ার সময় এখন সালাদ মিলছে না। সালাদ থাকলেও তাতে আছে কেবল শসা ও গাজর। পেঁয়াজের ছিটেফোঁটাও নেই। কেউ চাইলেও দিচ্ছে না মেসিয়ার ‘মামা’রা। কারওয়ান বাজারে ক্যাফে সুরমা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী জানালেন, তরকারিতে পেঁয়াজের পরিমাণ কমেছে। প্রতিদিন ১৫-২০ কেজি পেঁয়াজ প্রয়োজন হলেও এখন এর ব্যবহার কমেছে। তিনি জানালেন, তরকারি বা সবজির মান ঠিক রাখা হয়েছে, দাম বাড়ানো হয়নি। তবে পরিমাণ কমানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চানখাঁরপুলে হরেক পদের সবজি-ভর্তা-ব্যঞ্জনের জন্য সুপরিচিত নিরব হোটেলের মালিক আমিনুর রহমান এজাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দাম বাড়ায় পেঁয়াজের ব্যবহার কমেছে। এখানে প্রতিদিনই অনেকে খেতে আসে। প্রতিদিন ৩৫ কেজি পেঁয়াজ প্রয়োজন হয়, কিন্তু এখন সেটা কমিয়ে ২০ কেজি করা হয়েছে। পেঁয়াজের কারণে সবজি ও তরকারির আইটেমও কমানো হয়েছে। তরকারি ও পণ্যের মান ধরে রাখতে হচ্ছে, কিন্তু দাম বাড়াতে পারছি না।’

রাজধানীর ধানমণ্ডির স্টার কাবাব হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টর নূর উদ্দিন সময়ের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ভোক্তার সমাগম অনেক বেশি। পেঁয়াজের দাম বাড়লেও মান ঠিক রাখা হয়। তবে ব্যবহার আগের চেয়ে কিছু কমেছে।’

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের মিতালী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ায় হোটেলের খরচ বেড়ে গেছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো সম্ভব হয়নি। তরকারিতে আগে ১০ কেজি পেঁয়াজ ব্যবহার হতো, এখন সেটা কমিয়ে পাঁচ কেজি করা হয়েছে। কেবল পেঁয়াজই নয়, ময়দা ও তেলের দামও বাড়তি। এসব কারণে এখন হোটেল ব্যবসায়ীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!