‘আমাকে বদলি করলে আলম আরা বেগম স্যার (ডিজি, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর) আপনার কলঙ্ক হোক, আমি সেটা চাই না। আমার বদলি আপনাকে করতে হবে না স্যার, আপনি কলঙ্কমুক্ত থাকুন। আলাহ আপনাকে সুস্থ রাখুন, আমিন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এখন সত্যিকারার্থে ধারণ করা শুধু অন্যায় নয়, অপরাধ। সে দায়ে আমাকে ফাঁসি দেয়া হোক। এ দেশে আমি একজন দেশদ্রোহী, আমাকে গুলি করে হত্যা করা হোক। লেখালেখি জীবনে ১২টি বইয়ের মধ্যে সাতটি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা। এসব লেখার অপরাধে আমাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হোক। ২০১৪ সালে হরতাল অবরোধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক স্যারের মাধ্যমে নিজের বই বিক্রির টাকা বার্ন ইউনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসহায় পোড়া রোগীদের দান করার অপরাধে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। কারণ এত কিছুর পরেও আমি এ দেশে এখন একমাত্র বিএনপি-জামায়াত।’
এ করুণ ক্ষোভমিশ্রিত আর্তি স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের (স্বানাপ) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদের এক সরকারি নার্সের। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এ নার্স গত এক বছরের বেশি সময় ধরে তার কর্মস্থল ঢাকায় বদলির জন্য নার্সিং অধিদফতরে দৌড়ঝাঁপ করে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান নার্সিং মহাপরিচালক কর্তৃক ভর্ৎসনার শিকার হয়ে গত ২ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ স্ট্যাটাস দেন।
জানা গেছে, সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী একই কর্মস্থলে চাকরির সুযোগ পাবে এমন কথা বলা হলেও অনেক অনুরোধ করেও খাদেমুলের বদলি হচ্ছে না। স্ত্রী-সন্তান ও অসুস্থ বাবা-মাকে দেখভালের জন্য তাকে প্রতি সপ্তাহের বন্ধের দিন সাতকানিয়া থেকে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। চাকরিবিধি মেনে এবং সর্বোপরি মানবিক কারণেই তার বদলি হওয়া আবশ্যক হলেও টালবাহানা করে তাকে বদলি করা হচ্ছে না।
স্বানাপের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ইকবাল হোসেন সবুজের সঙ্গে আলাপ হলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘চিহ্নিত বিএনপি-জামায়াতের অনুসারীরা নির্বিঘ্নে ঢাকার বাইরে থেকে বদলি হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিং প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে এমন নজির রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি-জামায়াত নার্সদের রাজধানীতে বদলি ও পদায়ন ওয়ান-টু-র মধ্যে হলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির নার্সদের বদলি না হওয়া দুঃখজনক ও লজ্জার।’
এক বছর ধরে চেষ্টা করেও বদলি হতে না পেরে খাদেমুল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে স্বানাপ মহাসচিব মন্তব্য করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি নার্সিং অধিদফতরে নতুন মহাপরিচালক হিসেবে আলম আরা বেগম নামে একজন অতিরিক্ত সচিব যোগ দেন। তিনি যোগদানের পরপরই জামায়াত সিন্ডিকেট চক্রের প্ররোচনায় দুর্নীতির দায়ে ঢাকার বাইরে বদলিকৃত খায়রুল নামে এক কর্মচারীকে নার্সিং অধিদফতরে ফিরিয়ে আনেন।
গত বুধবার বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ও স্বানাপ নেতারা নার্সিং অধিদফতরে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী আনোয়ার, হারুনুর রশীদ রুবেল, খোরশেদ, হাফিজ ও শওকতকে অধিদফতর থেকে বদলির জন্য নার্সিং মহাপরিচালককে অনুরোধ জানান। সাবেক নার্সিং মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। সেই মহাপরিচালকের সব দুষ্কর্মে এরা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু এসব দুর্নীতিবাজ বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে জানা যায়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে নার্সেস মহাপরিচালক আলম আরা বেগমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।