Tuesday , February 11 2025
You are here: Home / জাতীয় / খালেদা জিয়ার ‘স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন’ দাখিল হচ্ছে না কাল

খালেদা জিয়ার ‘স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন’ দাখিল হচ্ছে না কাল

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানাতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার রিপোর্ট (প্রতিবেদন) আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আদালতে দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত দিনে রিপোর্ট দাখিল করতে পারছে না।

ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন রোগব্যাধির রিপোর্টসহ সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা সভা করেন। কিন্তু আগামীকাল বৃহস্পতিবার আদালতে সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দাখিলের ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি তারা। এ কারণে বৃহস্পতিবার তারা আদালতে সময় প্রার্থনা করবেন। মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য সময়ের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুসারে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পর্যালোচনা সভা করেন। কিন্তু তার কাছে (উপাচার্যের মাধ্যমেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে) এখনও মেডিকেল বোর্ড প্রতিবেদন দেয়নি। ফলে আগামীকাল আদালতে রিপোর্ট দাখিল হচ্ছে না।’ প্রতিবেদন দাখিলে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানাতে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট আদালতে দাখিলের নির্দেশ কপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের কাছে গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে পৌঁছে। আগামীকালের (৫ ডিসেম্বর) মধ্যে এ রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়। এদিন আদেশের জন্য দিনও ধার্য করেন আদালত।

গত ২৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি ওইদিন আপিল বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে বলেন সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ৫ ডিসেম্বর মেডিকেল বোর্ডকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

এর আগে শুনানিতে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, বয়স ও মানবিক দিক বিবেচনার কথা জানিয়ে তার জামিনের আরজি জানান।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গত ৭ অক্টোবর একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ৩০ অক্টোবর বোর্ডের প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করেন বলে আদালতকে জানান জয়নুল আবেদীন। অনানুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া ওই প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার উন্নত থেরাপির কথা বলা আছে বলে দাবি করেন জয়নুল আবেদীন। এ অবস্থায় আদালত বলেন, তাহলে আমরা একটা রিপোর্ট কল করি। পরে আদালত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

এদিকে দলীয় চেয়ারপারসনের সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার বলেন, পুরো জাতি বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, উচ্চ আদালত থেকে দেশনেত্রী ন্যায়বিচার পাবেন। বেগম খালেদা জিয়া দেশের সিনিয়র সিটিজেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুবারের বিরোধীদলীয় নেতা ও দেশের জনপ্রিয় শীর্ষ রাজনীতিবিদ এবং গুরুতর অসুস্থ। তার জামিন পাওয়া ন্যায়সঙ্গত অধিকার। এ ধরনের মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অনেকেই জামিন পেয়েছেন, সেটির নজিরও অসংখ্য রয়েছে।’

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক। রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা বাতিল ও খালাস চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন খালেদা জিয়া। এর গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি নিয়ে ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে দেয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এছাড়া বিচারিক আদালতে থাকা মামলাটির নথি তলব করা হয়। দুই মাসের মধ্যে নথি পাঠাতে বলা হয়।

বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি গত ২০ জুন হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা।

শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ জুলাই জামিন আবেদন খারিজ করেন। পরে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে তার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে যান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে গত বছরের ৮ ফেব্র“য়ারি পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!