উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়তেও বাধ্য করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ২৯ দিন পেরিয়ে গেছে। এত দিনেও বিশ্ববিদ্যালয় না খোলায় নানামুখী সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা। ফলে বিভাগগুলোতেও দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে জীবিকা নির্বাহ করা বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনও আছেন বিপদে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ২৩ আগস্ট শুরু হওয়া এ আন্দোলন ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন মোড় নেয় উপাচার্যের অপসারণ দাবির আন্দোলনে। ১০ দিন উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখার পর ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাঁদের পিটিয়ে সরিয়ে দেন। সেদিনই জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সেশনজট
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলতি মাসে হওয়ার কথা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে সেশনজট আগে থেকেই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে সেশনজট রয়েছে এক বছরের। কলা ও মানবিকী অনুষদের বাংলা বিভাগ ছাড়া বাকি আটটি বিভাগে ছয় মাস থেকে এক বছরের সেশনজট রয়েছে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদে সরকার ও রাজনীতি বিভাগ ছাড়া বাকি পাঁচটি বিভাগেই ছয় মাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সেশনজট রয়েছে। গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগে এক বছর করে এবং পরিসংখ্যান বিভাগ ও গণিত বিভাগে ছয় মাস করে সেশনজট আছে। জীববিজ্ঞান অনুষদের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে।
ফার্মাসি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, এভাবে যদি অনির্দিষ্টকাল বন্ধ চলতে থাকে, তাহলে সেশনজটের অবস্থা আরও খারাপ হবে।
শিক্ষার্থীদের আয়ের উৎস বন্ধ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ পরিবারের অসচ্ছলতাসহ নানা কারণে টিউশনির মাধ্যমে তাঁদের দৈনন্দিন ও মাসিক খরচ বহন করেন। অনেকে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি এই টিউশনির মাধ্যমে পরিবারের খরচও বহন করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়, আবাসিক হল ও খাবারের দোকানগুলো অনির্দিষ্টকালের বন্ধের কারণে আবাসিক হলে থাকতে না পেরে চলে গেছেন নিজের বাড়িতে। ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় কোনো রকমে মাথা গুঁজে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন অনেকে। তবে বেশির ভাগেরই একদিকে যেমন নেই খাবারের সুব্যবস্থা, অন্যদিকে থাকার জায়গারও অভাব আছে। ফলে একরকম মানবেতর জীবন যাপন করছেন এসব শিক্ষার্থী।
চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ইফরান আজিজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কারণে বিপদে পড়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন ইসলামনগরে এক বড় ভাইয়ের বাসায় থেকে টিউশনি চালাচ্ছি। এভাবে চলতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।’
গত ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষা শুরুর দাবিতে উপাচার্য বরাবর আবেদন জানান ১৩ জন শিক্ষার্থী। একই দাবিতে ২৮ নভেম্বর আরও ৮ জন শিক্ষার্থী আবেদন জানান। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ হল খুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়। সংগঠনের সমন্বয়কারী অধ্যাপক এ এ মামুন স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবদুস সালাম মিঞাঁ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নুরুল আলম বলেন, সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা চালু ও হল খোলার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।