নামের শেষে নগর। কিন্তু নগরের কোলাহলময়তা সেখানে পৌঁছায় না। ইট-কাঠ-পাথরের রুক্ষতাও কখনো ছুঁতে পারেনি এই নগরকে। তাই বলে এটি একেবারে গ্রামও নয়। গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয় লাল ইটের দালান। ঋতুর পালাবদলে যখন শীত আসে এ নগরে, এ যেন মায়াবী অচিন সুন্দর কোনো রাজ্যের রূপ ধারণ করে। আর তার বড় একটি কারণ ‘অচিন’ দেশ থেকে আসা ‘অতিথি পাখি’ তথা পরিযায়ী পাখিরা।
বলা হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। রাজধানীর অদূরের এই ক্যাম্পাসে শীত যেন একটু আগেভাগেই জেঁকে বসেছে। তবে অন্যান্য বছরের মতো শীতের আগমনে এবার এখানে নেই উৎসবের আবহ। উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার পর অনির্দিষ্টকাল বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধ ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর একা একা হাঁটলে গা ছমছম করে। তবে পরিযায়ী পাখির আগমনে যেন নতুন করে প্রাণ পেতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
প্রতিবছরের অক্টোবরে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং, মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে খাবার ও উষ্ণতার খোঁজে এ দেশে আসে শীতের এই ‘অতিথিরা’। এগুলোকে মূলত পরিযায়ী পাখি বলা হয়। তবে অন্য দেশ থেকে আসে বলে ‘অতিথি পাখি’ নামটাও তাই বহুল প্রচলিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে ১৯৮৬ সাল থেকে পরিযায়ী পাখি আসছে।এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ২০৪ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে এই ক্যাম্পাসে। এগুলোর ১২৬টি দেশি ও ৭৮টি বিদেশি প্রজাতির। ক্যাম্পাসে এখন পর্যন্ত ১০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা গেছে। এরা মূলত দুই ধরনের। এক ধরনের পাখি ডাঙায় বা গাছের ডালে বসে বিশ্রাম নেয়, আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে এবং পানিতেই বিশ্রাম নেয়। এদের বেশির ভাগই হাঁসজাতীয় পাখি। মূলত এরাই দর্শনার্থীদের বেশি নজর কাড়ে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখিবিশেষজ্ঞকামরুল হাসান বলেন, এ বছর ছোট সরালি পাখির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া অল্পসংখ্যক বড় সরালি ও লেঞ্জাহাঁস প্রজাতির পাখি দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়েতিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাখির সংখ্যাও বাড়বে।