দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গৃহকর্মীসহ হাসপাতালে ‘রাজার হালেই’ আছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য এক ধরনের ‘থ্রেট’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আজ বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানাতে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় জামিন শুনানি পিছিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। এরপরই সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘অসমর্থিত সূত্রে গতকাল রাতেই আমরা জেনেছি, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে তার জামিনে বাধা দেওয়া হয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যেটা বলতে চাই, আপনারা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। যে বক্তব্যে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি এই বিচার চলাকালীন যে মামলা সেটাতে তিনি হস্তক্ষেপ করছেন এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে তিনি যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা সরাসরিভাবে বিচার বিভাগের ওপরে হস্তক্ষেপের শামিল এবং আদালত অবমাননার শামিল।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য তা থেকে প্রমাণ হয়ে যায় তিনি এবং তার সরকার চান না যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হন। যে মুক্তি কোনো করুণার ব্যাপার নয়। এটা তার আইনগত প্রাপ্ত যে সাত দিন, পাঁচ দিনের মধ্যে এই মামলার জামিন হয়ে যায়। এর কারণ হলো প্রতিহিংসা এবং সম্পূর্ণভাবে রাজনীতি থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি ও আদালত অবমাননার শামিল।’
‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন। তিনি আগে থেকেই হুইল চেয়ারে আছেন’-এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘(বিএনপি চেয়ারপারসন) এখনো হুইল চেয়ারেই থাকবেন! তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্যের অর্থ দাঁড়ায় এই। এসব কথা বলে তিনি একদিকে বিএসএমএমইউ’র কর্তৃপক্ষ তথা যারা রিপোর্ট দেবে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এটা ফ্যাসিবাদের অন্যতম একটি অস্ত্র।’
দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘গতকাল তার মামলার চার্জশিট হয়েছে। একইদিনে তার মামলার চার্জশিট, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি এই দুটোকেই যদি মেলাই তাহলে আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে পারি, ইট ইজ থ্রেট টু ইনডিপেনডেন্ট জুডিশিয়াল অ্যান্ড ইট ইজ থ্রেট ফর ডক্টরস, যারা স্বাধীনভাবে আদালতে রিপোর্ট দেবেন। এর চেয়ে অমানবিক আর কিছু হতে পারে না।’
বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি বিএনপি নেত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন- এটা বাদ দিয়ে তো তিনি একজন সাধারণ নাগরিক। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে যেটা তার প্রাপ্ত সেটা তিনি পাবেন না। আবার একজন বন্দী হিসেবে যেটা তার প্রাপ্ত সেটাও তিনি পাবেন না। এই বিষয়গুলো শুধু গোটা জাতিকে বিস্মিত নয়, অত্যন্ত ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশনেত্রী গুরুতর অসুস্থ। প্রতিদিন তিনি পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এখনই প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। এ সময় খালেদা জিয়া সাহায্য ছাড়া একেবারেই চলতে পারেন না, এমনকি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি অবশ্যই প্রয়োজন। তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করা হলে ভবিষ্যতে তার প্রাণহাণিও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মির্জা ফখরুল। এ সময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ইস্যুতে সব দায় সরকারকে বহন করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।