Monday , December 2 2024
You are here: Home / Uncategorized / প্রাথমিক থেকে দ্বাদশের শিক্ষাক্রম বদলে যাচ্ছে

প্রাথমিক থেকে দ্বাদশের শিক্ষাক্রম বদলে যাচ্ছে

দেশের প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি (উচ্চমাধ্যমিক) পর্যন্ত শিক্ষাক্রম বদলে যাচ্ছে। পরিমার্জিত এই শিক্ষাক্রম হবে যোগ্যতা ও দক্ষতাভিত্তিক। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সূক্ষ্ম চিন্তা, সৃজনশীল চিন্তাসহ ১০ ধরনের মূল দক্ষতা শেখানো হবে। এর সঙ্গে মিল রেখে ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জীবন-জীবিকাসহ ১০টি বিষয় শেখানোর মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে যোগ্য করে তোলা হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ইতিমধ্যে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরির কাজ গুছিয়ে এনেছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাকে দুই বছর মেয়াদি (বর্তমানে এক বছর) ধরে শিক্ষাক্রম তৈরি করা হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০২১ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেওয়া শুরু হবে।

এ ছাড়া মাধ্যমিক স্তর (দশম শ্রেণি) পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে একই ধরনের বিষয় পড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে এনসিটিবি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত হলে এখনকার মতো নবম শ্রেণি থেকে একজন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় শাখায় ভাগ করা হবে না। এই ভাগ হবে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে গিয়ে। তবে এটি হলেও ২০২৪ সাল থেকে চালু হতে পারে।

অবশ্য এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষাক্রম তৈরির সময় কর্মশালা থেকে এমন প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও উপস্থাপন করা হয়েছে। সবাই এ বিষয়ে ইতিবাচক। এখন এ নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। সর্বোপরি সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে।

বর্তমানে প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছিল। বিদ্যমান শিক্ষাক্রম মূলত উদ্দেশ্যভিত্তিক ও শিখন ফলভিত্তিক। শিক্ষার্থীদের কী পড়ানো হবে, কেন পড়ানো হবে, কে পড়বে, কারা পড়াবেন ও কীভাবে পড়াবেন এবং পড়ার ফলে কী হবে—সেসবের বিস্তারিত দিকনির্দেশনা থাকে শিক্ষাক্রমে।

প্রাক্-প্রাথমিক হচ্ছে দুই বছর মেয়াদি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে একই বিষয় পড়ানোর চিন্তা। নতুন শিক্ষাক্রমের বই ২০২১ সাল থেকে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, কী কী বিষয় শিখিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে যোগ্য করে তোলা হবে, তা মোটামুটি ঠিক হয়েছে। তার আলোকে এখন কোন শ্রেণিতে কী কী ও কয়টি বই হবে, তা ঠিক করা হবে।

শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখা অনুযায়ী প্রাক্-প্রাথমিক থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি মূল দক্ষতা এবং ১০টি বিষয় শেখানো হবে শিক্ষার্থীদের। মূল দক্ষতাগুলো হলো সূক্ষ্ম চিন্তা, সৃজনশীল চিন্তা, সমস্যার সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সহযোগিতা, যোগাযোগ, বিশ্ব নাগরিকত্ব, জীবিকায়ন, স্ব-ব্যবস্থাপনা এবং মৌলিক দক্ষতা।

আর যে ১০টি বিষয় শেখানো হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, জীবন ও জীবিকা, পরিবেশ ও জলবায়ু, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা, শারীরিক-মানবিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। শ্রেণি অনুযায়ী এসব বিষয় শেখানো হবে।

শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, যা-ই করা হোক না কেন, শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আর দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে একই বিষয় পড়ানো বা একমুখী শিক্ষা চালুর পরিকল্পনাটি ভালো। কিন্তু এ জন্য অত্যন্ত সতর্কভাবে বিষয় ঠিক করতে হবে, অর্থাৎ এই স্তর পর্যন্ত বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে কতটুকু পড়ানো হবে, তা সুচিন্তিতভাবে নির্ধারিত না হলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

এনসিটিবি জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০২১ সাল থেকে প্রাথমিক স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির বই দেওয়া শুরু হবে। এরপর ২০২২ সালে প্রাথমিকের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সপ্তম, নবম ও একাদশ শ্রেণির বই দেওয়া হবে। ২০২৩ সালে পঞ্চম, অষ্টম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বই দেওয়া হবে। আগামী বছর পর্যন্ত বিদ্যমান শিক্ষাক্রমের আলোকেই বই পড়বে শিক্ষার্থীরা।

বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচ বছর থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম তৈরি করা হচ্ছে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা ধরে; যা শুরু হবে শিশুর চার বছর বয়স থেকে। এর মধ্যে চার বছর থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাক্-প্রাথমিকের একটি স্তর (নাম কেজি-১ হতে পারে) এবং পাঁচ বছর থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত আরেকটি স্তর (কেজি-২ হতে পারে) হবে।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাকে দুই বছর করার বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত। তবে কোন সাল থেকে তা চালু হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!