Monday , December 2 2024
You are here: Home / অন্যান্য / চমকের অপেক্ষায় সবাই: বিতর্কিতরা উৎকণ্ঠায়, আশায় বুক বেঁধেছেন পরিচ্ছন্ন নেতারা

চমকের অপেক্ষায় সবাই: বিতর্কিতরা উৎকণ্ঠায়, আশায় বুক বেঁধেছেন পরিচ্ছন্ন নেতারা

আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই নতুন চমক। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মানেই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। নির্বাচনে তিনি চমক দেখিয়েছেন। নবম-দশম- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ‘মন্ত্রিসভা’ গঠনে চমক দেখিয়েছেন। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদককে সরিয়ে দেয়া, শুদ্ধি অভিযানে রাঘব-বোয়ালদের গ্রেফতার এবং বিতর্কিত সিনিয়র নেতাকে বাদ দিয়েই অঙ্গ সংগঠনের সম্মেলনে তিনি কঠোরতার মাধ্য দিয়ে ‘চমক’ দেখিয়েছেন। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের জন্য অপেক্ষা করছে নতুন চমক। কি সেই চমক? সভাপতি পদে শেখ হাসিনা থাকছেন। অন্যান্য পদে পরিবর্তন আসছে এমন ইংগিত দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু কারা নেতৃত্বে আসছেন? কারা ছিটকে পড়ছেন? এ নিয়ে দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃর্ণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে আলোচনা। কয়েক বছরে নানা কারণে বিতর্কিত নেতারা সম্মেলনকে ঘিরে ‘ভীতি ও আতঙ্কে’ থাকলেও পরিচ্ছন্ন নেতারা আশায় বুক বেধেছেন। তাদের প্রত্যাশা অঙ্গ সংগঠনগুলোর মতোই তাদের মূল্যায়ন হবে। তবে কারা সামনের সারিতে আসছেন তা আন্দাজ করা কঠিন।

জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, দলে প্রবীনদের স্থলে নবীনরা আসবে এটাই স্বাভাবিক। আগামী দিনে দলে সুন্দর, পরিশ্রমি ও দক্ষ নেতৃত্ব আসবে। সভাপতি মন্ডলীর আরেক সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগের বিগত কমিটিগুলোর তাকালেই বোঝা যায়, দলে নতুন মুখ কিভাবে এসেছে। এবারও নবীন-প্রবীনের সমন্বয়ে কমিটি হবে। দলের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত রয়েছে, তাদেরকেই কমিটিতে স্থান দেয়া হবে।

জাতীয় সম্মেলন ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে মহাসমারোহে চলছে সাংগঠনিক তৎপরতা। তৃর্ণমূল কমিটিগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হচ্ছে। জেলা কমিটি থেকে মহানগর কমিটি সর্বত্রই দেখা গেছে পরিবর্তন, এসেছে নতুন নেতৃত্ব। ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতৃত্বে এসেছে নতুন মুখ। তাইতো আওয়ামী লীগের আগামী ২১তম জাতীয় সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। ক্যাসিনো, দুর্নীতি বিরোধী অভিযান, দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার শাস্তি এবং নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলনে সংগঠনের শীর্ষ দুই পদে পরিবর্তন আসায় জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কী পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে সে আলোচনা এখন সর্বত্র। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে চলছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। আবার অনেকের মধ্যে পদ হারানোর ভযও কাজ করছে। সম্মেলন একদিকে যেমন অনেক নেতা কেন্দ্রীয় পদ পাবায় আশায় উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করছেন। ঠিক অপর দিকে অনেক নেতাই দুশ্চিন্তায় পদ হারানোর দুশ্চিন্তায়। নবীনের আগমন আর প্রবীণের বিদায় এসব মিলিয়ে চমক অপেক্ষা করছে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে।

এ বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট করে বলেছেন, আগামীতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে একটি পদে কোনো পরিবর্তন হবে না। আর সে পদটি হলো সভাপতির পদ। এ পদে শেখ হাসিনাই থাকবেন। অন্য যেকোনো পদে পরিবর্তন হতে পারে। সেটা নির্ভর করবে দলীয় সভাপতির ওপর।
এদিকে এবারের সম্মেলনে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের আগমনের সম্ভবনা। গতবারের সম্মেলনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাবার বিষয়ে আলোচনা থাকলেও সর্বশেষ আর তা হয়নি। এবার তারা উভয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা।

এছাড়া প্রতিবার সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তা নিয়ে থাকে সকলের আকর্ষণ। দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আবারও সাধারণ সম্পাদক থাকতে পারেন। ওবায়দুল কাদের দলের জন্য ব্যাপক পরিশ্রম করেন বলে সর্বজন বিধিত। এরপরও এ পদে যদি পরিবর্তন আসে তাহলে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ কয়জনের মধ্য থেকে একজন দলের সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন।

দলের একাধিক সূত্রমতে, এবার চ্যালেঞ্জিং নেতৃত্ব খুজছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাদের স্থান দেবেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যারা রাজনীতি করেছেন এমন পরিবার থেকে নেতৃত্ব আসবে দলে। আবার সমাজের আলোকিত মুখও দেখা যাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে। সাবেক ছাত্রনেতা, জেলা ও মহানগর পর্যায় থেকেও অনেককে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেয়া হবে। নারী নেতৃত্বের সংখ্যায় এবার বাড়বে দ্বিগুন।

তথ্যমতে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০-এর খ-এর খ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আগামী ২০২০ সালের মধ্যে যেকোনো রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে দেশের সব দলের প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাধ্যবাধকতা আছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমান কমিটির অর্ধেকের বেশি নেতার পদ-পদবিতে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। অর্ধেকের মতো নেতা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। বিশেষ করে নিষ্ক্রিয়, বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতারা স্থান পাবেন নতুন কমিটিতে।
এবার সভাপতিমন্ডলীতে বেশ বড় পরিবর্তন আসবে। অনেকেরই স্থান হবে উপদেষ্টা পরিষদে। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমুকে সভাপতিমন্ডলীতে দেখা যেতে পারে। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মণি, আব্দুর রহমান চারজনের দুইজন সভাপতিমন্ডলীতে জায়গা হতে পারে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পদোন্নতি পেতে পারেন।

সম্পাদকমন্ডলী থেকে পদোন্নতি পেরে পারেন, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জি. আবদুস সবুর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, রিয়াজুল কাবির কাউসার, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পরি।
এবার যেসব নতুন আসতে পারে তাদের মধ্যে জোর আলোচনায় আছেন, বাগেরহাট-২ আসনের এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময়, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মর্তুজা, সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর-৩ আসনের এমপি ইকবালুর রহিম; ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মনোনয়ন বঞ্চিত ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আ খ ম জাহাঙ্গীর, নব্বয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা, বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য শফী আহমেদ।

গত সম্মেলনে সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছিলেন। এবারও সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আলম পাঠান মিলন। নারী নেত্রীদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি রুবিনা আক্তার মিরা, সাবেক সাংসদ ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সাংসদ সানজিদা খানমকে কেন্দ্রে দেখা যেতে পারে। পেশাজীবিদের মধ্যে শিক্ষাবিদ ড. সেলিম মাহমুদ, ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা আলোচনায় আছেন।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম আগামী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান, রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!