ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চারজনকে গত বৃহস্পতিবার সাতদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছিল ভারতের একটি আদালত। তারপর প্রথম রাতেই পশু চিকিৎসক তরুণীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলা গুটিয়ে দেয় হায়দরাবাদ পুলিশ। শাদনগরে ধর্ষণের জায়গায় শুক্রবার ভোরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় অভিযুক্ত চারজন।
সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভিসি সজ্জনারের দাবি, ঘটনার পুনর্র্নিমাণ করতে রাত সাড?ে ৩টার সময় মুহাম্মদ আরিফ (২৬), জল্লু শিবা (২০), জল্লু নবীন (২০) এবং চেন্নাকেশবুলু (২০) নামে অভিযুক্ত চারজনকে শাদনগরের ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় ১০ জন পুলিশের একটি দল।
ওই সময় অভিযুক্তদের হাতকড?া খোলা ছিল। ভোরে পৌনে ৬টা নাগাদ আরিফ ও চেন্নাকেশবুলু আচমকা তদন্তকারী কর্মকর্তার রিভলভার ছিনিয়ে নিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। বাকিরাও পাথর ও লাঠি নিয়ে পুলিশের ওপর চড?াও হয়।
সজ্জনার আরো দাবি করেন, ওই পরিস্থিতিতে তাদের সতর্ক করে কাজ হয়নি। তখন পুলিশ ‘গুলি চালাতে বাধ্য হয়’ এবং অভিযুক্তদের মৃত্যু হয়। দুই কনস্টেবলও মাথায় আঘাত পান। তবে কারও দেহে গুলি লাগেনি। আইন তার কর্তব্য পালন করেছে।
‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ সজ্জনারের এই দাবিকে পুলিশের ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে মনে করছেন অনেকে। ফলে কিছু মানুষ যেমন ‘ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত’ করার জন্য পুলিশের জয়ধ্বনি দিচ্ছেন, পাশাপাশি আইন হাতে তুলে নেওয়ার কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অনেকেই।
জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা বলেন, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হওয়া উচিত। হায়দরাবাদে দল পাঠাচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। প্রশ্ন উঠেছে, এই চার জন কি সত্যিই দোষী, না তাদের মেরে কাউকে আড?াল করল পুলিশ? তদন্তের জন্য অভিযুক্তদের মরদেহ সোমবার পর্যন্ত সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে তেলাঙ্গানা হাইকোর্ট।
ভোরে এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ প্রায় ছয় ঘণ্টা দেহ ঘটনাস্থলে ফেলে রাখে। এক দিকে, ধান ও টোমেটোর জমি। অন্যদিকে, মহাসড়ক। তার মধ্যে ফাঁকা জমিতে পড?ে থাকা অভিযুক্তদের দেহ ঘিরে বহু লোক নাচানাচি করে, কমিশনার সজ্জনারের নামে জয?ধ্বনি দেয়।
পাশের সেতু থেকে পুষ্পবৃষ্টি ছড়ায় জনতা। অভিযুক্তদের ‘শাস্তি দেওয়ার জন্য’ পুলিশকে সাধুবাদ দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা ও বোন। কিছু দিন আগে অবশ্য এই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তারা। কারণ, পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি। তবে তামিলের একটি সংবাদপত্রকে পুলিশের এক কর্মকর্তা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভাবমূর্তি উদ্ধার এবং বিক্ষোভ প্রশমনে ‘অন্য ধরনের’ কিছু করার পরিকল্পনা করছেন তারা। তার পর এ ঘটনা ঘটল।
পুলিশ কমিশনার জানান, তরুণীর স্কুটি খারাপ হয়ে যাওয়ার পরে আরিফই বাকিদের ডেকে জমায়েত করে। তরুণীকে হত্যার পর সে-ই প্রথমে আগুন দেয় তার শরীরে। রাতে পুলিশ দাবি করে, পেশায় লরির খালাসি এই চার অভিযুক্ত কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলাঙ্গানায় কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তাদের ধারণা।
এদিকে ভেঙে পড়েছেন অভিযুক্তদের স্বজনেরা। চেন্নাকেশবুলুর স্ত্রী অভিযোগ করেছেন— পুলিশ ফাঁসিয়েছে তার স্বামীকে। আর ছেলের মৃত্যুসংবাদে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আরিফের বাবা কেবল হেসেই চলেছেন। মাথা নেড?ে বলছেন, দোষীদের শাস্তি হোক, শাস্তি হোক!