মাটিমিশ্রিত পাথর আর নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়েই চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার একটি সড়কের সংস্কারকাজ। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দিলেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ওই সড়ক এলাকার তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন, তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু সামা ও আড়াইসিধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিমের লিখিত অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সড়কের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্নের দাবি জানানো হয়।
অভিযোগের অনুলিপি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও এলজিইডির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীকেও দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলার আশুগঞ্জ-তালশহর সড়ক দিয়ে কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াত করে। দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সংস্কারকাজের জন্য গত বছরের ১৬ জুন দরপত্রসহ সব আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষ।
মেসার্স লোকমান হোসেন অ্যান্ড মোস্তফা কামাল জয়েন্ট ভেঞ্চার কাজটি পায়। তাদের সঙ্গে ৮ কিলোমিটার ওই সড়কের সংস্কারকাজের জন্য ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। চুক্তি মতে, চলতি বছরের জুন মাসে সংস্কারকাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু হয়। তবে কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। শিডিউলে যে মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার কথা ছিল ঠিকাদারি দুই প্রতিষ্ঠান তারচেয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এসব বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিন ওই সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, নিম্নমানের ইটের খোয়া, বিটুমিন এবং মাটি মিশ্রিত পাথরসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে চলছে সংস্কারকাজ। ফলে হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের কার্পেটিং। নিম্নমানের এ কাজ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিনসহ স্থানীয়রা।
স্থানীয় তল্লা গ্রামের বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, এ সড়কটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন পর সড়কটি সংস্কার হওয়ার খবরে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু সড়কটি সংস্কারে যে মানের সামগ্রী ব্যবহারের কথা ছিল সেটি হচ্ছে না। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চলছে। আমরা বাধা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেটি মানছে না।
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মো. দুলাল মিয়া জানান, সড়কটির কাজ শিডিউল মতো হচ্ছে না। উপরে কিছু পাথর দিয়ে নিচে সব মাটি দিয়ে রাস্তার কাজ করছে। আমরা চাই ভালো সামগ্রী দিয়ে রাস্তাটি যেন মজবুত করে সংস্কার করা হয়।
আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, এই রাস্তাটি দিয়ে তিন ইউনিয়নের মানুষ চলাফেরা করে। অনেক দিন ধরে রাস্তাটি বেহাল ছিল। অনেক কষ্টের পর রাস্তাটির দরপত্র হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন কাজ দেখে মনে হচ্ছে এর চেয়ে নিম্নমানের কাজ আর হতে পারে না। ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার বাজেট হলেও যে কাজ হচ্ছে তাতে দুই কোটি টাকাও লাগবে না।
আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, কয়েক দফায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করার পরও তারা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দিয়েছি। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা বন্ধ না হলে আমরা আন্দোলন করব।
সংস্কারকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার লোকমান হোসেন বলেন, যেটা মাটি বলছে- সেটা পাথরের ডাস্ট। ৩০ শতাংশ পাথরের সঙ্গে ডাস্ট ধরা থাকে। ডাস্ট দিলে তো বিটুমিন বেশি লাগে। এটা শিডিউলে ধরাই আছে এভাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডির আশুগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মরিয়ম আখতার বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগটি আমরা খতিয়ে দেখছি। কিছু সামগ্রীতে সমস্যা থাকার কারণে আমরা ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি।