Monday , December 2 2024
You are here: Home / অন্যান্য / বাংলাদেশিরা অপুষ্টিতে ভুগছে কেন?

বাংলাদেশিরা অপুষ্টিতে ভুগছে কেন?

বাংলাদেশে এখনও দুই কোটি ১০ লাখ মানুষের অর্থাৎ প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের পুষ্টিকর খাবার জোগাড়ের ক্ষমতা নেই। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং অসচেতনতার কারণে অসংখ্য মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখনও ৩১ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে না।

খাদ্যের সহজলভ্যতা ও ক্রয়ক্ষমতার বিষয়ে এক যৌথ সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। যৌথভাবে সমীক্ষাটি চালিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং বাংলাদেশ সরকার।

এতে বলা হচ্ছে, পুষ্টিকর খাবার বলতে বোঝায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেন ছয় ধরনের খাবার থাকে অর্থাৎ শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ, পানি ও চর্বি থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় মানুষ এখনও অতিরিক্ত পরিমাণে ভাত ও অপর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সম্বলিত খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। ফলে অন্য যেসব পুষ্টিকর খাবার আছে যেমন, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল এগুলো খাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা জোর দেন না।

দারিদ্র্যতার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে মানুষের সচেতনতার অভাব এবং নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্যতার অভাব এই পুষ্টিহীনতার প্রধান কারণ বলছে গবেষণা। কারণ, অনেকে মাছ, মাংস, শাকসবজি, ফলমূলের মতো পুষ্টিকর খাবার টাকার অভাবে কিনতে পারছেন না। আবার অনেকের এসব খাবার কেনার ক্ষমতা আছে ঠিকই, কিন্তু তারা জানেন না কোন খাবারগুলো কী পরিমাণে খেতে হবে।

গড়ে একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দিনে ২১০০ কিলোক্যালোরি প্রয়োজন। তবে, দেখা যাচ্ছে, মানুষ তিন-চার বেলা পেট ভরে খাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু শরীর প্রয়োজনীয় ক্যালরি পাচ্ছে না। ফলে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে মানুষ।

ডব্লিউএফপির তনিমা শারমিনের মতে, পেট পুরে শর্করা খেলেও সেখানে যদি অন্যান্য পুষ্টি উপাদান না থাকে তাহলে সেটাও পুষ্টিহীনতা। খাদ্যে ভেজালের আতঙ্কে অনেকে জেনে বুঝেও পুষ্টিকর খাবার এড়িয়ে চলেন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে উপায়ে রান্না করা হয়, সে কারণেও খাবারের পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে যে ১১.৯০% জনগোষ্ঠী রয়েছে তারাই মূলত পুষ্টিহীনতায় ভোগেন বেশি। তবে ক্রয়ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সচেতনতার অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন একটি বড় জনগোষ্ঠী। পুষ্টিবিদদের মতে, একেক বয়সে পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা একেক রকম থাকে। এর মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালে এবং গর্ভধারণের সময় নারীদের পুষ্টির চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। তবে বাংলাদেশে মা ও শিশুর পুষ্টির দিকটি যেভাবে নজরে রাখা হয়, বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়ের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব পায় না। এছাড়া প্রবীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টির দিকটিও অবহেলিত বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনও দু কোটি ১০ লাখ মানুষের পুষ্টিকর খাবার জোগাড়ের ক্ষমতা নেই। শতাংশের হিসাবে এটি বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৩%।

তবে এই হারকে খুব একটা উদ্বেগজনক ভাবছেন না পুষ্টিবিদ তনিমা শারমিন। উদ্বেগের বিষয় হলো যে ৮৭% মানুষের ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে, তাদেরও একটি বড় অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। সেটা শুধুমাত্র সচেতনতা ও নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্যতার অভাবে।

এই গবেষণা বাংলাদেশের খাদ্যরীতি, খাদ্যের পরিবেশ এবং পুষ্টিকর খাদ্য কিনতে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বিষয়ে নতুন কিছু দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করা হয়।

পুষ্টিহীনতা দূর করতে গবেষণায় তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রথমত, নানাবিধ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পাওয়ার সুযোগ বাড়ানো। আমিষের ঘাটতি পূরণে বড় মাছের উৎপাদন বাড়ানো হলেও এর চেয়ে বেশি পুষ্টিকর ছোট মাছের উৎপাদন বাড়ানো হয়নি। এই ধরনের সহজলভ্য পুষ্টিকর খাবার সব শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন শারমিন।

তিনি বলেন, সমাজের সকল স্তরে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠনের জন্য এমনভাবে প্রচারণা চালানো দরকার যেন বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। এজন্য ব্যক্তি পর্যায়ে অভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি সামাজিক পরিবর্তনের দরকার আছে এবং এর পেছনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।

পুষ্টিহীনতা দূর করতে এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে সমন্বিত হয়ে কাজ করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের খাদ্যনীতি, কৃষিনীতিতে খাদ্য উৎপাদনে যত জোর দেয়া হয়েছে, সে তুলনায় খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে গেছে। তাই সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যক্তিপর্যায়ে অভ্যাস পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক পরিবর্তনও দরকার আছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!