Thursday , February 6 2025
You are here: Home / অন্যান্য / পত্রিকা বেচে পেট চলে না তাই বারোয়ারি পণ্য বেচি

পত্রিকা বেচে পেট চলে না তাই বারোয়ারি পণ্য বেচি

রাজধানীর মিরপুর রোডে চাঁদনীচক মার্কেটের বিপরীত দিকে গভ. নিউমার্কেট প্রবেশ পথের অদূরে একটি দোকানে কাঠের একটি টুলে বসে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছেন এক যুবক। রাত তখন আনুমানিক ৮টা। দোকানের একপাশে থরে থরে সাজানো রঙ-বেরঙের বাহারি জুতা।

দোকানের সামনের দিকে নারীদের হিজাব, প্লাজু, শীতের চাদর, সোয়েটার, কার্ডিগান ও সালোয়ার-কামিজের স্তূপ। ভেতরে চোখ পড়তেই দেখা গেল কাঠের তিনটি তাকে বেশকিছু গল্পের বই, ম্যাগাজিন ও কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের পোটলা। যুবকটি যেখানে বসে আছেন সেখানে তার মাথার ওপর দুটি জাতীয় দৈনিক ঝুলছে। হঠাৎ করে দেখলে বারোয়ারি পণ্য দিয়ে সাজানো এ দোকানটি দেখে বিন্দুমাত্র বোঝার উপায় নেই এটি প্রকৃতপক্ষে কিসের দোকান?

দোকানের ওপর আবছা আলোয় লেখা সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্র। সৌজন্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। সংবাদপত্র বিক্রয়ের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে এ দোকানটি বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে দোকানটি এখন আর সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্র নেই, বারোয়ারি পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে!

এক দশক আগেও সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্রের এ দোকানগুলোতে মানুষ লাইন ধরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, দেশি-বিদেশি সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন কিনতেন। প্রয়োজনীয় পুরোনো পত্রিকার সন্ধানে হকারদের পিছু পিছু ধরনা দিতেন। সকালবেলা বাসা-বাড়িতে বণ্টনের জন্য ছোট-বড় পত্রিকা সাজিয়ে বসতো। পাড়ামহল্লার হকাররা কাকডাকা ভোরে এসে পত্রিকা কিনে নিয়ে যেতেন। মানুষের হইচই আর ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো।

কিন্তু বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ইলেকট্রনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের দাপটে পত্রিকার হকারদেরর সেই সুদিন এখন আর নেই। নিউমার্কেটে যে যুবকটি বসে জাতীয় দৈনিক পড়ছিলেন সে যুবকের নাম আফজাল। পৈতৃক সূত্রে (বাবা একসময় পত্রিকার হকার ছিলেন বর্তমান বয়সের কারণে বাসায় থাকেন) তিনি সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্রটি চালাচ্ছেন।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আফজাল জানান, পত্রিকা বেচে এখন আর পেট চলে না। আগে যেখানে দৈনিক ৩০০ পত্রিকা চলত এখন ৫-১০টাও চলে না। পেটের তাগিদে তারা এখন পত্রিকার পাশাপাশি বারোয়ারি পণ্য বিক্রি করছেন। হকার্স সমবায় সমিতির অনুমতি সাপেক্ষেই তারা এসব পণ্য বিক্রি করছেন।

আফজাল বলেন, শুধু পত্রিকা বিক্রি করলে সমিতির মাসিক চাঁদা ও সিটি কর্পোরেশনের ভাড়ার টাকাও উঠবে না।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে তথ্য এখন হাতের মুঠোয়। পরদিন পত্রিকা পড়ে সংবাদ জানার প্রয়োজন হয় না। টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সার্চ দিলে সব খবর পাওয়া যায়। এ কারণে এখন অল্পসংখ্যক মানুষ পত্রিকা পড়েন।

আফজাল জানান, শুধু তিনি নন, নিউমার্কেটের ১ ও ২ নম্বর গেটের পাশের সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্রগুলোর একই অবস্থা। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্রের দোকানে বারোয়ারি পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। সবার এক কথা, পত্রিকা বেচে পেট চলে না।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!