মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে এ দেশের রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরাও নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যোগ দিয়েছিল। সেই বিশ্বাসঘাতকদের জন্য যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে কত মুক্তিসেনা প্রাণ হারিয়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানা নেই। কত মায়ের সন্তানকে ধরে নিয়ে চোখের সামনে জীবন্ত কবর, জবাই, মাটিতে
অর্ধেক পুঁতে পাথর ছুড়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। সেদিনের কথা মনে করে কত মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী এখনো চোখের জলে বুক ভাসান। কুষ্টিয়ার ইবি থানার বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি এমনই এক স্থান। কুষ্টিয়া শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে, ঝিনাইদহ যেতে মহাসড়কের পাশেই যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের দোসরদের সহযোগিতায় কুষ্টিয়ার ইবি থানার বিত্তিপাড়া বাজারে তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদে ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিদিন কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকার মুক্তিসেনা ও
সাধারণ মানুষদের ধরে নিয়ে আসত এখানে। তাঁদের হত্যা করে ক্যাম্পের চারপাশে মাটির নিচে কাউকে অর্ধেক, কাউকে পুরো মাটিচাপা দিয়ে রাখত। কারও পা, কারও হাত বেরিয়ে থাকত। এর আশপাশের মানুষ রাতের বেলা চিৎকার শুনতে পেত। কথিত আছে, এখানে হাজারের অধিক মানুষকে পাকিস্তানি বাহিনী মেরে পুঁতে রেখেছিল। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী তার পড় পিছু হটতে থাকে তারা। শক্রু মুক্ত করা হয় এই স্থানটিকে। সোমবার সকালে ৯ ডিসেম্বর উপলক্ষে বধ্যভ’মি চত্তে¡রে নিহতদের আতœার মাগফেরাত দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, ¯’ানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা আ: লথিব বিশ্বাস, আকমল হোসেন, ওমর আলী, আ: রাজ্জাক মেম্বার, ছলেমান মন্ডলসহ আরো অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দোয়া অনুষ্ঠান
পরিচালনা করেন মাওলানা আমির হোসেন। স্বাধীনতার পর এ জায়গাটি সংরক্ষণ করা হয়নি। ২০০৩ সালে বধ্যভূমি হিসেবে
শনাক্ত করতে সেখানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।