মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে র্যালি করতে না দেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, এই মুহূর্তে বিএনপি কোনো সংঘাতে যেতে চায় না। এ কারণে ঢাকায় পূর্বনির্ধারিত র্যালি করেনি দলটি। তাঁর দাবি, বিএনপির আমলে সংখ্যালঘুদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে পূর্বঘোষিত বিএনপির র্যালি পুলিশ করতে না দেওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেন মির্জা ফখরুল। সকাল থেকে বিএনপি কার্যালয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সড়কে নেমে র্যালি করতে নিষেধ করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আমরা একটি র্যালি করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমাদের বলা হয়েছে নিচে নামলেই ব্যবস্থা নেবে। আমরা এই মুহূর্তে কোনো সংঘাতে জড়াতে চাই না। তাই র্যালি করিনি। আমরা আমাদের অধিকারের কথাগুলো বলার চেষ্টা করছি। জনসভা করতে গেলে অনুমতি নিতে হয়। সভা করতে দেওয়া হয় না। এমনকি সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলোও করতে দেওয়া হয় না। ’
অবশ্য গত ২৪ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন, এখন থেকে সমাবেশ করার জন্য তাঁরা আর অনুমতি নেবেন না। এর দুদিন পর ২৬ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের নেতৃত্বে খালেদার মুক্তির দাবিতে হাইকোর্টের সামনে অঘোষিত বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। সেদিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বেশ কিছু গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
বিএনপির আমলে সংখ্যালঘুদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারতে নাগরিকত্ব আইন পাসের সময় বলা হয়েছে, বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে এবং অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তিনি এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিএনপির আমলে সংখ্যালঘুর স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগের আমলে যতটা হয়েছে, তা আর কখনো হয়নি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রতিমুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে বলেন, গত ১০ বছরে দেড় হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির হিসাবে তা ২ হাজারের বেশি। এক লাখের ওপর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মামলা দেওয়া হয়েছে। এখন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে যে ব্যক্তি ভিন্ন মত পোষণ করেন, তাঁকে হয় গ্রেপ্তার করা হয়, না হয় গুম করা হয়। অনেক নেতা, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক গুম হয়েছেন। তিনি দাবি করে বলেন, পাকিস্তান আমলের চেয়েও গত ১০ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। জাতিসংঘ থেকে বারবার বাংলাদেশকে ডাকা হয়েছে। চার বছর আগে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ যে অঙ্গীকার করেছিল, তার একটিও রক্ষা করেনি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রক্রিয়া গ্রহণ করছে উল্লেখ মির্জা ফখরুল বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিক, বিদেশে নারী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়েও অন্য দেশ সোচ্চার হলেও বাংলাদেশ সরকার কোনো ভূমিকা নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান প্রমুখ।