রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সহ নৃশংস অপরাধের বিচারে আর কিছুক্ষণের মধ্যে হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। এ আদালতে তিনি তার দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করছেন। এ জন্য সারা বিশ্ব থেকে তার দিকে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সহ চালানো অপরাধ প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিতে অং সান সুচির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাতজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। তারা হলেন- ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইরানের শিরিন এবাদি, ২০১১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লাইবেরিয়ার লিমাহ গোউই, ২০১১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইয়েমেনের তাওয়াক্কাল কারমান, ১৯৭৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নেদারল্যান্ডের মেইরিড মাগুয়েরে, ১৯৯২ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গুয়েতেমালার রিগোবার্তা মেনচু তুম, ১৯৯৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জোডি উইলিয়ামস এবং ২০১৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় কৈলাশ সত্যার্থী। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি।
এই সাত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এক বিবৃতিতে বলেছেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচির প্রতি আমাদের আহ্বান রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যা সহ সব অপরাধ প্রকাশ্যে স্বীকার করুন। যে অপরাধ ঘটানো হয়েছে তার জন্য সেনা কমান্ডার সহ অং সান সুচিকে অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তারা আরো বলেছেন, শান্তির পক্ষের মানুষ হিসেবে আমরা রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে পর্যায়ক্রমিক বৈষম্য চালানো হয় তা নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি সুচির প্রতি।
একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অধিকার, ভূমির মালিকানার অধিকার, মুক্তভাবে চলাচলের অধিকার ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। রোহিঙ্গাদের প্রতি সুচির ব্যক্তিগত ও নৈতিক দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে তার নজরদারির অধীনে গণহত্যার বিষয়টি স্বীকার করতে এবং এর নিন্দা জানাতে অনুরোধ করছি।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের চৌকিতে হামলা চালায় উগ্রপন্থি আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা। এতে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এর পরই সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা। গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা সহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা সেখানে ঘটায়নি তারা। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো অগ্নিকুণ্ডে রূপ নেয়। সন্তান, স্বামীর সামনে ধর্ষণ করা হয় নারীদের। এমন ভয়াবহতায় জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসে কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু সেনাবাহিনীর নৃশংসতার অভিযোগ যেমন সেনাবাহিনী প্রত্যাখ্যান করেছে, তেমনি যাকে মানবতার প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো সেই অং সান সুচি পর্যন্ত এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। ফলে তার এমন অবস্থানের কারণে ওই সাত নোবেলজয়ী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে হেগের আদালতে করা মামলার প্রশংসা করি আমরা। একই সঙ্গে ওইসব অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচারের জন্য অগ্রসর হওয়ার জন্য তাদের প্রশংসা করি। উল্লেখ্য, ৫৭ জাতির সংগঠন ওআইসি’র পক্ষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। এর কয়েকদিন পরেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ঘোষণা করে যে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করবে তারা। ওদিকে বিবৃতি দেয়া সাত নোবেল বিজয়ীর মধ্যে তিনজন ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। এ সময় শতাধিক রোহিঙ্গা নারীর নির্যাতনের কাহিনী তারা শুনে গেছেন।