কুষ্টিয়ায় জন্মদিনের পার্টিতে এনার্জি ড্রিংকের সঙ্গে হোমিও এ্যকোনাইড ন্যাপ মেডিসিন মিশিয়ে পান করে ৩ বন্ধুর মৃত্যুর ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আজ বাদ জুম্মা কুষ্টিয়া পৌর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে ৩ বন্ধুর জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। আজ ১৩/১২/১৯ ইং তারিখে মৃত ফাহিমের পিতা সাগর হোসেন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২০। মামলার আসামীরা হলেন, রাফি হোমিও হলের মালিক ডাঃ রফিকুল ইসলাম, কর্মচারী জুনায়েদ ও লোকমান। তারা সবাই মডেল থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি শেষ করে অসুস্থ্য হয়ে ৬ বন্ধু কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি বন্ধু। অপর তিন বন্ধু আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান। এদিকে এ্যকোনাইড ন্যাপ মাত্রাতিরিক্ত বিক্রয়ের অপরাধে রাফি হোমিও ফার্মেসী সিলগালা করেছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের এন.এস. রোড সংলগ্ন পাবলিক মাঠ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন শহরের আমলাপাড়া এলাকার মফিজুল ইসলামের ছেলে জিহাদুর রহমান সাজিদ (২০), থানাপাড়া এলাকার সাগরের ছেলে ফাহিম হোসেন (২১) ও আরমানের ছেলে পাভেল ইসলাম (২৩)। তারা তিনজনই বন্ধু। গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও তিন বন্ধু। তারা হলেন শহরের থানাপাড়া এলাকার শরিফ এর ছেলে সুরুজ (২০), রাজুর ছেলে শান্তি (২২) ও আড়–য়াপাড়া এলাকার শরিফুলের ছেলে আতিকুল ইসলাম সজীব (২৩)। সুরুজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয?েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
মৃত জিহাদুর রহমান সাজিদ বিকেএসপির বাস্কেট বল খেলোয়াড়।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্ধু ফাহিমের জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফাহিযসহ সাজিদ, পাভেল , সুরুজ, শান্তি ও আতিকুল শহরের পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে মিলিত হয়। এ সময় স্পিড এনার্জি ড্রিংকের সঙ্গে অ্যালকোহল মিশিয়ে পান করে ছয় বন্ধু। কিছুক্ষণ পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। পরে তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজিদ, ফাহিম ও পাভেলের মৃত্যু হয়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) চিকিৎসক তাপস কুমার সরকার বলেন, বিকেলে ছয় বন্ধু একে একে হাসপাতালে এসে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানায় ডিম খাওয়ার পর থেকে তাদের মাথা ঘুরছে, শরীরের ভেতর অস্থির লাগছে। ব্যাপারটি সন্দেহজনক মনে হলে তাদের জিজ্ঞাসা করলে স্পিড এনার্জি ড্রিংকের সঙ্গে অ্যালকোহল মিশিয়ে পান করার কথা স্বীকার করে ছয় বন্ধু।
পরে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়। সুরুজ নামে একজনকে গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মৃত সাজিদের মামা পিয়াস বলেন, গত মাসে ভাগনে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিল। বিকেএসপির বাস্কেট বল খেলোয়াড় সাজিদ। পাশাপাশি নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে।
তিনি বলেন, শহরের কোর্ট স্টেশনের পেছনের রাফি হোমিও হল থেকে ১০০ টাকায় (এ্যকোনাইড ন্যাপ) কাচের বোতলে থাকা কিছু কিনেছিল তারা ছয় বন্ধু। পরে তা খেয়ে অসুস্থ হয়ে তিন বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এরা সবাই তরুণ। তারা অ্যালকোহলজাতীয় দ্রব্য কোথায় পেল বা কে বিক্রি করল বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে।
এরপর কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী রাফি হোমিও ফার্মেসী সিলগালা করে দেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার। তিনি জানান, আজ (শুক্রবার) মৃত ফাহিমের পিতা বাদী হয়ে কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশন সংলগ্ন মসজিদ মার্কেটের রাফি হোমিও হলের মালিক ডাঃ রফিকুল ইসলাম, কর্মচারী জুনায়েদ ও লোকমান কে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সকল আসামীকেই আটক করা হয়েছে। শুক্রবার তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়। বিজ্ঞ আদালত তাদের জেলখানায় পাঠানোর নির্দেশ দেন।