বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে উত্তেজনা চরমে। উত্তর-পূর্ব ভারতে কারফিউ চলছে, হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এই বিলকে সাম্প্রদায়িক উল্লেখ করে খোদ ভারতের নাগরিক সমাজও সমালোচনা করছেন। সমালোচনা করছে বিশ্ব নাগরিক সমাজও। এরই মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারত সফর বাতিল করেছেন, যাকে বলা হচ্ছে নজিরবিহীন।
নাগরিকত্বের নতুন এই বিল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজের।
এই বিলের মধ্য দিয়ে ভারত নিজেরই বিশাল ক্ষতি করে ফেলেছে উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভারতে নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে যে সংস্কৃতি ছিল, তা অনেকাংশেই নষ্ট করে ফেলল। এই বিলের পর আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যাপকভাবে বিক্ষোভ-সংঘাত দেখতে পাচ্ছি। মুসলমানদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গরিব মুসলমানদের কী হবে, যাদের কোনো কাগজপত্র নেই। অথচ দীর্ঘদিন ধরে তারা ভারতে বসবাস করে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার মতে, ভারতের জন্য এটি একটি ভয়ঙ্কর খারাপ সিদ্ধান্ত। ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভারত একটি হিন্দু রাষ্ট্রে রূপ দিতে যাচ্ছে। ভারত নিজের জন্যও বড় ক্ষতি করে ফেলছে। এই ক্ষতির প্রভাব পড়বে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়।’
একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজও। তিনি বলেন, ‘নাগরিকত্ব একটি মৌলিক বিষয় এবং তা সংবিধান সংরক্ষণ করে। ভারত এখন সাংবিধানিকভাবে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। যেকোনো আইনের প্রতিক্রিয়া এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটবে।’
‘দেশটিতে মুসলিমরা এখন তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকের পরিচয় পাবে। রাষ্ট্র তাদের বোঝা, আপত্তিকর এবং শত্রু মনে করার বৈধতা দিল। তার মানে ভারতে যেখানে যেখানে মুসলমান আছে, সেখানে তারা হিন্দুদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হবেন। মুসলমানরা ভারতে অন্যদের আর কখনই বলতে পারবে না যে, সকল অংশে আমি তোমার সমান সমান। এটিই হচ্ছে প্রথম প্রতিক্রিয়া।’
তিনি বলেন, ‘এই বিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে অনেক। ভারতের একটি রাজ্য কাশ্মীরে আজ কয়েক মাস হচ্ছে ইন্টারনেটের সংযোগ নেই। আসামেও ইন্টারনেট বন্ধ হলো। উত্তেজনা চলছে পশ্চিমবঙ্গে। তার মানে যেখানে যেখানে মুসলমান সেখানেই সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আবার যেখানে মুসলমানদের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় মিলছে, সেখানে তারা আরও অবহেলা, অবজ্ঞার শিকার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি অবশ্যই বাংলাদেশকে এড়িয়ে যাবে না। আসামে বাংলাদেশের গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। তার মানে ভারতের উত্তাপ বাংলাদেশে লাগবেই।’
আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারতের এই পরিস্থিতি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য উত্তাপ ছড়াবে। বাংলাদেশে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে পারে। ওপারে সাম্প্রদায়িকতা গুরুত্ব পেলে বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীরা বসে থাকবে না।’