গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নং ওয়ার্ডের পূর্ব চান্দনা ও ৩৪ নং ওয়ার্ডের ছোট দেওড়া এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ দুই এলাকায় গত ছয়দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার ৩০৬ জন এবং গতকাল ১২০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর চারজনকে ঢাকার আইসিডিডিআর,বিতে পাঠানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে ঢাকার রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। ডায়রিয়ার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বাসিন্দাদের পানি ফুটিয়ে পান করাসহ নানা পরামর্শ দিয়ে এলাকায় মাইকিং করছে সিটি করপোরেশন। বাতিল করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান। তারা হলেন নগরীর ছোট দেওড়ার কাজীবাড়ি এলাকার মোস্তফা কামালের বাড়ির ভাড়াটিয়া মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী কামরুন্নাহার (২১), একই এলাকার আবুল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া আবদুল জব্বার (৬০), পূর্ব চান্দনার আলী আকবরের স্ত্রী সুমা আক্তার (৩০), একই এলাকার ছাত্তার বাবুর্চির বাড়ির ভাড়াটিয়া আবদুস ছালাম (৫৫) ও আবদুল বাতেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মঞ্জুর হোসেনের চার মাসের শিশু নাহিদ।
সিভিল সার্জন জানান, আক্রান্ত এলাকায় সচেতনতামূলক লিফলেট, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাওয়ার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান ডা. দেবাশীষ সাহার নেতৃত্বে অধিদপ্তরের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার বিকালে ওই দুই এলাকা পরিদর্শন করেছে। তারা পানির নমুনা সংগ্রহ করে আইসিডিডিআর,বিতে পাঠিয়েছেন।
পূর্ব চন্দনার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুর থেকে ওই এলাকায় কয়েকজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। এর মধ্যে পূর্ব চান্দনার আলী আকবরের স্ত্রী সুমা আক্তারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর কলেরা হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেন পরিবারের লোকজন। তবে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার ৩০৬ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আইসিডিডিআর,বিতে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল পর্যন্ত আরো ১২০ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসেন। এর মধ্যে ৪৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে গেছেন।
হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ সম্পর্কে সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রহমত উল্লাহ বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তবে এখনো তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে ছয়টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৫৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পর্যাপ্ত খাওয়ার স্যালাইন বরাদ্দ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ২২ হাজার খাওয়ার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা আক্রান্ত এলাকার প্রতিটি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের সচেতন করছেন।