Monday , December 2 2024
You are here: Home / Uncategorized / ভারতের নাগরিকত্ব আইন পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ

ভারতের নাগরিকত্ব আইন পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ

ভারতে পাস হওয়া বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে এখনই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে না বাংলাদেশ। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন সরকারের দায়িত্বশীলরা। এ বিষয়ে মন্তব্য করার আগে আইনটি পরিষ্কারভাবে বুঝে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সাথেও আলোচনা করে নিতে চান তারা। যদিও একেবারে শেষ মুহূর্তে দুই মন্ত্রী ভারত সফর থেকে সরে যাওয়ায় নানামুখী আলোচনা তৈরির পরিপ্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে দুই মন্ত্রী ভারত সফরে যাননি।

ভারতের সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা সিএবি পাস হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এতে সই করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এর ফলে বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে।

এই আইন সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট বলে সমালোচনা চলছে ভারতেরই বিভিন্ন মহলে। নতুন এই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের’ শিকার হয়ে যেসব অমুসলিম ভারতে গিয়েছেন, তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে আর ভাবা হবে না, বরং তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

সুশীল সমাজ বলছে, আইনটির মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা সহজেই এ দেশের (ভারতের) নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন, আর তাতে সংকটে পড়বেন আদি বাসিন্দারা। তাছাড়া, নতুন আইনের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিক সুরক্ষা উপেক্ষা করা হয়েছে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

cab

সিএবি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপনকালে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অদ্ভূত বক্তব্য দেন। তিনি পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের নামও উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব দেশে লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে ধর্মীয়ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। … ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল ২২ শতাংশ। ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশে।…এই মানুষজন কোথায় গেল? হয় তাদের ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, নয়তো খুন করা হয়েছে। কিংবা অত্যাচারিত হয়ে তারা ভারতে চলে এসেছেন। এই অত্যাচারিতদের আমরা রক্ষা করতে চাই। সম্মান দিতে চাই।’

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য সেসময়ই নাকচ করে দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এ ব্যাপারে যে কথা উঠেছে, সেগুলো সত্য নয়। আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্মীয় নির্যাতন হয় না। আমাদের দেশে ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার। সাম্প্রতিককালে বিদেশ থেকে আমাদের অনেক লোক দেশে ফিরে আসছে, তার কারণ হচ্ছে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছি এবং এখানে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।’

আইনটি পাসের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘ভারতের সংসদে পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আমরা এখনও কোনো মিটিং করিনি। তবে এই আইন নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরেই সমালোচনা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। তারপরই এ বিষয়ে আলাপ করবো।’

সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো প্রতিক্রিয়া না দিলেও বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তার পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও তার শুক্রবারের (১৩ ডিসেম্বর) নির্ধারিত মেঘালয় সফর স্থগিত করেন।

এ বিষয়ে অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল- বয়কটের কোনো বিষয় নয়। এটা আমি যতটুকু জানি, বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস একদম আমাদের দুয়ারে সমাগত। রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে তারা ভারত সফরে না-ও যেতে পারেন। তবে পরবর্তীতে যাবেন।’

কিন্তু শেষ মুহূর্তে এভাবে সফর এড়ানোকে নয়াদিল্লির প্রতি ঢাকার বার্তা বলে মনে করছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

cab

এদিকে ভারতের এই বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন দেশটির সংবিধান পরিপন্থী বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এ আইনকে কেন্দ্র করে ভারতে যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশতো বটেই, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তাপ ছড়াতে পারে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘ভারতের সংবিধানে বলা আছে মানুষে মানুষে ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করা যাবে না। অথচ এই আইনে মুসলিমদের অগ্রাহ্য করা হয়েছে। ফলে এটি ভারতের সংবিধান পরিপন্থী। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ভারতের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার এই আইন পাস করেছে। বিশ্বের দরবারে ভারতের অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক দেশ বলে যে সুনাম ছিল তা এই আইন পাসের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে গেল। বিলটি পাসের মাধ্যমে ভারত একটু একটু করে একটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!