ঝিনাইদহে চলছে আমন ধান কাটা ও মাড়াই মৌসুম। এ বছর কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধানের ফলন যেমন কমে গেছে তেমনি ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানের কবলে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। গত ইরি-বোরো মৌসুমে লোকসানের পর আবার আমন আবাদেও লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। বাজারে চালের মূল্য চড়া থাকলেও ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ কৃষকরা।
ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় মোট ১ লাখ ৪ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৯৮ ভাগ জমির ধান কাটা শেষে হয়েছে।
ঝিনাইদহ সদরের বেশ কিছু এলাকার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ধান ঘরে তুলতে কৃষকরা ব্যস্তু সময় পার করছেন। কেউ মাঠে ধান কাটছেন, আবার কেউবা আঁটি বাঁধছেন আবার অনেকে মাঠ থেকে নতুন ধান গরুর গাড়িতে করে বাড়িতে আনছেন। বাড়িতে সেই ধান মাড়াই ও পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত পরিবারের সবাই। কিন্তু হাসি নেই কারও মুখে, কেমন যেনো মনমরা সবার। কারণ একটাই বাজারে নেই ধানের দাম, উঠছে না তাদের উৎপাদন খরচও।
সদর উপজেলার চরখাজুরা গ্রামের কৃষক মুজিবর বিশ্বাস বলেন, চলতি আমন মৌসুমে সাত বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। আর বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা উৎপাদন খরচে ধান হয়েছে ২০ মণ হারে। সেই ধান মোটা-চিকন ভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচও উঠছে না।
জেলা সদরের তেতুলতলা এলাকার ধানচাষি আক্তার হোসেন বলেন, ধান উৎপাদনে যে খরচ হচ্ছে দামতো সে রকম পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে চাল কিনতে গেলে দাম বেশি আর কৃষকের ধানের দাম নেই। নিজের জমি চাষ করেই আমাদের এমন লোকসান হচ্ছে, আর যারা অন্যের জমি চাষ করে তাদেরতো আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
পুড়াহাটি গ্রামের কৃষক ইসরাইল মোল্লা বলেন, আট বিঘা জমিতে এবার ধান চাষ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ধান কাটা, আঁটি বাধা থেকে শুরু করে বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করা পর্যন্ত কামলা খরচ দিতে হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আবার সারের দাম বেশি। আমাদেরতো অনেক খরচ হয়ে যায়, কিন্তু ধান বেচতে গেলে আমরা দাম পাই না। এ ভাবে চলতে থাকলে আমরা চাষ করবো কীভাবে। সবাই বলে বাংলাদেশ নাকি আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু আমাদের কৃষকদের তো কোনো উন্নয়ন হলো না আজও। বাপ-দাদার আমলের থেকেও এখন আমাদের খারাপ অবস্থা।
সদরের লাউদিয়া এলাকার চাষি নায়েব আলী বলেন, ধান বিক্রির টাকা দিয়েই সারা বছর পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে হয় আমাদের। যে মৌসুমে ভালো দাম পাই সে বছর খুব ভালো চলে। কিন্তু এ বছর আমাদের খুই লোকসান হচ্ছে, দাম নেই বাজারে। সরকার যদি ধানের দাম একটু বাড়িয়ে দেয় তাহলে কৃষকরা বেঁচে যেত।
তেতুলতলা বাজারের ধান ব্যাসায়ী রফিকুল আলম লিটন বলেন, বাজার থেকে ধান কিনে মিলারদের কাছে বিক্রি করি। কিন্তু সেখানেও এবার ধান দিতে পারছি না ঠিকমত। মিলাররা আমাদের বলছে চাল বিক্রি নেই, চালের টাকা পাচ্ছি না। বাধ্য হয়েই কম দামে ধান কিনতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, সরকার ধান ও চাল বিদেশে রফতানির একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে এবং খাদ্য গুদামে ব্যাপকভাবে ধান ক্রয় শুরু হলে ধানের দাম বাড়বে, চালের দামও কমে যাবে।