Thursday , February 6 2025
You are here: Home / অন্যান্য / বিআরটিএ কার্যালয়ে দালালরাই সব

বিআরটিএ কার্যালয়ে দালালরাই সব

নতুন সড়ক আইনের কারণে গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ এবং লাইসেন্স তৈরির জন্য নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে ভিড় বেড়েছে। ভিড়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ভোগান্তিও। অভিযোগ উঠেছে, দালাল না ধরে এখানে কোনো কাজ সহজভাবে করতে পারছেন না পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।

গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে দালালদের মাধ্যমে সংশ্নিষ্টরা বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দালালদের দৌরাত্ম্য এই অফিস ছাড়িয়ে সংশ্নিষ্ট ব্যাংক পর্যন্ত গড়িয়েছে। এনআরবিসি নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে লাইসেন্সের টাকা জমা দিতে গিয়েও ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা।

টোকেনের নামে শুধু পরিচিতদেরই টোকেন দেওয়া হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে থাকলেও টোকেন দেওয়া হয় না। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ। তারা বলছেন, এসব অভিযোগের জন্য নাকি ব্যাংকে টাকা জমা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফের সেবাটি চালু করা হয়েছে।

বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, কাজের চাপ বেড়ে যাওয়া ও জনবলের স্বল্পতায় সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ পেয়ে তা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক ও রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন।

গত ১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোর কারণে টনক নড়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের। তাই তারা কাগজপত্র ঠিক করতে ভিড় করছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জ সার্কেল অফিসে। বেড়েছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের চাপ।

সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে সেবাপ্রত্যাশীরা বলেন, এ কার্যালয়ে দালাল ছাড়া কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে ছয়জন দালালই মূলত সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

বিআরটিএ কার্যালয়েই কর্মকর্তাদের মতোই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মনির, নেকবর, জহিরসহ ছয় দালাল। এ সময় সেবাপ্রত্যাশীরা সেখানে উপস্থিত বেশ কয়েকজনকে (দালাল) দেখিয়ে কীভাবে তারা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন, সেগুলো তুলে ধরেন।

লাইসেন্স করতে এসে ভোগান্তির শিকার এক সেবাপ্রত্যাশী জানান, হাল্ক্কা লাইসেন্স করতে দুই হাজার ৫৪২ টাকা লাগলেও এ অফিসে দালালদের মাধ্যমে দিতে হয় সাড়ে সাত হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। নিজে নিজে কাগজপত্র জমা দিয়ে অফিসে অনেক দিন ঘুরে কোনো কূলকিনারা করতে না পেরে তিন হাজার টাকায় দালাল ধরে তিন মাসে লাইসেন্স পেয়ে দেখেন জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে লাইসেন্সের বয়স ১০ বছর বেশি। পরে বয়স সংশোধনের জন্য যোগাযোগ করা হলে ওই দালাল আরও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে জানায়, সেটি সংশোধন করতে তিন মাস সময় লাগবে।

সেবাপ্রত্যাশীদের কয়েকজন জানান, এ সার্কেল অফিস ছাড়াও ব্যাংকেও দালালদের একটি সিন্ডিকেট কাজ করে। এনআরবিসি নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে লাইসেন্সের টাকা জমা দেওয়ার সময় ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয় তাদের। টোকেনের নামে শুধু পরিচিতদেরই টোকেন দেওয়া হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে থাকলেও টোকেন দেওয়া হয় না। যদিও তর্কাতর্কি করে টোকেন মিলে, তবে দেখা যাবে সামনের ১০ জন শেষ না হতেই আরও কয়েকজন এসে লাইনে ঢুকবে।

তখন বলা হয়, টাকা জমা দেওয়ার জন্য তারাও এসেছেন, লাইন ধরেছেন। লাইন দেখে সিরিয়াল নম্বরটি আরেকজনকে দিয়ে বাসায় খেতে গিয়েছিলেন, অথবা টয়লেটে গিয়েছিলেন, অথবা কাগজ ভুলে ফেলে এসেছেন ইত্যাদি। আসলে এর সঙ্গে ওই ব্যাংক শাখার নিরাপত্তাকর্মীরা জড়িত।

এ ব্যাপারে সেবাপ্রত্যাশীরা প্রতিবাদ করেও কোনো পাত্তা পাচ্ছেন না। কিন্তু দালালদের ২০ থেকে ২৫টি লাইসেন্সের টাকা জমা দিতে কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না। লাইসেন্সের টাকা দেওয়া ছাড়াও পরীক্ষার জন্য এক্সট্রা টাকা দালালদের কাছে জমা দিতে হয় বলে জানান সেবাপ্রত্যাশীরা।

তবে এনআরবিসি নারায়ণগঞ্জ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, আসলে এসব অভিযোগের কারণে আমরা ব্যাংকে লাইসেন্সের টাকা জমা নেওয়া বন্ধই করে দিয়েছিলাম। কিন্তু গ্রাহকসেবার কথা চিন্তা করে আবার চালু করেছি। যেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেল সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী বলেন, শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের জন্য আগে সপ্তাহে ১৫০ আবেদন করলেও এখন প্রায় ৩০০ আবেদন করছেন। আর ফিটনেস বেড়েছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। জনবলের স্বল্পতায় সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

দালালদের মাধ্যমে কাজ করা ও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, গত জানুয়ারি থেকে কোনো লাইসেন্স ছাপা হচ্ছে না। লাইসেন্স করতে ৫-৮ মাস সময় লাগে। বিশেষ ক্ষেত্রে জরুরিভাবে কিছু করা হয়।

বিআরটিএ অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ই-মেইলে কিংবা অন্যান্য জায়গায় অভিযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বিআরটিএর কোন সেবা, কত টাকায় পাওয়া যাবে, সেটিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে হয়রানি কমে। এর পরও কোনো সমস্যা হলে তা আমাদের জানাতে হবে।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!