Monday , December 2 2024
You are here: Home / অন্যান্য / জীবনের প্রথম সংবর্ধনা পেলেন ১০ বীরাঙ্গনা

জীবনের প্রথম সংবর্ধনা পেলেন ১০ বীরাঙ্গনা

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে সম্ভ্রম হারিয়েছেন নওগাঁর রানীনগরের ১০ নারী। হারিয়েছেন স্বামী ও স্বজনদের। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এসব বীরাঙ্গনা সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। এতো দিন তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। মানুষের বাড়িতে কাজ করে ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় জীবন ধারণ করতেন।

দীর্ঘ বছর পর সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসে জীবনের প্রথম সংবর্ধনা পেলেন তারা। সেই সঙ্গে পেলেন মুক্তিযোদ্ধা সন্মানি ভাতা, বিজয় উৎসব ভাতা, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্রেস্ট ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে একটি করে ছাগল। পেয়েছেন উপজেলাবাসীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

রানীনগর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বী ১০ নারী বীরাঙ্গনা স্বীকৃতির দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতার ৪৮ বছর বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি মিলেছে। এদের মধ্যে বানী রানী পাল, ক্ষান্ত রানী পাল, রেনু বালা ও সুষমা সূত্রধর রোগে আক্রান্ত হয়ে অভাব-অনটনের সংসারে উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাদের। আর বয়সের ভারে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কোনো মতে বেঁচে আছেন মায়া রানী সূত্রধর, রাশমনি সূত্রধর, সন্ধ্যা রানী পাল, কালীদাসী পাল, সন্ধ্যা রানী ও গীতা রানী পাল। একাত্তরের সেই দুর্বিসহ যন্ত্রণা ও সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি অনেকটা দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন আর অসুস্থ্যতার মধ্যেই চলছিল তাদের জীবন সংগ্রাম।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রানীনগর পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারী মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা), যুদ্ধহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় বীরাঙ্গনা মায়া রানী সূত্রধর, রাশমনি সূত্রধর, সন্ধ্যা রানী পাল, কালীদাসী পাল, সন্ধ্যা রানী ও গীতা রানী পালের হাতে সন্মাননা ক্রেস্ট ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেয়া হয়। এছাড়াও প্রয়াত বানী রানী পাল, ক্ষান্ত রানী পাল, রেনু বালা ও সুষমা সূত্রধরের পরিবারের সদস্যদের হাতেও সম্মাননা ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়েছে।

বীরাঙ্গনা কালী দাসী পাল (৭৫) বলেন, ওই দিন সকালে যখন আমাদের গ্রামে পাঞ্জাবি আসে তখন আমার স্বামীসহ বাড়ির দরজা লাগিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে আমার স্বামীকে টেনেহিঁচড়ে পাঞ্জাবিরা রাইফেল দিয়ে মারতে মারতে যোগেন্দ্রনাথের বারান্দায় ফেলে রাখে। স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলাম। তারা আমার সামনে স্বামীকে হত্যা করে আমার ওপরও পাশবিক নির্যাতন চালায়। অভাবের সংসারে সে দিন মজুরের কাজ করে ও কখনও ধান কুড়িয়ে, বয়লারের চাতালে কাজ করে, কিংবা অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে দু মুঠো ডাল ভাত খেয়ে কোনো মতো বেঁচে আছি। ভেবেছিলাম বেঁচে থাকতে আর মনে হয় স্বীকৃতি পাবো না। অবশেষে সরকার আমাদের দিকে মুখ তুলে দেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছি। এতেই অনেক খুশি।

বীরাঙ্গনা সন্ধ্যা রানী পাল ও রাশমনি সূত্রধর বলেন, দীর্ঘবছর আমরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পাওয়া এই সংবর্ধনা এতদিনের কোনো কিছু না পাওয়ার আক্ষেপ মুছে দিয়েছে। আমরা আনন্দিত। আমাদেরকে এই সন্মাননা দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী স্থানীয় দোসর রাজাকার ও আল-বদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর তীরে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামে সনাতন ধর্মের মানুষদের ওপর সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্যাতন চালায়।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!