Thursday , February 6 2025
You are here: Home / Uncategorized / রাজবাড়ীতে বেদখল রেলের ৩৪৬ কোয়ার্টার ও ৫৫৫ একর জমি

রাজবাড়ীতে বেদখল রেলের ৩৪৬ কোয়ার্টার ও ৫৫৫ একর জমি

রাজবাড়ীতে বেদখল হয়ে গেছে রেলওয়ের ৫৫৫ একর জমি ও ৩৪৬টি স্টাফ কোয়ার্টার। ফলে নতুন চাকরিতে যোগ দেয়া ২৮ জন কর্মকর্তা কাগজে-কলমে বরাদ্দ পেলেও কোয়ার্টার বুঝে পাচ্ছেন না।

অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়েরই কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের এসব সরকারি ভূসম্পত্তি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। দখলীকৃত জমিতে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি, মার্কেট ও মাছের খামার।

রাজবাড়ীর রেলওয়ে বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় রেলওয়ের জমি রয়েছে মোট ১ হাজার ৭০৩ একর। এর মধ্যে রেলওয়ের দখলে রয়েছে ১ হাজার ৪০ একর। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৯১ একর জমি। জেলা প্রশাসন ব্যবহার করছে ১৫ একর। ইজারা দেয়া আছে দুই একর। বাকি ৫৫৫ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া ৪৬৫টি স্টাফ কোয়ার্টারের মধ্যে নানা জনের দখলে চলে গেছে ৩৪৬টি।

সম্প্রতি সরেজমিন শহরের ফুলতলা এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। বাদল নামে এক বাসিন্দা বলেন, একসময় রেলের শহর হিসেবে খ্যাত ছিল রাজবাড়ী। এখন অবস্থা খুবই নাজুক। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বেদখল হয়ে গেছে রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার। এসব কোয়ার্টার দখল করে কেউ কেউ আশপাশে টিনশেড ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছে। অনেকে কোয়ার্টার দখল করে মাদকের আখড়া গড়ে তুলেছে। সংস্কার না হওয়ায় কিছু কোয়ার্টার বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

শহরের নিউ কলোনি এলাকায় রেলওয়ের কোয়ার্টারে বাস করছেন আলী আকবর ফকির নামে এক ব্যক্তি। তিনি দাবি করেন, তার দাদা একসময় রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সেই সূত্রে তিনি এ কোয়ার্টারটি পেয়েছেন। কোয়ার্টারটি বসবাসের অযোগ্য, এ কারণেই তিনি পাশেই একটি পাকা ঘর তুলেছেন। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকছেন। যদিও রেলওয়ের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। আর জমিটি রেলওয়ের কাছ থেকে ইজারাও নেননি বলে স্বীকার করেন তিনি।

রেলওয়ে শ্রমিক লীগ রাজবাড়ী শাখার সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, নতুন যোগ দেয়া ২৮ জন কর্মকর্তার জন্য কাগজে-কলমে ২৮টি বাসা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ছয় মাস আগে এ বরাদ্দ দেয়া হলেও এখনো তাদের বাসা বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। নতুন এলাকায় সরকারি কোয়ার্টার না পেয়ে তারা খুব বিপদে আছেন।

তিনি বলেন, অথচ অবৈধভাবে কোয়ার্টার দখলের পাশাপাশি প্রভাবশালীরা ঘর তুলে ভাড়াও দিয়েছে। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বারবার বলেও লাভ হচ্ছে না। এ পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তাই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ের ভূসম্পত্তির দায়িত্বে থাকা ১৫ নং কাচারির ফিল্ড কানুনগো মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, অচিরেই রাজবাড়ীতে রেলওয়ের ডিভিশন করা হবে। ডিভিশনের কার্যক্রম শুরু হলে এসব বেদখল হওয়া সম্পত্তি দখলে আনবে রেলওয়ে বিভাগ। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কিছুদিন আগে রেলপথমন্ত্রী এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে প্রতিদিন রাজবাড়ী থেকে এখন একটি আন্তঃনগরসহ নিয়মিত ছয়টি ট্রেন চলাচল করে। পুরো কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকির জন্য রয়েছেন অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু তাদের কেউই রেলের কোয়ার্টার ব্যবহার করতে পারছেন না। সেবার মান নিয়েও যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই।

স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী আজিজুল হাসান খোকা বলেন, একসময় রাজবাড়ী থেকে শিয়ালদহ ট্রেন চলত। রাজবাড়ী থেকে খুব সহজেই ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা এ তিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেত। এখন সে অবস্থা নেই। যাত্রী থাকলেও সেবার মান খুবই খারাপ। এমনকি অনেক সময় টিকিট চেক করার মতো লোকও খুঁজে পাওয়া যায় না।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!