কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদীতে গত ২৯ই মার্চ রাতে মাছ ধরতে গিয়ে পুরাতন কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মজনু ঘরামির ছেলে জিয়ার মিস্ত্রী (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়।
জানা যায়, গত রবিবার সন্ধ্যায় ৬ বন্ধু একসাথে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে বাড়ি থেকে বের হয়। এরা হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের পুড়াতন কুষ্টিয়া এলাকার মৃত অফে মোল্লার ছেলে ফরিদুল ইসলাম (৩৫), ঠান্টুর ছেলে তারিক(৩০), মৃত নিমাই এর ছেলে লালন(৩২), আফজাল হোসেনের ছেলে সাইফুল (৩৩), রশিদের ছেলে রঙিন (৩৫) ও নিখোঁজ মজনু ঘরামির ছেলে জিয়ার মিস্ত্রী (৩৫)। এরপর ৫ জন ফিরে এলেও দুই দিন পেরিয়ে গেলেও একজনের খোঁজ মেলেনি।
এলাকাবাসীরা জানান, একই এলাকার ৬ যুবক ছোট নৌকায় মাছ ধরার জন্য পদ্মা নদীতে যায়। মাঝ নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। তাদের সকলের চিৎকারে আশেপাশে মাছ ধরার জেলেরা নৌকা নিয়ে তাদের উদ্ধার করে। ৫যুবক উদ্ধার হলেও নিখোঁজ হয় জিয়ার। দুই দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করেও মেলেনি নিখোজ জিয়ারের সন্ধান।
এদের উদ্ধারকারী জেলে জুলফিকার জানান, রাত আনুমানিক ৮টার দিকে হঠাৎ পদ্মার মাঝনদীতে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনতে পাই। এরপর আমি নৌকা নিয়ে মাঝ নদী থেকে রঙিন ও সাইফুল কে উদ্ধার করি এবং আর একটা নৌকা গিয়ে ফরিদুল, লালন ও তারিক কে উদ্ধার করে। পরে জানতে পারি জিয়ার নামের আরেক জন নদীতে রয়েছে। এরপর আমরা গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে জিয়ার কে পায়নি।
উদ্ধার হওয়া ফরিদুল জানান, আমরা ৬জন সন্ধ্যায় ছোট নৌকা নিয়ে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যায়। নৌকা মাঝনদীতে পৌঁছে দেখি লুঙ্গি ভিজে যাচ্ছে। মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে দেখতে পাই নৌকায় পানি উঠেছে। তখন আমরা নৌকা থেকে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করি। এর একপর্যায়ে নৌকা দোল খেয়ে পানিতে ডুবে যায়। আমরা তখন সাঁতার কাটতে শুরু করি। লালন নৌকা ধরে ছিল। সাঁতার কাটতে কাটতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পরি। তখন জিয়ার আমাকে বলে আমি আর সাঁতার কাটতে পারছি না। এসময় আমি জিয়ারকে চিথ হয়ে সাঁতার কাটতে বলি এবং বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করি। প্রায় ১০ মিনিট সাঁতার কাটার পর দুইটি নৌকা আমাদের ৫ জনকে উদ্ধার করে। কিন্তু তীরে পৌঁছে দেখি জিয়ার নেই। তখনই আবার আমরা নৌকা নিয়ে নিখোঁজ জিয়ার কে খুঁজতে নদীতে নামি। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও জিয়ার কে না পেয়ে তার পরিবারের লোকজনকে জানায়। পরে জিয়ারের পরিবার ও এলাকাবাসী ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এখন পর্যন্ত (সোমবার) খোঁজাখুঁজি অব্যহত রেখেছে।
এদিকে এই ঘটনাকে অন্যক্ষাতে প্রবাহিত করতে নিখোঁজ জিয়ারের চাচাত ভাই রফিকের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য রফিকুল, ইসারত, লালন, খসরু ও আলম কে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে একটি মহল।
ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ জিয়ারের সাথে তার চাচাত ভাই রফিক গংদের বিরোধ চলে আসছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা জালান, পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে জিয়ার নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি নিখোঁজ জিয়ার কে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। জিয়ার উদ্ধার হওয়ার পর ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে কি ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত (সোমবার) কোন মামলা হয়নি।
এদিকে এলাকাবাসী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।