Thursday , January 16 2025
You are here: Home / Uncategorized / নানা ছুতোয় বয়স্ক রোগীদের এড়াচ্ছে হাসপাতাল
নানা ছুতোয় বয়স্ক রোগীদের এড়াচ্ছে হাসপাতাল

নানা ছুতোয় বয়স্ক রোগীদের এড়াচ্ছে হাসপাতাল

রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা আলেয়া বেগম (ছদ্মনাম), বয়স ৬০ বছর। তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। বাসার অদূরেই বেসরকারি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করান। সপ্তাহে দুদিন হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়ে ডায়ালাইসিস করিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। গত দুদিন যাবত তার গায়ে কিছুটা জ্বর। সাথে খুসখুসে কাশিও হচ্ছে। গতকাল রোববার (২৯ মার্চ) তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা ভর্তি না নিয়ে বাসায় রাখার পরামর্শ দেন। তারা বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির পরিবেশে হাসপাতালে থাকলে কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বরং বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়াই ভালো হবে।

রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আবদুল মালেক (ছদ্মনাম) হৃদরোগে ভুগছেন। কয়েকদিন যাবত তার রাতে ভালো ঘুম হয় না, কিছুটা প্রলাপও বকেন। তাকে দেখাতে সন্তানরা গত ২৮ মার্চ ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালের হটলাইনে একজন নিউরোলজিস্টের সিরিয়াল দেন। দুপুর ১টায় তাকে আসতে বলা হয়। কিন্তু সাড়ে ১২টায় গিয়ে তিনি চিকিৎসকের দেখা পাননি। উত্তরা থেকে গিয়ে তিনি শুনতে পান, ‘অনিবার্যকারণবশত’ ১ এপ্রিল পর্যন্ত রোগী দেখবেন না ওই ডাক্তার।

 আলাপকালে ভুক্তভোগী এ দুই পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, {করোনাভাইরাসের} সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালগুলো নানা অজুহাতে জটিল রোগাক্রান্ত বয়স্ক রোগীদের ভর্তি ও চিকিৎসা এড়িয়ে যাচ্ছে। বরং হাসপাতালে গেলে বয়স্কদের (করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে) নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করছেন। তাদের মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসকরা রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন। তাহলে কি বয়স্ক জটিল রোগীরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বয়স্ক রোগাক্রান্তদের ব্যাপারে এমন অবস্থানে চলে গেছে হাসপাতালগুলো। দিনে দিনে রোগী ফিরিয়ে দেয়ার হার বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা পারতপক্ষে রোগী ভর্তি না করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারা এও বলছেন, পার্সোনাল প্রটেকশন ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) ছাড়া এ মুহূর্তে রোগী দেখা ঝুঁকিপূর্ণ।

বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল তো ভর্তি নিচ্ছেই না, চিকিৎসক না আসায় চেম্বারেও দেখানো যাচ্ছে না রোগীকে।

রহমান মাসুদ নামে একজন গণমাধ্যম কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ২৯ মার্চ লিখেছেন, ‘৩১ মার্চ ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের সপ্তম কেমো। ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হলো- না যেতে। মানে কী?’

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বয়স্ক জটিল রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমনই দিশাহীন অবস্থায় পড়তে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। যদিও চিকিৎসকদের অনেকে বলছেন, পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত হলে সেবাকর্মীরা কিছুটা আশ্বস্ত হবেন, তাতে রোগী ফিরিয়ে দেয়ার চিত্র পাল্টাতে পারে।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!