Sunday , January 26 2025
You are here: Home / Uncategorized / সরকার ঘোষিত ছুটি নেই ১৬৬ চা বাগানে
সরকার ঘোষিত ছুটি নেই ১৬৬ চা বাগানে

সরকার ঘোষিত ছুটি নেই ১৬৬ চা বাগানে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ৪ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছুটি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করছে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃক্ষলা বাহিনী ও প্রশাসন। নাগরিকদের ঘরে থাকতে বারবার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এইসব নির্দেশনার বাইরে গিয়ে বৃটিশ আমল থেকে কৃতদাসের মতো জীবন কাটাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। শত শত শ্রমিক দল বেধে কাজ করছেন একেকটি বাগানে। ফলে করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রায় ৬ লাখ চা জনগোষ্ঠী।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানসহ দেশে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে নিবন্ধিত অনিবন্ধিত মিলে প্রায় দেড় লাখ চা শ্রমিক কাজ করেন। এই সব শ্রমিকদের পরিবারের সংখ্যা মিলিয়ে যা প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি।

জানা গেছে, বাংলাদেশ চা বোর্ড ২৫ মার্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাগানগুলোতে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠি দেয়। চিঠিতে চা বোর্ডের দেয়া আট নির্দেশনায় বাগানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ও শ্রমিকদের ছুটি প্রদানের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। এই চিঠি পাওয়ার পর কিছু বাগান মালিক সামাজিক দূরত্ববজায় রাখাসহ বেশকিছু কর্মসূচি পালন করলেও তা অনেকটাই কাগজে কলমে। এখনও দল বেধে কাজ করছেন চা শ্রমিকরা, হঠাৎ কারো মুখে মাস্কের দেখা মিললেও তারা জানেন না এর ব্যবহারবিধি। নেই পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।

চা শ্রমিকরা জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারতের আসাম রাজ্যের ৮৬০টি চা বাগানের কাজ বন্ধ ঘোষণার খবর এলে তারাও এই দাবি তোলেন। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের বেশ কয়েকটি বাগানে শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। সোমবার দুপুরে ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট চা বাগানের চা শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাম ভোজন জানান, চা শ্রমিকরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করেন। নিত্যপ্রয়োজনে হাটবাজার ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে চলাচল করেন। আমরা সরকার এবং মালিকপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছি কিন্তু কেউই গুরুত্ব দিচ্ছে না। নিজ ব্যবস্থায় এবং কিছু কিছু বাগান হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে তবে তা এত অপ্রতুল যে ১০% শ্রমিকও সে সুযোগ পাচ্ছেন না। আমরা কাজ করি এক সঙ্গে। বিকেলে যখন পাতা জমা দেই তখন সবাই কাছাকাছি লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দেই। এতে একজনের সংক্রমণ হলে সবার হতে পারে। ছুটি দেয়া হলে বেতন-ভাতা পরিশোধের বাধ্যবাধকতার অজুহাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বাগান মালিকরা। তাই আমাদের মজুরিসহ ছুটি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

সরজমিনে মৌলভীবাজারের কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, দল বেধে কাজ করছেন চা শ্রমিকরা। অনেকে কাজের ফাঁকে জমাট বেধে বসে খাবার খাচ্ছেন। কেউ কেউ মাস্ক ব্যবহার করছেন তবে একই মাস্ক ৪/৫ দিন ব্যবহার করার কারণে তা নোংরা হয়ে গেছে। সারাদিন কাজের শেষে বিকেলে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে পাতা জমা দিচ্ছেন। এভাবে কাজ শেষে ঘরে ফিরে আবার ৫/৬ সদস্য মিলে ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। করোনা নিয়ে সচেতনামূলক কোনো প্রচারও নেই বাগানগুলোতে। অনেকেই জানেন না কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে।

চা শ্রমিক শিলা রিকমুন, যমুনা রিকমুন, নমিতা কৃষ্ণগোয়ালা ও মিনা রিকমুনার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ‘শুনছি দেশে কী একটা কঠিন অসুখ এসেছে, সরকার সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের বাগানতো বন্ধ দেয়নি, তাই কাজে যাচ্ছি।’

করোনা প্রতিরোধে বাগানের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সাহেবরা বলতে পারবেন আমরা জানি না। তবে আমাদের কেউ কেউ বাসায় গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুই।

মৌলভীবাজারের মৃতিঙ্গা চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির নেতা ধনা বাউড়ি জানান, অন্য সবার মতো আমরাও দেশের নাগরিক। এমনিতেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা আমরা ঠিকমত পাইনা সেখানে করোনার মতো রোগ আসলে আমাদের কী হবে তা কল্পনাও করা যায় না। তাই আমাদের নিরাপদ জীবনের স্বার্থে সরকার ঘোষিত ছুটি কার্যকর করা হোক।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম অধিদফতরের উপপরিচালক নাহিদ হোসেন জানান, চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আমাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চা বাগানের শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ছুটির ঘোষণা দেয়নি সরকার। তবে বাগান মালিকরা চাইলে নিরাপত্তার স্বার্থে বাগানের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে পারেন।

garden

ছুটি না দিলে চা বাগানগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে জানিয়ে বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদকেও চিঠি দিয়েছে শ্রমিক ইউনিয়ন। সেখান থেকেও কোনো উত্তর তারা পায়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা সংসদের সভাপতি (সিলেট ভ্যালি) জি এম শিবলি বলেন, চা বাগান বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই, তবে আমরা সতর্ক আছি। বাগানের ভেতর কাউকে যেমন আমরা প্রবেশ করতে দিচ্ছি না তেমনি কাউকে বাগানের বাইরেও যেতে দিচ্ছিনা। প্রতিটা বাগানে শ্রমিকদের সচেতন করার পাশাপাশি হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, চা শ্রমিকদের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে গত বৃহস্পতিবার অবিহিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ডা. দেবপদ রায় জানান, চা শ্রমিকদের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে গত বৃহস্পতিবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকেও জানিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতে কাউকেই ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!