করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, দোকানপাট বন্ধ, কোটি কোটি মানুষ ঘরবন্দি। এর মধ্যেও অতিপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা, অসহায়দের টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধসহ সব বিষয়ে আর্থিক লেনদেনে বিকাশের ওপরই আস্থা রাখছেন। করোনার ভয়ে অনেক এজেন্ট বন্ধ তারপরও শুধু ৩০ মার্চ একদিনেই বিকাশে প্রায় ৫৯ লাখ লেনদেন হয়েছে। বিকাশ সূত্রমতে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা। গত কয়েকদিনের হিসেব এমনই। অর্থাৎ সারাদেশের এই বন্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও ডিজিটাল লেনদেনকে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন গ্রাহক। স্বাভাবিক সময়ে একদিনে লেনদেন প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
বিকাশ কর্মকর্তারা ৩১ মার্চ বিকেলে জানান, করোনা ভাইরাস আক্রমণের এই বিশেষ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রতিপালন করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অঙ্কের পি-টু-পি লেনদেনে চার্জ নিচ্ছে না বিকাশ। সিক লেনদেন সীমা ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রথমবার ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশ আউটেও কোনো চার্জ নিচ্ছে না বিকাশ।
জানা যায়, এই বিশেষ পরিস্থিতিতেও জরুরি সেবা হিসেবে বিকাশের সকল সেবা নিরবিছিন্ন এবং নিরাপদ রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন বিকাশের কর্মীরা। এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে নগদ টাকা এবং ডিজিটাল মানি সরবরাহও নিশ্চিত করা হয়েছে।রাজধানীর ইস্কাটনের একজন বিকাশ এজেন্ট ৩১ মার্চ বিকেলে বলেন, ‘আমি বিকাশ ছাড়াও নগদ, রকেটসহ কয়েকটি ডিজিটাল মানি কোম্পানির এজেন্ট কিন্তু গত কয়েকদিন আমার সব গ্রাহক শুধুই বিকাশের।যদিও এই সময়ের লেনদেন অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক কম। সাধারণত মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে টাকা পাঠায়। কিন্তু যেহেতু এখন সবকিছু বন্ধ তাই অধিকাংশ মানুষ গ্রামে চলে গেছেন। তাই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আমাদের লেনদেন কম। তাহমিনা খাতুন নামের সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, ‘যশোরে আমার নিজ এলাকা কয়েকজন অসহায় মানুষকে টাকা পাঠাবো বলে গলির দোকানে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম শুধু বিকাশের মাধ্যমেই টাকা পাঠানো যায়। অন্যদের লেনদেন বন্ধ।
বিকাশের কর্মকর্তারা বলেন, ‘কোথাও না গিয়ে ঘরে বসে বিদ্যুৎ, গ্যাসের বিল প্রদান, মোবাইল রিচার্জ, সেন্ডমানি, অ্যাডমানি, পেমেন্টের মকো সেবাগুলো জরুরি এই অবস্থায় গ্রাহকের জন্য বাড়তি সুবিধা বয়ে এনেছে। গত ২৪ মার্চ একদিনেই সারাদেশের সবগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির প্রায় দেড় লাখ বিদ্যুৎ বিল বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করেছেন গ্রাহকরা। কেন্দ্রিয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে বিকাশ গ্রাহকরা এই জরুরি সময়ে যে কোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে যেন ‘কাস্টমার সার্ভিস’ সেবা পান এবং লেনদেন অব্যাহত রাখতে পারেন তাও নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৬২৪৭ নম্বর, বিকাশের ফেসবুক পেজ, লাইভ চ্যাট এবং ইমেইলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
বিকাশের মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সাধারণকে জানাতে এবং এর প্রতিরোধে সহায়তা করতে উদ্যোগ নিয়েছে এটুআইসহ সরকারের কয়েকটি সংস্থা। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও করণীয় বিষয়ে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে বিকাশ অ্যাপের মেনুতে যোগ হলো ‘করোনা ইনফো’।বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারকারীরা এখন বিকাশ অ্যাপের হোমস্ক্রিনের ওপরের মেন্যুবারে পাচ্ছেন নতুন এই লোগোটি। এই লোগোতে ক্লিক করলেই -সর্বশেষ আপডেট, হটলাইন নম্বর, করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নির্ণয় করুন, সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তের তথ্য দিন এবং স্বেচ্ছাসেবক হোন শিরোনামে সাব-মেন্যু পাচ্ছেন গ্রাহক। সাব-মেন্যু থেকে প্রয়োজনীয় মেনুতে ক্লিক করেই সরসারি এটুআই ওয়েবসাইট থেকে সেবা নিশ্চিত করতে পারছেন যে কোনো বিকাশ গ্রাহক।
জনস্বার্থে আরও পদক্ষেপ নিয়েছে বিকাশ। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন করোনা পরিস্থিতিতে নানান রকম কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে। বিশেষ এই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সহায়তা সহজ করতে বিকাশ অ্যাপের সাজেশন বক্সে সরাসরি যুক্ত হয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের লোগো। এখন দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে খুব সহজেই এই প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিক সহায়তা দিতে পারছেন গ্রাহক। একইভাবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ক্লাব এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান করোনা পরিস্থিতিতে জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আর্থিক সহায়তা বিকাশের মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন।
বিকাশ কর্মকর্তারা বলেন, জনাসমাগম এড়িয়ে চলা, ঘরে থাকাসহ নানান কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশবাসী করোনা প্রতিরোধে তৎপর। গ্রাহকরা জরুরি পরিস্থিতিতে ডিজিটাল লেনদেনের সুবিধার কারণেই আরও বেশি এই লেনদেনে অভ্যস্ত হচ্ছেন।