Sunday , January 26 2025
You are here: Home / ডাক্তারবাড়ী / করোনাভাইরাস নাকি সিজনাল ফ্লু?
করোনাভাইরাস নাকি সিজনাল ফ্লু?

করোনাভাইরাস নাকি সিজনাল ফ্লু?

বাংলাদেশে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সিজনাল ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার সময়। একই সময়ে বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালানো ঘাতকব্যাধি করোনাও হানা দিয়েছে । সিজনাল ফ্লুর লক্ষণ উপসর্গের সঙ্গে কোভিড -১৯ বা নভেল করোনা ভাইরাসের অধিকাংশ লক্ষণ-উপসর্গের মিল থাকায় বাড়ছে বিভ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা। জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা হলেই অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত হলেন কিনা। সেই সঙ্গে কোল্ড এলার্জির অনেক লক্ষণ উপসর্গের কিছু মিল থাকায় এই কনফিউশন ও দুশ্চিন্তা। অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কিংবা ফোন করছেন আইইডিসিআরে। আইইডিসিআর সূত্র বলছে, হটলাইনে কলকৃতদের অধিকাংশ সিজনাল ফ্লুর রোগী।

তাহলে কীভাবে বুঝবেন আপনার করোনা হয়েছে নাকি সিজলাল ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। নাকি নিছক কোল্ড এলার্জিতে ভুগছেন।

আসুন করোনাভাইরাস এবং সিজনাল ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার কিছু মিল অমিল খোঁজা যাক। যার ফলে অযথা দুশ্চিন্তা কিংবা করোনা বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া যায়। কারণ অহেতুক ভয় যেমন বিড়ম্বনা ডেকে আনে তেমনিভাবে করোনায় আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও ঘরে বসে থাকলে ডেকে আনতে পারেন ভয়ানক বিপদ।

সিজনাল ফ্লু বা সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের উপসর্গের সাদৃশ্য- বৈসাদৃশ্যের বিবরণ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনা রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস। তার দেওয়া অভিজ্ঞতা ও পরামর্শের চম্বুক অংশ তুলে ধরা হলো-

জ্বর: সিজনাল ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় প্রথম ৩ দিন বেশ জ্বর থাকবে অর্থাৎ চূড়ান্ত লক্ষণ প্রকাশ পায়। ৩-৫ দিন পর জ্বর কমে যায়। কমন কোল্ড বা কোল্ড এলার্জিতে জ্বর থাকবে তবে হালকা।
আর করোনা ভাইরাসে প্রথম তিন দিন বিকেলের দিকে সামান্য জ্বর থাকে। যেহেতু ৩ দিন পর থেকে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে তাই চতুর্থ দিন থেকে আসে জ্বর। ৮- ১৪ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকতে পারে। জ্বর উঠতে পারে ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। ঔষধ খাওয়ার পরেও জ্বর ১০০° ফারেনহাইট এর নিচে সাধারণত নামেনা।

কাশি: সিজনাল ফ্লুতে কাশি প্রথম তিন দিন প্রচণ্ড আকারে থাকে। কিন্তু করোনায় কাশি প্রকাশ পায় ৩ দিন পর থেকে। কমন কোল্ডে বা এলার্জিতে প্রথম ৩ দিন কাশি থাকবে তবে ফ্লুর মতো না।

গলা ব্যথাঃ সিজনাল ফ্লুতে গলা ব্যথা হয় সাধারণত প্রথম ৩ দিনেই । কিন্তু করোনায় কাশির সাথে গলাব্যথা থাকবে তবে সাধারণত ৩ দিন পর থেকে। কমন কোল্ডে বা এলার্জিতে প্রথম ৩ দিন সামান্য গলাব্যথা থাকতে পারে। তবে ফ্লুর মতো বেশি ভোগাবেনা।

বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টঃ সিজনাল ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জাতে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হবেনা। কিন্তু করোনায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে ৭ দিন পর সেটা বাড়তে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে কমতেও পারে। যাদের কমে যাবে তাদের হালকা উপসর্গের সংক্রমণ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

শরীর ব্যথা ও অবসাদ:  সিজনাল ফ্লু এবং করোনা উভয় ক্ষেত্রেই শরীর ব্যথা ও অবসাদ শুরু থেকেই থাকতে পারে। কমন কোল্ড বা এলার্জতে শরীর ব্যথা থাকবে তবে তা অল্প মাত্রায়।

বমিঃ সিজনাল ফ্লুতে ছোটদের বমি হতে পারে, তবে বড়দের বমি হয়না। করোনায় বমি হতে পারে।

তাহলে কীভাবে বুঝবেন করোনা নাকি ফ্লু নাকি কোল্ড-এলার্জি?

করোনা: করোনা প্রথম ৩ দিন বিকেলের দিকে হালকা জ্বর, শরীর কামড়ানোর উপসর্গ দিয়ে শুরু হবে। চতুর্থ দিন থেকে আসবে জ্বর যা ঔষধ খেলেও অধিকাংশ সময় ১০০ কিংবা ১০১ডিগ্রির উপরেই থাকবে। সেই সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবসাদ, কাশি, গলা ব্যথা, বমি ও মাথাব্যথা থাকতে পারে। । জ্বর থাকতে পারে ১৪ দিন পর্যন্ত। ৭ম থেকে ৮ম দিনের দিকে যদি বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয় সেই সঙ্গে জ্বর থাকে, তাহলে বুঝতে হবে মেডিকেল এমারজেন্সির দিকে যাচ্ছে। তখন বিলম্ব না করে নিকটস্থ করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রে কিংবা নির্দিষ্ট হাসপাতালে যেতে হবে। টেস্ট করে করোনা সনাক্ত হলে করোনার চিকিৎসা নিতে হবে।

সিজনাল ফ্লু না ইনফ্লুয়েঞ্জা:  সিজনাল ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জাতে সাধারণ সকল লক্ষণ উপসর্গ চূড়ান্তভাবে প্রকাশ পায় প্রথম ৩ দিনেই। যেমন জ্বর প্রথম দিকেই ১০০-১০২ এর মতো থাকবে। সেই সঙ্গে কাশি, গলা ব্যথা, অবসাদ সবকিছুই প্রথম দিকেই বেশি থাকবে। তবে সাধারণত হাঁচি সাধারণত থাকেনা।
আপনার মধ্যে ফ্লুর লক্ষণ দেখা দিলে জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ এবং কাশির জন্য সিরাপ খেতে পারেন। ৩-৪ দিন পর থেকে অসুখ না কমলে কিংবা ঔষধ খেয়েও জ্বর না কমলে অবশ্যই ডাক্তারের মরামর্শ নিবেন। তাছাড়া সিজনাল ফ্লুতে যেহেতু বছরে এক বা একাধীকবার আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা সবারই কম বেশি থাকে। তাই অতীতে সিজনাল ফ্লুতে যেসব সতর্কতা মেনে চলা হয় এখনো একই ধরনের সতর্কতা মানলেই চলবে।

কমন কোল্ড: কমন কোল্ডের ক্ষেত্রে সাধারণ ফ্লুর লক্ষণ উপসর্গ থাকে তবে তা মাত্রাই ফ্লুর মতো প্রকট হবেনা। সর্বদা হালকা উপসর্গ হবে। কমন কোল্ড যেহেতু আমাদের সবারই প্রায় বছরে দুই একবার হয়েই থাকে। বেশি তরল, ভিটামিন সি জাতীয় ফল এবং এন্টি হিস্টামিন খাওয়ার সাথে বেড রেস্টে সেরে যাবে কমন কোল্ড।

বিশেষ সতর্কতা-  যেহেতু সিজনাল ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা, করোনা এবং কমন কোল্ড তিনটির লক্ষণ উপসর্গ প্রায় কাছাকাছি। তাই এমন উপসর্গ দেখা দিলে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে প্রথম থেকেই নিজেকে একটি আলাদা ঘরে পৃথক করে ফেলবেন। এবং হাচি কাশি দেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করবেন যাতে আপনার দ্বারা পরিবারের অন্য সদস্য আক্রান্ত না হয়।

সর্বপরি আতঙ্কিত না হই। সাধারন সর্দি জ্বরে ঠিক এক বছর আগে যেমন চিকিৎসা বা সতর্কতা গ্রহণ করেছেন এখনো তেমনি চিকিৎসা ও সতর্কতা মেনে চলি। অতিরিক্ত আতঙ্কিত হলে সাধারণ চিন্তাশক্তি কমে যায়। তখন সমস্যা বাড়ে। সবায় সুস্থ্য থাকুন, করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকুন এই শুভ কামনা।

গ্রন্থনাঃ সাজ্জাদ হোসেন

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!