পুরো বিশ্বকে স্তব্দ করে দিয়েছে মরণঘাতক করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯। বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে এই ভাইরাস। এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও পরে আবার তা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।
ফলে এই অঘোষিত লকডাউনে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শপিংমলসহ সকল ধরণের যানবাহন। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট ও পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে। চলমান অবস্থায় দেশের সবশ্রেণির মানুষের সমস্যা হলেও সব থেকে বেশী বিপাকে পরেছে খুলনার বসবাসরত মধ্যবিত্তরা।
চরম অসুবিধায় থাকলেও এরা কাউকে কিছু বলতে পারছে না। নিম্নবিত্তদের সরকার সহায়তা করছে, অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানও তাদের পাশে আছে, কিন্তু লোক লজ্জার ভয়ে মধ্যবিত্তরা কাউকে কিছু বলতে পারছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তির কেস স্টাডি করলে দেখা যায়। খুলনা নগরীতে একটি গাড়ির শো-রুমে চাকরি করেন এক ব্যক্তি। বেতন বেশ ভালোই। এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। কিন্তু করোনার প্রদেুার্ভাবের কারণে বর্তমানে শো-রুম বন্ধ। বেতনও বন্ধ ।এই অবস্থায় চিন্তায় তার মাথায় হাত। কী করবেন, কী করা উচিত, ভেবে উঠতে পারছেন না। সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষু লজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশ করতে পারছেন না।
খুলনা নিউমার্কেট এর একজন কসমেটিকস ব্যবসায়ী বলেন, নিম্নবিত্তের লোকজন তো সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে, বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছে, কিন্তু মধ্যবিত্তের কী হবে? তার ঘরে খাবার শেষ হয়ে আসছে। তারা এখন অল্প অল্প করে খাচ্ছেন।
মধ্যবিত্তদের দুর্দশার কথা কেউ কেউ ফেসবুকেও তুলে ধরছেন। একজন লিখেছেন, সবাই আমরা ব্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষদের নিয়ে। মধ্যবিত্তদের খবর কেউ নেয়না। এসময় মধ্যবিত্তদের খবর না রাখলে ,না খেয়ে মারা যেতে পারে হাজারও মধ্যবিত্ত। খবর নিয়েন, বাসায় বাজার সদাই আছে নাকি মুখ চেপে না খেয়ে দিন পার করছে মধ্যবিত্তরা ।
খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরে এক দোকানের ম্যানেজার হিসাবে দীর্ঘ দিন কাজ করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি। আর্থিকভাবে পরিবার নিয়ে ভালোই ছিলেন তিনি। মা-বাবা ,দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ভাড়া বাসায়। মাসিক যে বেতন পেতেন তাতেই সংসারটা ভালোভাবে চলে যেত। কিন্তু তার কোনো সঞ্চয় নেই। গত কয়েক বছর ব্যবসা করলেও এমন সংকটে কখনোই পড়েননি তিনি। ১০ দিন ধরে দোকান বন্ধ। হাতে কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে কিছু বাজার করেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠিন অনিশ্চয়তায় পড়ে অন্ধকার দেখছেন চোখেমুখে। কীভাবে বাসা ভাড়া দেবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন, সেই চিন্তায় ঘুম আসে না তার। স্ত্রী আফরোজা (ছদ্দনাম) ও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে বিলাপ করা ছাড়া আর পথ দেখছেন না তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশ্ন রয়ে যায়, তাদের মত এমন অসহায় মধ্যবিত্তদের চাপা কান্না শুনবে কে?