Sunday , January 26 2025
You are here: Home / খুলনা ও বরিশাল / অর্থ-সংকটে যৌনকর্মীরা
অর্থ-সংকটে যৌনকর্মীরা

অর্থ-সংকটে যৌনকর্মীরা

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২০ মার্চ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লী লকডাউন করে প্রশাসন। এরপর থেকে পল্লীর দেড় সহস্রাধিক বাসিন্দা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

নামমাত্র সরকারি-বেসরকারি ত্রাণসামগ্রী পেলেও নগদ টাকার অভাবে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও ওষুধ কিনতে পারছেন না। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাড়িওয়ালীর নিকট ঘর ভাড়ার দেনা। অন্যদিকে দৌলতদিয়া পোড়াভিটায় অবস্থিত প্রায় ২ শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত যৌনকর্মীর অনেকেই কোনো ত্রাণসামগ্রী পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

গতকাল শনিবার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক দিন আগেও যেখানে ছিল মানুষের সমাগম এখন সেখানে ভূতুরে পরিবেশ। পল্লীর ভিতরে যেতেই আশপাশ থেকে কয়েক জন যৌনকর্মী এগিয়ে এলে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২০ মার্চ পল্লীর ৬টি প্রবেশ পথের মধ্যে একটি পথ খোলা রেখে ৫টি প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয় গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশ। ঐ গেটটিতে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা থাকায় এই পল্লীতে আগতদের আসা-যাওয়া না থাকায় যৌনকর্মীদের আয় বন্ধ হয়ে যায়।

যৌনপল্লীর বাসিন্দা জিয়াসমিন (২২) বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ২০ মার্চ থেকে আমাদের যৌনপল্লী লকডাউন করেছে পুলিশ, তারপর থেকে আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা সরকারি ও বেসরকারিভাবে কিছু ত্রাণসামগ্রী পেয়েছি। কিন্তু নগদ অর্থ না থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। এছাড়া আমাদের প্রতিদিন বাড়িওয়ালীর ঘর ভাড়া, বিদ্যুত্ বিলসহ টাকা দিতে হয়। আয় না থাকায় আমাদের এখন দেনা হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর পোড়া ভিটার বাসিন্দা মালেকা (৫৫), মৌসুমি (৪৫), ফেরদৌসি (৪৫), মমতাজ (৬৫), জাহানারা (৫৫), সোনাই বেগম (৫০) ও মনি আক্তার (৬০) জানান, এই পোড়াভিটায় প্রায় দেড়শতাধিক বয়স্ক যৌনকর্মী বসবাস করে। তারা যৌনপল্লীর বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, এখন সব বন্ধ হয়ে গেছে তাই কোনো কাজ-কর্ম না থাকায় সবাই বেকার হয়ে গেছে। অনেকে সহযোগিতা পেলেও তারা এখনো কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রহমান মণ্ডল বলেন, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় পল্লীর জন্য ৩৯ মেট্রিক টন চাল দিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য কন্যা কানিজ ফাতিমা চৈতি ও স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা এমএমএস কর্মকর্তারা তাদেরকে খাদ্য সহয়তা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে যৌনপল্লী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে এখানকার বাসিন্দারা অনেকটা মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি স্যারের নির্দেশনা ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে যৌনপল্লীর বাসিন্দা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আরো পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পল্লীর অসহায় বাসিন্দাদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু জানান, জেলা প্রশাসকের বিশেষ বরাদ্দ থেকে পল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ অর্থ বিতরণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

 

দাকোপে যৌনকর্মীদের মানবেতর জীবনযাপন

 করোনা ভাইরাস আতঙ্কে খদ্দের না থাকায় খুলনার দাকোপের বানিশান্তা যৌনপল্লির ৮৯ জন যৌনকর্মীর দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে চলেছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলার বানিশান্তা যৌনপল্লিতে ৮৯ জন যৌনকর্মী রয়েছে। এছাড়া সেখানে ৬৫ জন শিশু ও ৭০ জন পুরুষ রয়েছে। করোনা আতঙ্কের কারণে যৌনপল্লিতে গত ১৫ মার্চ থেকে কোনো খদ্দের আসে না। তাছাড়া গত ২৪ মার্চ থেকে উপজেলা প্রশাসন সেখানে লোকজন যাতাযাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

যৌনকর্মী কলি, নূরি, রেহানা, পপিসহ কয়েক জন জানায়, আগে যৌনপল্লিতে অনেক খদ্দের আসত। প্রতিদিন এক জন মেয়ের দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা ইনকাম হতো। পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়েপরে ভালোই ছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে এখন আর খদ্দের নেই। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে বলে জানান।

যৌনপল্লির সভানেত্রী রাজিয়া বলেন, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে এখানে আর কোনো লোকজন আসে না। বর্তমানে যৌনকর্মীরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ১১ দিনে যৌনকর্মীপ্রতি ১৩ কেজি চাল, ৫০০ গ্রাম আলু আর ৫০০ টাকা দিয়েছে। এক একজন যৌনকর্মীর সংসারে চার-পাঁচ জন করে লোক, কী খেয়ে তারা বাঁচবে।

এ বিষয়ে বানিশান্তা ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় জানান, এ পর্যপ্ত যৌনকর্মীদের কিছু চাল, অল্প কিছু আলু, হাত ধোয়ার সামগ্রী আর ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। সরকার যখন যা দিচ্ছে তখন তাই তিনি পৌঁছে দিচ্ছেন। যৌনকর্মীদের যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তাতে তাদের কিছুই হচ্ছে না, বিষয়টি তিনি বুঝেও কিছু করার নেই বলে জানান।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল ওয়াদুদ বলেন, সরকারের কাছ থেকে যা পাওয়া গেছে তাই তাদের দেওয়া হয়েছে। তার মতে যৌনকর্মীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!