কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক সমুদ্র কণ্ঠ’র সম্পাদক অধ্যাপক মঈনুল হাসান পলাশের সঙ্গে লকডাউন নিশ্চিতে মাঠে নামা জেলা প্রশাসনের এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনে বেরিয়ে এ অসৌজন্যতার কবলে পড়েন সাংবাদিক পলাশ। এসময় ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের নিয়ে অশালীন বাক্য ব্যয় করেন বলেও অভিযোগ করেন সাংবাদিক পলাশ। শনিবার দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা প্রধানসড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
একইভাবে শহরের জাম্বুর দোকান এলাকায় বিকেলে মাঠে থাকা আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা দীপ্ত টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়ার অপরাধে জরিমানা করেন। পেশাগত দায়িত্বপালনে বাধ্য হয়ে বের হওয়া এবং একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিষেধ করানোর পরও জরিমানার খড়গ থেকে রেহায় পাননি তিনি।
তাদের পাশাপাশি আরো কয়েকটি টেলিভিশনের প্রতিনিধি ও স্থানীয় সাংবাদিক একই ভোগান্তিতে পড়েন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষগুলোর সঙ্গেও অশালীন আচরণ করেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নিজেদের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে ফেসবুকের স্ব স্ব আইডির ওয়ালে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা।
অধ্যাপক মঈনুল হাসান পলাশ তার ফেসবুক ওয়ালে ঘটনার বর্ণনা করে শেয়ার করার পর কক্সবাজারের সাংবাদিক মহলে শুরু হয় প্রতিবাদ। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সাধারণ জনগণও।
পাঠকের সুবিধার্থে ঘটনার বর্ণনা ও কয়েকটা মন্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘আজ দুপুরে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হলাম। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ঝাউতলার রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড এর সামনে জেলা প্রশাসনের টহল টিম আমাকে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসবার সময় আটকালো। আমার মোটরসাইকেলের সামনে হেডলাইটের কাভারে দৈনিক সমুদ্রকন্ঠের স্টিকার লাগানো ছিলো।
তারপরও দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিজের পরিচয় দিলাম, আমি একজন সাংবাদিক ও পত্রিকার সম্পাদক। কিন্তু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাতে কোনো পাত্তাই দিলেন না। আমার মোটরসাইকেলের সাথে একটা বাজারের ব্যাগও ছিলো। তিনি শাসালেন ব্যাগ নিয়ে ঘুরছি কেনো। এনিয়ে তার সাথে তর্ক করলাম। এক পর্যায়ে তার সহযোগী কর্মকর্তারা, পুলিশের সিপাই, গাড়ির ড্রাইভাররা আমাকে ঘিরে ধরলো।
আমি বললাম আমার সাথে বস্তা থাকুক, সাংবাদিক/সম্পাদক হিসেবে তো বাইরে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। কোনো সাংবাদিকদের বিচরণে তো সরকার কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অসৌজন্যমূলকভাবে বললেন আপনার মতো সম্পাদক অলিতে গলিতে আছে। আমি তখন বিষয়টি জানাতে ১টা ১০ মিনিটে কক্সবাজারের মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব মো. কামাল হোসেনের সরকারি মোবাইল নাম্বারে দু’বার ফোন করে তার ফোন বিজি পেলাম।
ইতিমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চালক এসে আমার মোটর সাইকেলের চাবি কেড়ে নিয়ে গেলো। পাশ থেকে একজন বললো, একে ধরে অফিসে নিয়ে আসেন!
সাথে সাথেই এক পুলিশ বললো, একে হ্যান্ডকাফ লাগাও….
আমি একা। চারপাশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, তার সহযোগী, হাফ ডজন পুলিশ, ২০/২২ টা প্রশাসনের গাড়ি….
অবশেষে হতাশ হয়ে বললাম, আমি কি যেতে পারবো?
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, অনুরোধ করে বলেন।
আমি বললাম, চাবি দিতে বলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, দিতে বলেন মানে কি? অনুরোধ করেন!
আমি অনুরোধ করলাম তার ভাষায়। তিনি দয়াপরবশ হয়ে চাবি ফেরত দিতে বললেন।
এখন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে আমার প্রশ্ন, একটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে এই পরিস্থিতিতে বাইরে পেশাগতভাবে বিচরণ করার ওপর বিধিনিষেধ আছে কি?
আমি পেশাগত পরিচয় দিলে, আমার সাথে কোনো ব্যাগ বা অন্যকিছু রাখার ওপর কোনো বিধিনিষেধ আছে কি?’
উক্ত পোস্টে দু’শতাধিক জনের মন্তব্য জমা পড়েছে, যার বেশীরভাগই নিন্দার। তার মধ্যে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি তৌফিক লিপু লিখেছেন, ‘আমাকেও আটকালো সন্ধ্যার আগে। কাঁধে ফুল বিহীন কনস্টেবলের যে ক্ষমতা দেখলাম। বাপরে বাপ। করোনার চেয়ে ভয়ংকর।’
মানবজমিনের কক্সবাজারস্থ স্টাফ রিপোর্টার রাসেল চৌধুরী লিখেছেন, ‘কক্সবাজারে নাজিম উদ্দিন (সাবেক এসিল্যান্ড কক্সবাজার) কর্মজীবনে শুরুতে এ রকমই দাম্ভিক ছিলেন, তার পরিণতি আমরা দেখেছি, ইনিও দেখছি নাজিম উদ্দিনের উত্তরসূরি। তার মনে রাখা উচিত, সাগরপাড়ের মানুষের অভিশাপ বড় নির্মম হয়। দিন শেষে ইজ্জত নিয়ে কেউ ফিরতে পারেন না। বাইরে গিয়েও ইজ্জত পান না।’
অভিযোগেরে বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরফাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনকে ফোন করা হয়। সংযোগ না পেয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আফসারকে ক্ষুদে বার্তায় প্রশ্ন করা হয়, কিন্তু তিনিও কোন উত্তর দেননি।