Thursday , May 22 2025
You are here: Home / বিদেশ / নেপালে ভারত-বিরোধী মনোভাবের পাঁচ কারণ
নেপালে ভারত-বিরোধী মনোভাবের পাঁচ কারণ

নেপালে ভারত-বিরোধী মনোভাবের পাঁচ কারণ

রুপান্তরঃ আব্বাস আলী। ঝিনাইদহ।
তথ্যসুত্রঃ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও দ্য ডিপ্লোম্যা

ভারতীয় অধ্যাপক সুখ দেও মুনি সঠিকভাবেই বলেছেন যে, নেপঅর আর ভারত ‘বিশ্বের নিকটতম প্রতিবেশী’। বহু কূটনৈতিক আর নাগরিক বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নেপালের সেনাবাহিনী প্রধান ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অনারারি জেনারেল এবং ভারতের সেনাপ্রধানের জন্যও একই বিষয় প্রযোজ্য। নেপালের হাজার হাজার গোর্খা সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে কাজ করছে।

নাগরিক পর্যায়ে দুই দেশের নাগরিকরাই একে অন্যের দেশে কাজ করতে পারে ও বাস করতে পারে। এই মাত্রার নাগরিক সম্পর্ক চলে আসছে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও নেপালের সার্বভৌম অস্তিত্ব গঠনের আগে থেকেই। দুই দেশের মধ্যে একই ধরণের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন রয়েছে।

তবে এটা ঠিক যে, বিশেষ করে নেপালে জোরালো সাংস্কৃতিক সম্পর্কের আড়ালে জনমতের হতাশা চাপা পড়ে গেছে। ভারতের ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে নেপালীদের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষোভের পাঁচটি কারণ এখানে উল্লেখ করা হলো।

অবরোধ

স্থলবেষ্টিত নেপালকে কখনও কখনও ভারতবেষ্টিত বলা হয়, কারণ দেশের পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ – তিন দিকেই ভারত। ভৌগলিক সুবিধাকে ব্যবহার করে ভারত নেপালের বিরুদ্ধে তিনবার বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করেছে – ১৯৭৫, ১৯৮৯ ও ২০১৫ সালে। এই অবরোধগুলো নেপালিদের মধ্যে ব্যাপক ভারত-বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে। শক্তিশালী ভূমিকম্প বিপর্যস্ত নেপারে ২০১৫ সালে অবরোধ আরোপের পর নেপাল তাদের উত্তরের প্রতিবেশী চীনের সাথে ঐতিহাসিক বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়।

সীমান্ত

নেপাল আর ভারতের প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার সীমান্ত পুরোটাই খোলা। কিন্তু এই সীমান্ত পুরোপুরি উত্তেজনাশূণ্য নয়। দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু সীমান্ত এলাকা নিয়ে বিবাদ রয়েছে। সম্প্রতি ভারত ও নেপাল সরকারের পাল্টাপাল্টি মানচিত্র প্রকাশের কারণে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা নতুন করে উসকে উঠেছে।

আরেকটি তিক্ত বাস্তবতা হলো নেপালের দিক থেকে সীমান্তের অধিকাংশ জায়গায় অরক্ষিত, অন্যদিকে সংলগ্ন ভারত সীমান্তকে রক্ষার জন্য ব্যাপক সেনা মোতায়েন রয়েছে সেখানে। মাঝে মাঝে এমনও হয়েছে যে, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী নেপালের ভূমিতে অনুপ্রবেশ করে নেপালি নাগরিকদের হত্যা পর্যন্ত করে গেছে। এমন অগণিত ঘটনা রয়েছে, যেখানে ভারত থেকে কাজ করে ফেরার পথে নেপালি শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী সেনারা। এই ঘটনাগুলোও নেপালে ভারত-বিরোধী ক্ষোভের অন্যতম কারণ।

বুদ্ধের জন্মস্থান

এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন নেপালের লুম্বিনিতে। বুদ্ধের ঐতিহ্যগুলো নেপালের জন্য আবেগনির্ভর বিষয়, যেখানে জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠি হলো বৌদ্ধ। কিন্তু কিছু ভারতীয় চলচ্চিত্র, বই এবং জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন যে, বুদ্ধের জন্ম ভারতে। তাদের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছে নেপালিরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে দেয়া বক্তৃতায় বলেছেন, ভারত “বিশ্বকে বুদ্ধের শান্তির বার্তা দিয়েছে”। নেপালে সোশাল মিডিয়ায় এই কথার ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে, এবং সেটা নেপালিদের মধ্যে ভারত-বিরোধী মনোভাব আরও বাড়িয়েছে।

‘বড় ভাই’সুলভ আচরণ

নেপাল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীনতম সার্বভৌম দেশ। ভারত, বাংলাদেশ, এবং পাকিস্তান যখন ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে ছিল, নেপাল তখন সার্বভৌম দেশ হিসেবে ব্রিটিশদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। ২০১৬ সালের শেষের দিকে, নেপাল ও ব্রিটেন কূটনৈতিক বন্ধুত্বের ২০০ বছর উদযাপন করেছে। অন্যদিকে ভারত স্বাধীন হয়েছে মাত্র ১৯৪৭ সালে।

সার্বভৌমত্বের গৌরবজনক ইতিহাসের কারণে নেপালিরা গর্বিত। তবে, ভারতের রাজনীতি ও মিডিয়া অঙ্ঘনের অনেকেই অভ্যাসবশে নেপালকে ভারতের ‘ছোট ভাই’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি ও সাংবাদিকরা প্রায়ই ভারতকে যেভাবে নেপালের ‘বড় ভাই’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে, নেপালিরা সেটার সাথে একমত নয়। নেপালের প্রত্যেক খুঁটিনাটি বিষয়ে ভারতের ‘ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে সমালোচনা ছাড়াও এ ব্যাপারে নেপালিদের দার্শনিক আপত্তি রয়েছে: তারা মনে করে শুধুমত আকারগত দিক থেকে বড় বলেই ভারত নেপালের বড় ভাই হতে পারে না। এই বিষয়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি বলেছিলেন, “যে কোন দেশ আকারে বা জনসংখ্যার দিক থেকে বড় বা ছোট হতে পারে, কিন্তু জাতীয়তা কখনও ছোট বা বড় হতে পারে না। প্রত্যেক দেশেরই তাদের সার্বভৌমত্ব চর্চার জন্য সমান সুযোগ থাকা উচিত”।

অসম কূটনৈতিক চুক্তি

নেপাল আর ভারতের মধ্যে বহু কূটনৈতিক চুক্তি রয়েছে, এবং জনগণের ধারণা হলো এগুলোর অধিকাংশই ভারতের স্বার্থের অনুকূলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের সাথে গান্দাকি, কোশি ও মহাকালী নদীর পানি চুক্তি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ নেপালির মধ্যে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। তারা বলে থাকে, এই চুক্তিগুলো নেপালের মহামূল্যবান পানি সম্পদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ভারতকে সুবিধা দিয়েছে।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!