সে এই শহরে একাই থাকে .. কর্মযজ্ঞে ভেতরের কষ্ট ভুলে থাকতে শিখে গেছে সে .. খুব সকালে কাজে বের হয়ে কখন যে চারটা বেজে গেছে খেয়ালই নেই !! বাসায় পৌঁছাতে এক ঘন্টা লাগবে .. রান্না করে খেতে নিশ্চয় ছ’টা বাজবে .. থাক একবারে রাতেই খাবো ..!!
গল্পটা খুব কাছের একজনের। করোনায় গেল এক’শ দিনের অর্ধেক দুপুর তার না খেয়েই কেটেছে !! আগে এসব দিনগুলোতে হোটেল বা যেখানে কাজে যেত সেখানেই খেয়ে নিত সে .. যা করোনায় আটকে গেছে।
এভাবে অনেকের জীবনই প্রায় এক’শ দিন ধরে কোথায় যেন আটকে গেছে .. এই সময়ে মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খায় .. বেশিরভাগই দুশ্চিন্তা .. মাঝে মাঝে মেসেজ আসে .. কেউ আইসিইউ খুঁজে পাচ্ছে না, কারো বাবার জন্য অক্সিজেন লাগবে !!
বেতন কমে গেছে অনেকের .. চাকরি চলে গেছে বহু মানুষের .. কত বাজার বন্ধ হয়ে গেছে .. কত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে .. বাসা ভাড়া দিতে না পেরে গ্রামে চলে গেছে কেউ কেউ .. কারো পড়াশুনা থমকে আছে .. কারো ফাইনাল পরীক্ষা .. কারো কারো নতুন জীবন রচনাও আটকে গেছে .. কেউ অনিশ্চিত ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ !!
এই সময়ের ডিপ্রেসনটা যাচ্ছেই না .. হুট করেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে .. ঘুম হচ্ছে না .. ভীষণ একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে সব .. এই জীবন যত আরামেরই হোক, এই জীবনটা স্বাভাবিক না, কখনো স্বাভাবিক ছিলও না !!
তুলনা দিয়ে কখনো ডিপ্রেসন কেটে যায় না .. মন খারাপের সময়ে কেউ এসে যদি বলে .. কত মানুষ না খেয়ে আছে .. হ্যাঁ যৌক্তিক কথা .. কিন্তু অনুভূতিরা যুক্তি মানে না .. যে নির্দিষ্ট কারণে কারো মন খারাপ, ওই কারণটাই তার কাছে বড় .. বাকি সব যুক্তিতর্ক অর্থহীন !!
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে .. সকালে ছুটে যাব গন্তব্যে .. দুপুরে কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে খাবো পছন্দের কিছু .. বিকেলে চায়ের কাপে ঝড় উঠবে .. সন্ধায় জমে উঠবে ক্লাবের আড্ডা !!
অফিস বা ক্লাস শেষে আড্ডা হবে .. দেখা হলে হাসিমুখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো কাছের মানুষগুলোকে !!
ওই ব্যস্ত জীবনটাই ভালো .. হয়তো ক্লান্ত হয়ে আবার ছুটি চাইবো .. তবু জীবনটা চলতে থাকবে তো !!
স্রষ্টার কাছে মিনতি, আমার শত অভিযোগের ওই ব্যস্ত জীবনটাই ফিরিয়ে দাও .. এই টোনা (মাক্স) পরা থমকে থাকা জীবনটা আর নিতে পারছি না .. একদম না ..!!