কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম খাঁপাড়া এলাকার কালি নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী দুলাল চক্র। আর এই বালু বিভিন্ন পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ফলে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
জানা যায়, বাঁশগ্রাম খাঁপাড়া গেলে দেখা যায়, সন্ধ্যার প থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রভাবশালী দুলাল ও তার লোকজন কালি নদীতে চারটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এই বালু ট্রলার ও ট্রাক করে বিভিন্ন পক্ষের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। ড্রেজার বসিয়ে এসব বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড়ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে নদীপাড়ের গ্রামের মানুষ পড়েছে ঝুঁকিতে।
অন্যদিকে দিনে বালি না তুলে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই নদী থেকে বালি উত্তোলন চলছে। দিনে ড্রেজার মেশিনের ইঞ্জিন খুলে এনে দুলালের বাড়ির পাশে রেখে দেওয়া হয়। ড্রেজার ও অন্যান্য যন্ত্র কালি নদীর পানা দিয়ে ডেকে দেওয়া হয়। যাতে কেউ দেখতে না পায়। এভাবে প্রায় ১ বছর যাবৎ দুলাল স্থানীয় টিপু নামে এক ব্যক্তির ড্রেজার মেশিন ভাড়া করে এনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। দুলাল এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। অথচ তার পাশেই কালি নদীতে ব্রীজ নির্মাণ কাজে ড্রেজার মেশিনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বালি উত্তোলন করলেও কুমারখালী উপজেলা প্রশাসন ৩দিন আগে অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। দুালাল কালি নদীর পাশে বালু স্তুপ করে প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ ট্রলি বালি বিক্রয় করছে। এ ব্যাপারে বাগুলাট ইউপি চেয়ারম্যান জামাল সরকারের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, দুলাল ও তার লোকজন প্রতিদিন সন্ধ্যার পর হতে গভীর রাত পর্যন্ত কালি নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে। আমি কুমারখালী এসিল্যান্ডকে এ ব্যাপারে জানালে তিনি বাঁশগ্রামে এসে খুঁজে পাননি বলে জানান। অথচ দুলালের বালি উত্তোলনের ঘটনা এই এলাকার সবাই জানে এবং ভোর রাতে ড্রেজারের মেশিন খুলে এনে তার বাড়ির পাশে রেখে দেয়। এই বালি উত্তোলনের বিষয় বাগুলাট ইউনিয়ন ভুমি অফিসের কর্মকর্তার ০১৭৪৪৫৮০৫৪৬ নং মোবাইলে কথা বললে তিনি তার নাম প্রকাশ করেন না। দুলালের বালি উত্তোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আজ নিউজ করেন না, আগামীকাল সকাল আমি ঘটনাস্থলে যাব। এর আগের দিন এসিল্যান্ড সাহেবের সাথে বাঁশগ্রাম গিয়ে ছিলাম। কোথাও ড্রেজার মেশিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বালু উত্তোলনে তারা নদীপাড়ে ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এ ব্যাপারে কথা বললে মামলা-হামলার হুমকি দেওয়া হয়। প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে এই ‘বালুর রাজত্ব’ কায়েম করেছে। লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হয়। মাঝখানে কথা বলে এলাকাবাসী নির্যাতনের শিকার হয়।
অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে কুমারখালী এসি ল্যান্ড এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বালি উত্তোলনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। এদিকে এলাকাবাসী এই অবৈধ বালি উত্তোলনের জন্য কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
