Thursday , May 22 2025
You are here: Home / জাতীয় / মোবাইলে কথা বলার খরচ বাড়ছে না
মোবাইলে কথা বলার খরচ বাড়ছে না

মোবাইলে কথা বলার খরচ বাড়ছে না

অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর মোবাইল সেবার ওপর বাড়তি কর আরোপ থেকে সরে আসছে সরকার। ফলে মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের খরচ কমবে।

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মোবাইল অপারেটরগুলো গ্রাহকদের এসএমএসের মাধ্যমে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির তথ্য জানায় এবং তা কার্যকর করে। অর্থাৎ ১১ জুন রাত থেকে মোবাইল সেবার বিপরীতে গ্রাহকদের বাড়তি অর্থ কাটা হচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার আগে মোবাইল সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ সারচার্জের পাশাপাশি ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ছিল। সে হিসাবে একজন গ্রাহক মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ২২ টাকা ৭২ পয়সা সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স পেত।

প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট-সারচার্জ হার অপরিবর্তিত রাখলেও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এতে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ ২৫ টাকা কেটে নেয়া হয়।

ফলে গ্রাহকদের মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়ে। যদিও বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, বর্তমানে মোবাইল কলরেটের হার এত কম যে, অপ্রয়োজনীয় কথা বলার পরিমাণ বেড়ে গেছে।

এতে কথা বলতে বলতে ট্রেনের সঙ্গে এক্সিডেন্ট করার ঘটনাও আছে। তবে আমরা কথা বেশি বলাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ শুল্ক বাড়াইনি। বরং কলরেট খুব কম। তাই এক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে সব শ্রেণির মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। এ অবস্থায় বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপ জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

এছাড়া মোবাইল অপারেটরসহ ব্যবসায়ী মহল থেকেও ব্যাপক আপত্তি আসে। আলোচনা-সমালোচনার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল সেবার সম্পূরক শুল্ক আগের অবস্থানেই নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। অর্থবিল পাসের দিন এটি সংশোধন করা হতে পারে।

এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটর রবির চিফ কর্পোরেট অফিসার শাহেদ আলম বলেন, সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেবার সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, যা প্রভিশনাল কালেকশন অব ট্যাক্সেস অ্যাক্টের অধীনে সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের বিধান রয়েছে।

তাই মোবাইল কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের এসএমএসের মাধ্যমে সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর তথ্য দিয়ে তা কার্যকর করেছে। অর্থাৎ বাড়তি হারে কর আদায় করেছে।

চূড়ান্ত বাজেটে সরকার সম্পূরক শুল্ক আগের অবস্থানে নিয়ে গেলে অপারেটরগুলোও বাড়তি কর কাটা বন্ধ করে আগের নিয়মে ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক আদায় করবে।

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের পর গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত যে অর্থ কর হিসেবে আদায় করা হয়েছে তা আইন অনুযায়ী সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া হবে। এ অর্থ মোবাইল অপারেটরদের কাছে রাখার সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোবাইল সেবার ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের পাশাপাশি ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক আরও বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।

এদিকে ভ্যাট আপিলের খরচও আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও আপিল কমিশনারেটে ভ্যাট আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে তর্কিত আদেশের দাবিকৃত করের ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ অর্থ পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

অযৌক্তিক ভ্যাট মামলা দায়েরের প্রবণতা হ্রাসে এ উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। তবে ব্যবসায়ী মহল এর তীব্র বিরোধিতা করেন। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এ উদ্যোগ ব্যবসা সহজীকরণ ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এটি ব্যবসায়ীদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালকে সংকুচিত করবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেউ খুশিতে-স্বেচ্ছায় আদালতে যায় না। ব্যবসায়ীরা তখনই আদালতের দ্বারস্থ হন, যখন ন্যায়বিচার পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তাছাড়া আদালতে মামলা বছরের পর বছর আটকে থাকার দায় তো ব্যবসায়ীদের নয়।

দেশের একজন নাগরিক হিসেবে যেকোনো বিষয়ে আইনগত প্রতিকার চাওয়ার অধিকার সবারই রয়েছে। মামলা কিংবা রাজস্ব ঝুলে থাকার দোহাই দিয়ে এত বিশাল অঙ্কের ব্যয় ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়। এ সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচার ও ব্যবসা সহজীকরণের পরিপন্থী।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!