দৈনিক সময়ের কাগজ সবার সঙ্গে, সব সময়
নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের মৃত বকুল শেখের ছেলে মীর তামিম ৮মাস আগে লিবিয়া যাওয়ার জন্য কথা বলে ফকিরাবাদ গ্রামের আদম ব্যাপারী হেলালের সাথে। ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বিদেশ পাঠাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন আদম ব্যাপারী হেলাল। লিবিয়ার উদ্দেশ্যে গেলেও সে যেতে পারে না। দুবাই থেকে যায়। আদম ব্যাপারী হেলাল ভিসা জালিয়াতির কারণে এই অবস্থায় পড়ে মীর তামিম। ৬ মাস পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। দুবায়ে বাংলাদেশীদের আশ্রয়ে এখনও রয়েছে। সেখানে কোন কর্ম পায়নি। ঘরে লুকিয়ে থাকে। এক পর্যায়ে অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বাড়ির সাথে তার সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রবাসী তামিমের মা মেরিনা, স্ত্রী দিপ্তী ও তাদের লোকজন আদম ব্যাপারী হেলাল ও মহাব্বত আলীকে বললে তারা কোন গুরুত্ব দেয় না। এ ব্যাপারে প্রবাসী মীর তামিমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এখানে বাংলাদেশীদের আশ্রয়ে আছি। ৬ মাস অনেক কষ্ট করেছি। এখানে লকডাউন চলছে, লকডাউন শেষে বাড়িতে চলে আসব। আমাকে জালিয়াতি ভিসা দিয়েছে আদম ব্যাপারী হেলাল। অভাবরে সংসারে একটু সুখ খুঁজতে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম।
তামিমের স্ত্রী দিপ্তী জানান, হেলাল উদ্দিন তামিমকে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় লিবিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। আরও বলে লিবিয়া পৌঁছানোর পর টাকা নেবে। এই কথা শুনে তামিম পরিবাররে সুখের কথা চিন্তা করে লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর লিবিয়া নিয়ে যায় আদম ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দনি। কিন্তু লিবিয়া পৌঁছয়িছে কিনা কোন খবর দেয়না। দিপ্তী জানায়, আমি আমার বাচ্চা নিয়ে স্কুলে গেলে হেলাল বলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে। আমাকে বার বার টাকা দাবী করে। পরে বলে পাটিকাবাড়ী জনতা ব্যাংকে হিসাব না খুললে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করা যাবে না। দিপ্তী বলে, আমার স্বামী টাকা পাঠালে ব্যাংক হিসাব খুলব। তখন আদম ব্যাপারী হেলাল বলে, আমি টাকা দিচ্ছি, ব্যাংকে হিসাব খোলো। তার কথামত পাটিকাবাড়ি অগ্রণী ব্যাংকে একটি হিসাব খুলি। হিসাব নং-০২০০০১৪৯৭০৬৫৫। এই হিসাবের সঞ্চয়ের ২ হাজার টাকা প্রদান করে আদম ব্যাপারী হেলাল। ব্যাংক থেকে আমার কাছে চেক বই দিলে বলে এখন আমার ২ হাজার টাকা দিয়ে দাও। পরে জোর করে চেকে স্বাক্ষর করে নেয়। এর ২দিন পর আমার বাড়ি এসে বলে চেকের স্বাক্ষর ভুল হয়েছে। আবারও চেকে স্বাক্ষর করে নেয়। ২টি চেকের পাতা নং-প্রথমটি নম্বর-১১৮২৪৬৬২৪৪১, ২য়টির নম্বর-১১৮২৪৬৬২৪৪২। পরে জানতে পারি ওই ২টি ফাঁকা চেক পাতায় ১১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা লিখে নিয়েছে। আমার বাড়িতে এসে আদম ব্যাপারী হেলাল ও তার লোকজন হুমকি দিচ্ছে এই টাকা না দিলে কোর্টে মামলা করবে। তানাহলে মীর তামিমের ছোট ভাই ৭ম শ্রেণীর ছাত্র সিয়ামকে তুলে নিয়ে যাবে। আমাদের বাড়ীতে কোন পুরুষ মানুষ নেই। যে কোন সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে আদম ব্যাপারী হেলাল ও তার লোকজন। প্রবাসী মীর তামিমের মা মেরিনা জানান, আমাদেরকে হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে আদম ব্যাপারী হেলাল এবং তাদের দাবীকৃত টাকা পরিশোধ না করলে আমার ছেলে সিয়ামকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ব্যাপারে পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুর রহমান সাঈদ জানান, আদম ব্যাপারী হেলাল ও তার মহাব্বত আলী প্রতারনার মাধ্যমে প্রবাসী তামিমের স্ত্রী দিপ্তীর নিকট থেকে ২টি চেকের পাতা নিয়ে সেখানে ১১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা লিখে নিয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। তবে এই প্রতারণার জন্য আদম ব্যাপারী হেলাল ও তার বাবা মহাব্বত আলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব্ েপ্রতারণা শিকার ওই প্রবাসী পরিবার। এই পরিবারটি অসহায় নিঃস্ব। তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে। পাটিকাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বিশ্বাস জানান, প্রতারনার শিকার প্রবাসীর মা ও স্ত্রী আমার নিকট পরিষদে অভিযোগ দিয়েছে আদম ব্যাপারী হেলালের বিরুদ্ধে। ইবি থানায় মামলা করতে বলেছি। এ ব্যাপারে ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আরিফ জানান, প্রতারনার শিকার ভুক্তিভোগীর পরিবার অভিযোগ দিলে তাৎক্ষনিক আদম ব্যাপারী হেলালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, আদম ব্যাপারী হেলাল র্যাবের হাতে আটককৃত আলোচিত হাজী কামালের সহযোগী।
