জুবায়ের আহমেদ
বাংলাদেশে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী পুরুষের মধ্যেই মাদকসেবী আছে। আর দিন দিন বাড়ছেই মাদকসেবীর সংখ্যা। সরকারের মাদক বিরোধী অভিযানের মাধ্যমে বহু মাদক ব্যবসায়ী নির্মূল হলেও আশানুরূপ ভাবে কমেনি। নতুন নতুন ব্যবসায়ী সৃষ্টি হয়েছে, যাদের মাধ্যমে পূর্বের মতোই ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। নৈতিকতা, বিবেক বিবর্জিত ও অসুস্থ প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে মাদকের আগ্রাসনে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে কেহই রেহায় পাচ্ছে না। শহরের অলি গলিতে সহজেই মাদক বিক্রি ও সেবন সহজ হলেও সরকারের মাদক বিরোধী অভিযানের ফলে শহরের তুলনায় এখন গ্রামাঞ্চলেই বাড়ছে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীর সংখ্যা।
এক সময় গ্রামে শুধু গাজা সেবনের প্রচলন থাকলেও ইয়াবা সহ সবধরনের মাদক দ্রব্যের বিক্রি ও সেবনের হার বেড়েছে গ্রামাঞ্চলে। মাদক স¤্রাটরা গ্রামকেই এখন মাদক বিক্রির জন্য ভালো জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের উদ্দেশ্য সাধন করছে। গ্রামের অসাধু ও অর্থলোভী পুরুষ মহিলাদের মাধ্যমে মাদক বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। তাদের লোভের বলি হচ্ছে কোমলমতি শিশু কিশোররাও। মাদকাসক্ত হয়ে নষ্ট হচ্ছে যুব সমাজ। গ্রামে মহিলারা মাদক বিক্রি করছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রমাণ সহ বহু সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোতেও মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে নিয়মিত।
২০১৯ সালের এক পরিসংখ্যানে জানা যায় বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখের মতো। মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৮৪ শতাংশ পুরুষ ও ১৬ শতাংশ নারী। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ কিশোর ও তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যাদের মধ্যে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সী থাকলেও ৮০ শতাংশই যুবক-যুবতী। তাদের মধ্যে শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার, ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এবং ১৫ ভাগ উচ্চশিক্ষিত। অর্থাৎ মাদকের আগ্রাসন থেকে শিশু থেকে বৃদ্ধ, লেখাপড়া জানা না জানা, কর্মজীবী কিংবা বেকার কেউই রেহাই পাচ্ছে না।
বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকট মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯) কালীন সময়েও মাদকের থাবা বন্ধ হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রাম এখন মাদক বিক্রেতাদের নিরাপদ ঘাটি। গ্রামের মহিলারা সন্দেহের বাহিরে থাকার কারনে মাদক স¤্রাটদের অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রির হাতিয়ার এখন তারাই। রাতারাতি বহু টাকার মালিক হওয়ার নেশায় যুব সমাজকে ধ্বংসের খেলা খেলছে তারা। ইয়াবা, গাজা, ফেনসিডিলি, হেরোইন, সিসা সহ বহু প্রকারের মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যজনকে দেখে কিংবা সখের বসে মাদকদ্রব্য সেবন করে মাদকাসক্ত হয়ে নষ্ট করছে একটি পরিবারের স্বপ্নকে। মেধা ও বিবেকশুণ্য করছে সমাজ ও দেশকে। মাদকের বলি হচ্ছে সব শ্রেণীর মানুষ।
কয়েকটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানির পেছনে প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়। প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য সেবন করা হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী প্রতিদিন ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা করে। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই দরিদ্র পরিবারের সদস্য। যাদের মাসিক আয় ১ থেকে ৫ হাজার টাকা। দরিদ্র থেকে ধনী সব শ্রেণীর মধ্যে মাদকাসক্ত থাকলেও দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মাদকাসক্তরা মাদকের টাকার জন্য নিজ ঘরে কিংবা অন্যত্র চুরি, ছিনতাই করতেও পিছপা হয় না। মাদকের টাকা চেয়ে না পেলে পরিবারের সদস্যদের সাথে ঝগড়া করা সহ প্রাণে মেরে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
গ্রামেও এখন হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়। পুলিশী নজরদারী কম ও মাদক বিক্রেতারা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকার কারনে গ্রামবাসী একযোগে অভিযোগ ও প্রতিবাদ করলে কখনো কখনো খুচরো ব্যবসায়ীরা আটক হলেও ধরাছোয়ার বাহিরে থেকে যায় বড় ব্যবসায়ীরা। ফলশ্রতিতে মাদকের আগ্রাসন বাড়ছেই দিন দিন। অনৈতিক কাজ, শিক্ষায় বিপর্যয়, চুরি, ছিনতাই, পারিবারিক অশান্তি সর্বোপরি সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে দিনকে দিন। এই অবস্থায় মাদকের করাল গ্রাস থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার জন্য তাদেরকে যথাযথ শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা প্রদান করা, তাদেরকে হেয় না করে সমাজের মূল ¯্রােতে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তরিক আচার ব্যবহার করা সহ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ নাগরিক সমাজ ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের রুখে দেওয়ার কোন বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে একটি সুস্থ, শিক্ষিত ও মেধাবী প্রজন্ম চাইলে সকলে মিলে আন্তরিক হয়ে মাদকের আগ্রাসন রুখে দিতেই হবে।
শিক্ষার্থী
ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)