Thursday , May 22 2025
You are here: Home / মতামত / করোনা : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি : আল আমিন ইসলাম নাসিম
করোনা : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি : আল আমিন ইসলাম নাসিম

করোনা : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি : আল আমিন ইসলাম নাসিম

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ কোভিড’১৯ । এটি যেনো এখন শুধু উপজেলা, জেলা, বা দেশ পর্যায়ে নয় বরং গ্রাম পর্যায়েও চলে এসেছে । গ্রামে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিলেও তাদের মধ্যে নেই যেনো কোনো সচেতনা , তবে আতঙ্কের ছোঁয়া দেখা যায় ।

নানা কুসংস্কার ও অসচেতনতায় তারা যেন এখনো বিভোর হয়ে দিন পার করছে। এ জন্য আতঙ্কে রয়েছে গ্রামের সচেতন ও শিক্ষিত মানুষেরা । গ্রামের অধিকাংশ‌ই সাদাসিধে মনের অধিকারী। সাদাসিধে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করে। তন্মধ্যে কৃষিকাজ, দিন আনে দিন খায় ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশি।

আবার শহরেও যেনো এমন হকার কিংবা ফেরিওয়ালা বা দিন আনে দিন খায় এমন শ্রমিক লাখো । বৈশ্বিক এই মহামারি রোগের জন্য তাদের জীবিকা নির্বাহেও যেন নানা বাঁধা বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যয়ের শতো দিক থাকলেও আয়ের জন্য যেন একটি পন্থাও পাচ্ছে না অনেকে।

কষ্টে দিনযাপন করছেন এমন অনেকের‌ই। আবার অনেক সৌখিন একটু বৃত্তশালী গ্রামবাসী, যাদের খাওয়া-পরনের মতো প্রয়োজন মাফিক অর্থ না থাকলেও ঘুড়ি কেনা-বেঁচা কিংবা উড়ানোর মতো মহা আনন্দে উৎসব যেন লেগেই আছে।

কেউ বা আছেন, এই করোনার ক্রান্তিলগ্নে কাজ নেই, হাতে টাকা আছে, পাকা দেয়াল গাঁথছে, ছাদ ঢালাই দিচ্ছে। কিন্তু তাদের জানা নেই, কবে এই করোনা যাবে? টাকাগুলো জমিয়ে না রেখে এমন‌ই অপব্যায়ে নিমজ্জিত আছে তারা।

আবার কেউবা এমনটা মনে করছেন, ছুটি চলছে, লকডাউন চলছে, মোটরসাইকেল কিনি বা বেড়াতে যায় মামাবাড়ি, খালাবাড়ি, অবসরে ঘুরা ঘুরি করা যাবে। কিন্তু তাদের এই কোভিড-১৯ এর প্রতি ধারণা তেমন নেই, ফলে তাদের মনে হচ্ছে ছুটি দিয়েছে, ক’দিন পড়ে আবার ঠিক হয়ে যাবে ।

গ্রামের মানুষের সবচেয়ে অসচেতনতার কথা যদি বলা যায়, তাহলে দেখা যাবে তাদের বাজারে গেলে। এখনো যেন চায়ের দোকানে, ক্যারামের দোকানে বাজার ভর্তি লোকজনের আড্ডা চলছে। শহরেও যেনো এমন, অলিতে গলিতে আড্ডা, তন্মধ্যে তরুণ প্রজন্ম যেন বেশি ।

তাদের মনে নেই কোনো ভয়, নেই কোনো চিন্তা-চেতনা। এই খোলা বাজারের জন্যেই হয়তো এক সময় পুরো গ্রামবাসীদের ভোগান্তির শিকার হতে হবে। আম্ফানের প্রবল ঝড়ে ও আষাঢ়ের বৃষ্টিতে যেন ফসলাদি অর্ধেক পা পানিতে থই থই করছে।

নেই পানি বেরোনোর সুযোগ। একমাত্র প্রবল খরায় হয়তো ফসলাদি ঘরে আনতে পারবে কৃষকেরা। অনেকে আবার ফসল তুলে নিলেও এই সমসাময়িক বৃষ্টির ফলে গবাদিপশুর জন্য খড় বা ফসলাদির অবশিষ্ট অংশ শুকাতে পারছেন না।

গ্রামের ও শহরের মানুষ অধিকাংশ‌ই এখন কর্মহীন হ‌ওয়ায় প্রধান পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছে ভ্যানে করে কাঁচামালের ব্যবসা, সবজি চাষ, দোকানদারি করা। এখন যেন প্রতিটি বাড়ি বাড়ি দোকান এমনি বলতে হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য অনেকে বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের বা কর্মহীন মানুষ।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে লকডাউন রয়েছে দেশের নানা এলাকা । এমতাবস্থায় যারা দিনমজুর, মেসে বা বাসার কাজের কর্মী কিংবা যারা ভিক্ষুক তাদেরসহ সকল নিম্নজীবি পেশাদার দের যেনো বেহাল দশা । কেননা এই করোনার ক্রান্তিলগ্নে অধিকাংশ তারা কাজ হারিয়েছে । মেস বা বাসার জন্য কর্মীরা করোনার জন্য ছাঁটাই হয়েছে বহু পূর্বেই ।

আবার যারা দিনমজুর, তারাও কাজ হারিয়েছে । জীবিকা নির্বাহে এখন যেনো শুধু জীবন হাতে নিয়েই সর্বক্ষন বাহিরে যেতে হচ্ছে । এছাড়া যারা ভিক্ষুক, তারাও যেনো এই করোনার সময়ে ঘরবন্দি । বাহিরে কোনো বাড়ি বাড়ি যেতে পারছে না । এছাড়া অনেক মধ্যবিত্ত রয়েছে যারা আত্মসম্মান ভয়ে ত্রাণের জন্য চাহিতে পারিতেছে না ।

মানুষের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয়েছে যেন এখন। এমন আতঙ্কে যেন তারা খুব দীর্ঘ সময়‌ই পার করেছে জীবনে বৈকি। কিন্তু করোনার চেয়ে বড় আতঙ্ক যেন কিস্তি বা সমিতি ওয়ালারা তৈরি করছে। এ বিষয়ে নানা সংবাদ পত্র কিংবা সরকারের দৃষ্টিগোচর হলেও যেন আবার এ সমস্যা এখন মাথা নাড়া দিয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।

তবে পূর্ব পরিকল্পনা নিলে অনেকটাই হয়তো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব । পরিকল্পনা গুলো এমন হতে পারে : ১.সংক্রমণ রোধে অবশ্য‌ই লকডাউনের প্রয়োজন পড়বে, যেহেতু বেশিরভাগ‌ই কর্মহীন সেক্ষেত্রে খাবারের সর্বোচ্চ মজুদ প্রথম থেকেই দেখতে হবে । ২.  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলো এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ । সেদিকে পূর্ব পর্যবেক্ষন করা যেতে পারে ।
৩. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো, সেটি হলো সেচ্ছাসেবী সংগ্রহ এবং ইউনিয়ন/ওয়ার্ড/পৌর ভিত্তিক করোনা কমিটি গঠন, ওয়ার্ড ভিত্তিক বেশি ভালো হয় । এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ৪. পূর্ব প্রচার প্রচারণায় জোর দেওয়া যেতে পারে । ৫.ইউনিয়নের/ওয়ার্ড নামে একটি গ্রুপ খোলা যেতে পারে, যেখানে সচেতন মহল এডমিন থেকে প্রতিনিয়ত ইউনিয়নের খোঁজ খবর বা ইউনিয়ন সদস্যদের প্রয়োজনীতা সম্পর্কে সকলকে জানান দিতে পারে, সচেতন করিতে পারে ।

বাংলাদেশে বর্তমানে অন্যতম সমস্যা হলো শিক্ষার্থীদের সমস্যা । বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে প্রতিনিয়ত নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পুরো বিশ্বের‌ মানুষের । তবে শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের জন্য শুরু হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েসহ কলেজ, স্কুলের অনলাইন পাঠদান ।

তবে পিতার এই কর্মহীন অবস্থায় তাদের পক্ষে ডেটা কিনে ক্লাস করা যেন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া নেটওয়ার্ক সমস্যা যেন অন্যতম গ্রামাঞ্চলের। এ জন্য প্রতিনিয়ত পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। সচ্ছল শহরের পরিবার বা অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষার্থীদের অনলাইন পাঠ দানে তেমন সমস্যা না হলেও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল, প্রত্যান্ত অঞ্চলের বসবাসরত, কর্মহীন পরিবারের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি যেনো খুব বেশিই পোহাতে হচ্ছে ।

কেননা তাদের অধিকাংশের খাওয়া-পরনের মতো টাকা নেই তার ওপরে আবার উচ্চমূল্যে ডেটা কিনে ক্লাস । এমন লকডাউনের সময় সত্যিই যেনো এরকম পাঠদান সাধারণ শিক্ষার্থীদেরসহ তাদের পিতা-মাতার চরম দুর্ভোগে পতিত করছে প্রতিনিয়ত । এছাড়া অনলাইনে ক্লাস করার মতো এখনোও অনেকের নেই এনড্রোয়েড ফোন, নেই উন্নত দ্রুত গতির নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা । আবার অনলাইন ক্লাসে দেখা যায় বেশিরভাগ‌ শিক্ষার্থী যেনো অনুপস্থিত ।

এমতাবস্থায় অনলাইন ক্লাসগুলো যেনো একজন শিক্ষার্থীদের থেকে অন্যজনকে পিছিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত । এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের‌ও । তাছাড়া শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি অনলাইনে সব কিছু যে শিখে নিতে পারবে এমনটাও নয়, কেননা আমরা দেখার চেয়ে ব্যবহারিক ভাবে বেশি শিখে আসছি ও শিখে থাকি ।

সর্বোপরি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বক্তব্য এমন‌ই উঠে আসছে যে , অনলাইন পাঠদানে এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয় দেশ, হয়তো আগামী দিন গুলোই পুরোপুরি অনলাইনে পাঠদানের জন্য প্রস্তুত হবে দেশ । তবে বর্তমান অবস্থায় অনলাইন পাঠদানের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যেনো আর্থিক ও মানসিক হয়রানি করা যেনো না হয় প্রশাসনের নিকট আকুল দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের । তাদের যেনো বর্তমান সময়ের এই অনলাইন নামক এই নাটকীয় পাঠদান বাদ দেয় এটাই তাদের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে ।

কিন্তু কিছু উন্নত দেশ শিক্ষা ব্যবস্থায় মানসম্মত আমূল পরিবর্তন ও পূর্বকল্পনা সাধনের মাধ্যমে এই অকেজো থেকে অনেকাংশে রেহাই পেতে সক্ষম হচ্ছে । সুতরাং করোনা পরবর্তী দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের‌ও চাই পরিবর্তন বা পূর্বপরিকল্পনা । আর যে পরিবর্তন গুলো বা পূর্বপরিকল্পনা চাই তা হলো :১.শিক্ষার্থীদের কারিকুলাম পরিবর্তন করতে হবে ।২.অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস নিশ্চিতকরণ এবং ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন : স্মাট ফোন, স্বল্প মূল্যে ডাটা ক্রয়ের সুবিধা নিশ্চিতকরণ করতে হবে ।
৩. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনলাইন ভিত্তিক পাঠদানের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে ।
৪. বাস্তবধর্মী বা হাতে কলমের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা শিখে থাকি বেশি এবং ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারদের যেনো এটা বেশি জরুরি । তাই তাদের জন্য থ্রিডি চিত্রপ্রদর্শন কিংবা এমন কিছু করতে হবে যাতে তারা এই বাস্তবধর্মী প্রশিক্ষণ থেকে বিরত না হয় ।
৫.দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ । ( যেমন : দুর্যোগ হচ্ছে, এসময়ে থিওরি‌ পড়ানো এবং দুর্যোগ শেষ   হলে পরে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান ও পরিক্ষা নেওয়া
৬. অনলাইনে পরিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে কেননা আগামী দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ব্যবস্থাসহ সবকিছু অনলাইন ভিত্তিক হবে ।
৭.অভিভাবক যেহেতু এর সঙ্গে জড়িত, সুতরাং অভিভাবকদের ইতিবাচক ধারণা দিতে হবে এবিষয়ে
৮.শিক্ষা ব্যবস্থার সূদুর উন্নতির জন্য সুচিন্তাশীল ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে ।
৯. শিক্ষা ব্যবস্থায় বড়ো বাজেটের ব্যবস্থা করিতে হবে
১০.দুর্যোগ কিছু না করতে পারে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার

গ্রামের মানুষ বর্তমানে খুব কম সংখ্যক‌ই শিক্ষিত। ফলে তাদের মধ্যে গুজব যেন সর্বদাই বিরাজমান। আর এই গুজবের ফলেই তারা‌ই যেন কোভিড-১৯ এর শিকার হচ্ছে বেশি। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রশাসন থেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দিলেও যেন তা পুরোপুরি তাদের ভোগ মেটাতে পারছে না। তাই অনেকেই কাজের আশায় প্রতিনিয়ত বেরিয়ে পড়েছেন এবং কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছেন।

তবে করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে, আমাদের বেশি গ্রামাঞ্চলের দিকেও নজর দিতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। কেননা দেশ-বিদেশের খাদ্যসামগ্রীর অধিকাংশ‌ই তারা যোগান দিয়ে থাকে। তাই গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন, তাদের নিরাপদে রাখুন‌‌।

এছাড়া দেশে সংক্রমণ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে । দেশে করোনার ১১৬-১৭ দিনের মধ্যে হয়তো করোনা আক্তান্তের সংখ্যা ১,৫০০০০ এর বেশি হয়ে যাবে । কবে নাগাদ এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দূর হবে তাও যেনো সকলের অজানা । তার সাথে সাথে যেনো দেশে বৃষ্টি, বন্যা ও ফসলের ক্ষতি, কর্মহীনতা অকেজো করে দিয়েছে সবাইকে ।

বর্তমানে ট্রায়াল চলছে অনেক ভ্যাকসিনের‌ই । তবে এখন পর্যন্ত মেলেনি করোনার ভাইরাসের প্রোপার ভ্যাকসিন । যার ফলে মৃত্যুসংখ্যাও যেনো দিনে দিনে বেড়েই চলেছে । তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধুমাত্র সচেতনতাই বা প্রতিরোধ‌ই যেনো এই ভয়াবহ করোনা ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অন্যতম উপায় । আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও পূর্ব পরিকল্পনা‌ই পারে আমাদের এ থেকে রক্ষা করতে ।

করোনা ভাইরাসের রোধের জন্য তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ তাহলো বারংবার করোনা টেস্ট করা, ট্রাকিং সিস্টেম এবং আইসোলেট করা । এছাড়া করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যেও প্রয়োজন বেশি করে লকডাউনের  ,  কোয়ারেন্টাইন এবং মাঠ পর্যায়ের সচেতন ব্যবস্থা । শুধু ব্যবস্থা নয় পাশাপাশি প্রয়োজন তাদের সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ‌ও । যত বেশি করে টেস্ট এবং আইসোলেট করা যাবে ততই যেনো এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা যাবে ।

বিদেশে যেখানে ছয় কোটি মানুষের জন্যে টেস্ট এর সংখ্যা প্রতিদিন এক লাখের কাছাকাছি । তবুও যেনো তাদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে । আমেরিকা, ব্রাজিল যেনো তার দৃষ্টান্ত উদাহরণ । তবে ভিয়েতনাম ও নিউজিল্যান্ড সুন্দর পরিকল্পনা নেওয়ায় শতভাগের কাছাকাছি তারা করোনা শঙ্কা মুক্ত হতে পেরেছে ।

সে হিসেবে আমাদের দেশে যে পরিমাণে জনসংখ্যা রয়েছে তাতে এর দ্বিগুন টেস্ট করাই শ্রেয় । করোনা টেস্ট এর জন্য যা প্রয়োজন তাহলো টেস্টিং কিট এবং প্রোপার ল্যাব । তবে অনেক স্থানে প্রোপার ল্যাব কিংবা করোনা টেস্টের প্রয়োজনীয় উপকরণ মজুদ বা সুযোগ থাকলেও থাকছে না যেনো টেস্টিং কিট এর পরিমাণ মতো মজুদ ব্যবস্থা ।

প্রতিনিয়ত আমরা গনমাধ্যমে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেস্টিং কিটের সংকট দেখতে পাই । যার ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করতে দিলেও যেনো মিলছে না নমুনার ফলাফল এবং চরম অস্থিরতায় কাটাতে হচ্ছে করোনা রোগীদের । তাদের এই ফলাফল ঘাটতির ফলে যেনো আর‌ও করোনা রোগীদের বিস্তার ঘটাচ্ছে ।

পাশাপাশি আইসোলেশনের ব্যবস্থা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে অন্যতম একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা । কিন্তু আইসোলেশনের জন্য অক্সিজেনের অসীম প্রয়োজন ।  যারা করোনা পজেটিভ, সেসব  রোগীদের জন্য হাইফ্লো অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে এবং সরবরাহের জন্য লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা দরকার।

কিন্তু দেশের এই করোনার একশো এগারো বারো দিনেও পুরোপুরি এই অক্সিজেনের সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে । যার জন্য দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের করোনা রোগীদের । আবার কেউবা অক্সিজেনের সিলিন্ডার কিনে নিজেই বাড়িতে অক্সিজেন নিচ্ছেন তবে তার জানা নেই ব্যবহার ব্যাধি । আর এই ব্যবহার ব্যাধি না জানার ফলে তাদের যেনো আরও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে । অসুস্থ থেকে আরও বেশি অসুস্থের দিকে ধাবিত হতে হচ্ছে ।

করোনার এই ক্ষান্তিলগ্নে হাই ফ্লো অক্সিজেনের ব্যবহার যেনো ব্যাপক । যার ফলে রাখা যাচ্ছে না পুরোপুরি আইসোলেসন এর ব্যবস্থা । কেননা আইসোলেশনের রোগীদের শ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেন দিতে হয় । দিনে একজন রোগীর একের অধিক বার পর্যন্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে থাকে ‌। আবার এদিকে আইসোলেট না করতে পারায় রোগীর সংখ্যাও যেনো দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ।

তাছাড়া দেশের অনেক স্থানেও দেখা দিচ্ছে অক্সিজেনের চরম সংকট । আবার এই অক্সিজেনকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মোটা নোট গুনে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত যার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে করোনা পজিটিভ রোগীরা । এছাড়া দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের অক্সিজেনের মজুদ প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে তা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে ।

এছাড়া বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির ফলে অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি যেনো অনেক টাই কমে যাবে । তবে দ্রব্যমূল্যর বৃদ্ধি যেনো আকাশ ছোঁয়া হতে পারে । প্রশাসনের চরম দৃষ্টি এদিকে থাকিলেও যেনো কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা দ্রব্য মূল্য বাড়িয়ে দেয় । আর যার ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে গোটা দেশের । তাই বিলম্বিত না করে অতি দ্রুত দ্রব্যমূল্য হ্রাস বিষয়ক পরিস্থিতিটি নিয়ন্ত্রণ আনিতে হবে ।

এছাড়া দেশে খামার চাষিদের যেনো সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে এবার, দুগ্ধজাত শিল্পে দিনে কোটি টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে । তাছাড়া ঈদকে ঘিরে তাদের যেনো অন্যরকম একটা তৈয়ারি থেকে থাকে । তবে এবার বেঁচা বিক্রির সন্ধান করিতে না পারায় খামার চাষীদের খাবারের যোগান দিতেও প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে, তাদের দিকে সুনজর দেওয়া উচিত কেননা মন্দাভাবে তারা অন্যতম সহায়ক ।

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ক্রান্তিলগ্নে নানা চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের কাপ কিংবা থালার । প্রতিনিয়ত চায়ের দোকানের এসব কাপ, প্রতিষ্ঠানের থালা অধিকাংশ‌ই জমা হচ্ছে ড্রেনে , ডোবায়, রাস্তায় । যার ফলে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পরিবেশ কেননা প্লাস্টিক দ্রুত পচনশীল নয় । এছাড়া ড্রেনের এই জলাবদ্ধতা থেকে এই মৌসুমে সৃষ্ট হতে পারে ডেঙ্গু । এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ বলে, প্লাস্টিকের কাপে গরম কিছু পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে বেশি । সুতরাং করোনার সময় আজ থেকেই প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে বিরত থাকি এবং পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসি । বিশেষজ্ঞদের অনেকের দাবি পরিবেশ প্রতিকূল অবস্থায় থাকিলে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব‌ও ঘটে থাকে ‌।

Adherents.com এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে মোট ধর্মের সংখ্যা ৪,৩০০। তথাপি এমন চারসহস্রের অধিক ধর্ম থাকলেও এসব ধর্মের মধ্যে দেখা দেয় নানা সংস্কৃতিক বৈষম্য । যার ফলে ধর্মের এই দোহায় দিয়ে অনেকে অন্য ধর্ম, কিংবা অন্য জাত ভেদাভেদ ভেবে সেবায় এগিয়ে আসা থেকে বিরত থাকে । কিন্তু যে ধর্ম দেশের সবচেয়ে এই করোণার ক্ষান্তিলগ্নে এগিয়ে এসেছে, তাহলো মানবধর্ম । যে ধর্ম মানুষের সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে আসে চরম বিপদের মধ্যেও । যে ধর্ম ফিরিয়ে এনেছে মানবতা, যে ধর্ম গান গেয়ে বেড়ায় একে অন্যের সাহায্য এগিয়ে আসতে । যে ধর্ম সককে বাঁচার নিয়ম শিখাচ্ছে প্রতিনিয়ত , যে ধর্মের গান সাধক লালন সাঁইজি পূর্বেই বলে গিয়েছেন, যে ধর্মের সাম্যবাদীতার জয়ধ্বনি গেয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সে ধর্মকে এখন আমাদের সবাইকে আকড়ে ধরে থাকতে হবে সর্বদা । যা এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমাদের মুক্তির পথ সৃষ্টি করবে । সুতরাং এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানবধর্ম‌ই হয়ে উঠুক, সবার ধর্ম ।

তবে দেশে মাদকদ্রব্য, কোভিড’১৯ নিয়ন্ত্রণের যেন বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে । বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিশোর বয়স থেকে শুরু করে বৃদ্ধা বয়স পর্যন্ত অধিকাংশ‌ই মাদক সেবনে সদা তৎপর । তন্মধ্যে কিশোর বা যুবকেরা যেনো সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্ত । ক্রমেই কিশোর, যুবক বা বৃদ্ধাদের নিকট সিগারেট সহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য যেনো খুব‌ই প্রিয় হয়ে উঠেছে , গত এক যুগ বা তারও বেশি সময় ধরে ।

তবে স্বল্প সংখ্যক বার্ধক্যরা যেনো এই বৈশ্বিক মহামারী রোগ কোভিড’১৯ থেকে পরিত্রাণের জন্য মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে ঘরে থাকলেও যেনো ঘরে থাকতে পারছে না মাদকাসক্ত কিছু টগবগে তরুন বা যুবক । এই মাদক যেনো এক অদৃশ্য নিরব ঘাতক যা সেই সেবনকারীকে প্রতিনিয়ত সেবনের জন্য ঘায়েল করতে থাকে ।

নানা অজুহাতে ও বাহানায় প্রতিনিয়ত মাদক সেবন করিতে তাহাদের যেনো ঘর থেকে বাহিরে যেতেই হয় । পাশাপাশি স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বা কাজ বন্ধ থাকাই তারা  যেনো মাদকদ্রব্য সেবনের জন্যে প্রয়োজন মাফিক পকেটমানিও পাচ্ছে না ।

এসকল বিষয় ( যেমন : বাহিরে যাওয়া, পকেটমানি নেওয়া ) নিয়ে যেনো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অন্তকলহ সর্বদা বিরাজমান করে থাকে । পাশাপাশি মাদকাসক্ত বন্ধুদের সঙ্গ, পিতা-মাতার অবহেলা ও মাদক ব্যবসায়ীদের মাথাচাড়া দেওয়াসহ সব মিলিয়ে যেনো এই তরূণদের বা যুবকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত ।

সাথে এরাও যেন এক‌ই সাথে নিজেদের মৃত্যুর ফাঁদ পাতছে । কেননা কিশোর, যুবক বা অধিকাংশ মাদক সেবনকারীরা তারা যেমন সেবন করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে তেমনিভাবে আক্রান্ত করছে পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্যদের‌ও । । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে,করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে মাদকসেবীরাই সবচেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে বিদ্যমান রয়েছে ।

যার ভোগান্তির ফল ডাক্তার-নার্স, পুলিশ, সেনাবাহিনী সহ পুরো দেশের প্রশাসন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দেশের সকল জনগনকে পত্যাক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভুগতে হচ্ছে । তদাপুরি পরিবারের বা সমাজের যে সকল সদস্যরা অহেতুক মাদক সেবনে বাহিরে যাচ্ছে , করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে তাদের মাদক সেবনের এই সমসাময়িক ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে অবগত করিতে হবে, অনেক সময় সদয় , সোচ্চার কিংবা কঠোর হতে হবে ।

এছাড়া দেশে ভাড়া ম‌ওকুফের বিষয়টি যেন অনন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে । কেননা কর্মহীন হয়ে পড়ায় আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে পড়েছে প্রায় লাখো লাখো মানুষের । যার ফলে বাসা ভাড়া, দোকান ভাড়া , মেস ভাড়াসহ অন্যান্য ভাড়া দেওয়া প্রায় তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে । করোনার এই প্রাদুর্ভাবের ফলে তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেনো মেসেই রয়ে গিয়েছে ।

এমতাবস্থায় বিভিন্ন মেস মালিক এখনও অনেককের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের জোর দাবি জানান দিচ্ছে । এসব মালিকদের কঠিন চাপের মুখে তারা যেনো অসহায় হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত । আবার অনেকেই বাসা ভাড়া না দিতে পারাই, তারা উদগ্রীব হচ্ছে গ্রামে বা তাদের বসতবাড়িতে ফেরার । এমনিভাবে বসতবাড়ি ফিরতে যায়ে করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত করছে অন্যান্য এলাকার মানুষদেরও । যার ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পুরো দেশের মানুষের ।

পরিশেষে এটাই বলা যেতে মহামারী করোনা নামক এই যুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, একতাবদ্ধ হতে হবে । পাশাপাশি মানবিক হতে হবে, সাধারণ জনগনের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে দেশকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনিতে হবে । পাশাপাশি চিকিৎসা কাঠামোও উন্নত করতে হবে । তবেই যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে বাংলাদেশ এবং স্বাভাবিক হবে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ।

লেখক : শিক্ষার্থী,
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ
মোবা : ০১৭৯৩৩৩০১৪৫
ইমেইল : alaminislamnasim@gmail.com

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!