দৈনিক সময়ের কাগজ সবার সঙ্গে, সব সময়
কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) এই সংকটকালীন সময়ে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছে কুষ্টিয়ার একঝাক তরুণ। স্থানীয় আলো স্বেচ্ছাসেবী পল্লী উন্নয়ন সংস্থার তত্ত্বাবধানে সংগঠিত জেলার এমন ১০টি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় তিন শতাধিক তরুণ-তরুণী নিজেদের এলাকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা কখনো নিজেদের অর্থয়নে আবার কখনো স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের সহযোগীতা নিয়ে গরীব দুস্থদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
এসব সেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা খাবার বিতরণ, স্থানীয় বাজার ও জনবহুল স্থানগুলোতে জীবানুনাশক স্প্রে করা, দোকানের সামনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গোল বৃত্ত অংকন, ওয়াশিং পয়েন্ট ও সচেতনতামূলক বার্তাসহ ফেস্টুন স্থাপন, গরীব দুস্থ পরিবারের মাঝে খাবার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ প্রভৃতি কাজ করছেন।
কুষ্টিয়া পৌরসভার স্বপ্নপ্রয়াস যুব সংগঠনের সভাপতি সাদিক হাসান রোহিদ জানান, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংগঠন জনসচেতনতাবৃদ্ধি মূলক বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। যার মধ্যে স্থানীয় বাজার মসজিদ ও জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে নিয়মিত জীবানুনাশক স্প্রে করা, সচেতনতামূলক বার্তাসহ ফেস্টুন স্থাপন এবং হাত ধোয়ার জন্য ৩টি ওয়াশ বক্স স্থাপন করা হয় এবং করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে অনলাইন ভিত্তিক প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ২০টি প্রান্তিক পরিবারের মাঝে খাবার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, ১৫০ জন পথশিশুর মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ এবং স্বপ্নপ্রয়াস যুব সংগঠনের উদ্যোগে এবং রোটারী ক্লাবের সহযোগিতায় রমজান মাসে প্রতিদিন ১০০০টি অসহায় পরিবারে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এছাড়া কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের তত্বাবধানে গঠিত ইমার্জেন্সি করোনা রেসপন্স টিমে স্বপ্ন প্রয়াসের ১৩ জন সদস্য অন্তর্ভূক্ত হয়, যারা কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে সরকারি সহযোগিতা (ত্রাণ এবং ওএমএস এর চাল) বিতরণে উপকারভোগী নির্বাচন, যাচাই-বাছাই এবং সহযোগিতা বিতরণে তদারকি ও সার্বিক সহযোগিতা অব্যহত রেখেছে। স্বপ্নপ্রয়াস যুব সংগঠন করোনাকালীণ সময়ে অসহায় পরিবারে সহযোগিতার পাশাপাশি অভুক্ত অসহায় কুকুরদেরকে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করে আসছে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভার পদ্মা যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান রিদয় জানান, করোনাকালীন ২০টি পরিবারে খাবার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, ৬০টি পরিবারে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় বাজার ও জনাকীর্ণ স্থানে সচেতনতামূলক বার্তাসহ ফেস্টুন স্থাপন এবং হাত ধোয়ার জন্য ৩টি ওয়াশ বক্স স্থাপন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার গোবিন্দগুনিয়া পাঞ্জেরী যুব সংস্থার প্রচার সম্পাদক মো: জুবায়ের হোসেন জানান, করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় বাজার ও জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে নিয়মিত জীবানুনাশক স্প্রে করা, হাত ধোয়ার জন্য ২টি ওয়াশ বক্স স্থাপন, গোবিন্দগুনিয়া গ্রামে লকডাউন ঘোষিত ১৬টি পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সরকারি সহযোগিতা বিতরণের জন্য পাঞ্জেরী যুব সংস্থার ৭জন সদস্যের সমন্বয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমার্জেন্সি রেসপন্স কমিটি গঠন করেন। যারা লকডাউনকালে ওই ১৬টি পরিবারে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা নিশ্চিত করেন।
একই উপজেলার উদয়ন যুব সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ তানিয়া সুলতানা নীলা জানান, করোনা মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ, হাত ধোয়ার জন্য ২টি জনাকীর্ণ স্থানে ওয়াশ বক্স স্থাপনসহ অনলাইনে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচারণা চালিয়েছি।
মিরপুর পৌরসভার ব্রাইট ইয়ুথ অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজু জানান, করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় বাজার ও জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে নিয়মিত জীবানুনাশক স্প্রে করা, সচেতনতামূলক বার্তাসহ ফেস্টুন স্থাপন এবং হাত ধোয়ার জন্য ৬টি ওয়াশ বক্স স্থাপন করা হয়। নিজেদের অর্থায়নে ১০০টি পরিবারে সাবান বিতরণ, এলাকার ৫টি মসজিদের ওযুখানায় সাবান ও মসজিদের দরজায় স্যানিটাইজার রাখার ব্যাবস্থা করা হয়। এছাড়া এলাকায় বাইরের জেলা থেকে আগত ব্যাক্তিদের তথ্য সংগ্রহ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই ব্যক্তিকে নিজ বাড়িতে ১৪দিনের হোম কোয়ারান্টাইন মানতে বাধ্য করা হয়।
উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের আইডিয়াল ইয়ুথ ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোছা: সাথী আক্তার জানান, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আইডিয়াল ইয়ুথ ইউনিয়নের ফেসবুক পেজ থেকে নিয়মিত সচেতনতাবৃদ্ধিমূলক প্রচারণাসহ প্রতিদিনের করোনা আপডেট পোস্ট করা হয়। এ ছাড়াও স্থানীয় বাজার ও জনবহুল স্থানগুলোতে জীবানুনাশক স্প্রে করা, দোকানের সামনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গোল বৃত্ত অংকন, ওয়াশিং পয়েন্ট ও সচেতনতামূলক বার্তাসহ ফেস্টুন স্থাপন, আইডিয়াল ইয়ুথ ইউনিয়নের সহযোগিতায় ১২০টি পরিবারে খাবার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, আইডিয়াল ইয়ুথ ইউনিয়নের বাস্তবায়নে ও নূরুল ইসলাম ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সহযোগিতায় ৩০টি পরিবারে এবং স্থানীয় বৃত্তবান স্থানীয় বৃত্তবানদের সহযোগিতায় ৫০টি পরিবারে খাবার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষ্যে ৭৫টি প্রান্তিক পরিবারের মাঝে ঈদ বাজার সরবরাহ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের সাথে এডভোকেসীর মাধ্যমে ছাতিয়ান ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে করোনা ইমার্জেন্সি রেসপন্স কমিটি গঠনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় পর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও অ্যালায়েন্স এর সাথে যুক্ত হয়ে সম্মিলিতভাবে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।
ছাতিয়ান ইউনিয়নের সোনারতরী যুব সংস্থার প্রচারসম্পাদক রোকনুজ্জামান নয়ন জানান, সোনারতরী যুব সংস্থার পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ এর শুরু থেকেই এলাকার মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়।
তিনি আরও জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে ৩৩টি পরিবারে সেমাই-চিনি বিতরণ করা, জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, লিফলেট বিতরণ, ওয়াশিং পয়েন্ট ও সচেতনতামূলক বার্তাসহ ফেস্টুন স্থাপনসহ অনলাইন ভিত্তিক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে।
উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কামিরহাট গ্রামের ইউনিক ইয়ুথ অর্গানাইজেশনের সভাপতি শাহিন আলী জানান, করোনা মোকাবিলায় ইউনিক ইয়ুথ অর্গানাইজেশন স্থানীয় বাজার মসজিদ ও জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে নিয়মিত জীবানুনাশক স্প্রে করা, সচেতনতামূলক বার্তাসহ ফেস্টুন স্থাপন এবং হাত ধোয়ার জন্য ২টি ওয়াশ বক্স স্থাপন করা হয়েছে।
মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন ইউনিয়নের শিমুলিয়া আলোড়ন যুব সংস্থার সভাপতি মো: জীবন আলী জানান, আলোড়ন যুব সংস্থার সদস্যরা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ইউনিয়ন পরিষদের সাথে সহযোগিতাপূর্ণভাবে সরকারি ত্রাণ বিতরণে সুবিধাভোগিদের তালিকা প্রস্তুত এবং ১৪০টি প্রান্তিক পরিবারে খাবার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বণ্টনসহ এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনাকালীন সময়ে করনীয় বিষয়ে ধারণা প্রদান এবং সচেতনতা বার্তা সমৃদ্ধ লিফলেট বিতরণ, স্থানীয় বাজার, জনাকীর্ণ স্থান ও মসজিদে স্প্রে করা এবং অযুর স্থানে সাবান সরবরাহ করাসহ ওয়াশিং পয়েন্ট ও সচেতনতামূলক বার্তাসহ ফেস্টুন স্থাপন করে।
উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের অগ্রগামী যুব সংগঠন সভাপতি মো: এনামুল হক জনান, করোনা মোকাবিলায় অগ্রগামী যুব সংগঠন স্থানীয় অভিভাবকদের সাথে সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা সভা, সরকারি সহযোগিতা বিতরণে তালিকা প্রস্তুতসহ স্থানীয় সরকারের সাথে সহযোগিতাপূর্ণভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, অগ্রগামী যুব সংস্থার সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদের বাজেটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখার বিষয়ে চিথলিয়া ইউপির সাথে এডভোকেসী করে, যার প্রেক্ষিতে ইউনিয়নের বাজেটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে খাতে ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এ ছাড়াও ঈদ উপলক্ষ্যে ১০০টি প্রান্তিক পরিবারের মাঝে ঈদ বাজার বিতরণ, স্থানীয় বাজার মসজিদ ও জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে নিয়মিত জীবানুনাশক স্প্রে করা, সচেতনতামূলক বার্তাসহ ফেস্টুন স্থাপন এবং হাত ধোয়ার জন্য ২টি ওয়াশ বক্স স্থাপন, এলাকায় বাইরের জেলা থেকে আগত ব্যাক্তিদের তথ্য সংগ্রহ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই ব্যক্তিকে নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারান্টাইন মানতে বাধ্য করাসহ করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে অনলাইন ভিত্তিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় আলো স্বেচ্ছাসেবী পল্লী উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: মাহফুজুর রহমান বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস বিশ^ মহামারিতে রুপ নিয়েছে, করোনাভাইরাসের ছোবলে বিশ^ অর্থনীতি যেখানে হুমকির মুখে পড়ছে সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিকে ধরে রাখা খুবই দুরূহ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তরুণ সমাজের এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। আমরা বিশ^াস করি তরুণদের সক্রিয় ও স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আলো স্বেচ্ছাসেবী পল্লী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফিরোজ আহাম্মেদ বলেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে তরুণরা যেভাবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক এবং সময়োপযোগী। আশাকরি তরুণরাদেশের উন্নয়নে তাদের এই সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডকে অব্যাহত রাখবে।
উল্লেখ্য, আলো স্বেচ্ছাসেবী পল্লী উন্নয়ন সংস্থা, একশন এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া জেলায় অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, যুব প্রতিনিধিত্ব ও সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি যুবদের কার্যকর অংশগ্রহন ত্বরান্বিত করতে একশন ফর ইম্প্যাক্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন।
