কুষ্টিয়া অফিস : কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হরিপুরে অবৈধভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অম্যান্য করে পদ্মা নদী থেকে স্যালো ইঞ্জিন চালিত ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বিশাল পাইপ দিয়ে নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু অবৈধভাবে উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে প্রভাবশালী মহল। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমিসহ মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীনসহ বন্যায় বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়তে পারে এমনটি ধারনা করছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, প্রতিদিন বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে প্রভাবশালীরা নৌকাপ্রতি এক হাজার ও ট্রলিপ্রতি দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। শুধু বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থেমে থাকেনি এই চক্রটি। নদীপথেও রয়েছে চ্যানেল চার্জ সেখানেও গুনতে হয় টাকা। বালুভর্তি নৌকা ও ট্রলিপ্রতি নেওয়া হয় ৩-৪ হাজার টাকা। কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর বালু মহালের উপর একের পর এক মামলা ফাঁদে ১০ বছর ধরে ইজারা বন্ধ রেখেছে একটি গোষ্ঠী। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে এবং প্রতিবাদ করলে নানান হুমকি প্রদান করা হয়। তবে ইজারা বন্ধ থাকলেও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। এতেও সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। গত দশ বছরে সরকার অন্তত ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দেশজুড়ে কুষ্টিয়ার মোটা বালুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর বাজার দরও অনেক বেশি। কুষ্টিয়াসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে বালু। নির্মাণ কাজেও কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীর বালুর সুখ্যাতি রয়েছে। জেলার ২১টি বালুমহাল থেকে দিনে অন্তত পাঁচ লাখ ঘনফুট মোটা বালু তোলা হয়।
মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া বালু ঘাটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, পশ্চিম বাহিরচর ও রানাখড়িয়া-তালবাড়িয়া বালু ঘাটে পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন নির্মাণ কাজের সর্বোচ্চ মান সম্মত প্রায় পাঁচ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন ও সরবরাহ হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
উচ্চ আদালত থেকে মামলার জটিলতা নিরসনে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এরইমধ্যে আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উচ্চ আদালত থেকে আইনি লড়াই করে যখনই কোন বালুমহাল ভ্যাকেট (অকার্যকর) করা হয়, তখনই আবার নতুনভাবে রিট পিটিশন করে দিনের পর দিন এ জটিলতা সৃষ্টি করে চলেছে একটি মহল।” এসব বালু মহালে সরকার চাইলে নিজেদের অনুকুলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন, সরকারিভাবে বালু মহাল ইজারা কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে জোরপূর্বক প্রতিদিন কেবলমাত্র বাহিরচর বারোমাইল ও ঘোড়ামারা তালবাড়িয়া বালুঘাটের অন্তত ৫শ নৌকা থেকে গড়ে ৫০ লাখ টাকা বিনা রশিদে চাঁদা আদায় করছেন প্রভাবশালী ঘাট মালিকারা। প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়ে বৈধভাবে ইজারা দিলে সরকারি রাজস্ব পেত।
জানা গেছে, ২১টি বালু মহালের মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাহাদুরখালী, মহানগর, চকুয়াদামা ও শুকদেবপুর, জুগিয়া মৌজার বালুমহাল। ভেড়ামারা উপজেলার পশ্চিম চরদাদাপুর, চরগোলাগনগর-আরাজীসাড়া ও রূপপুর বালুমহাল। মিরপুর উপজেলার ঘোড়ামারা-রানাখড়িয়া, চরমাদিয়া, পশ্চিম দাদাপুর, মিনাপাড়া ও চর তালিবাড়িয়া বালু মহাল। কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া, জয়নাবাদ-ছেঁউড়িয়া, সেরকান্দি-আগ্রাকুন্ডা-তেবাড়ীয়া-বরুড়িয়া, পাথরবাড়ীয়া-উত্তর হিজলাকর-এনায়েতপুর, গোবিন্দপুর, ভাড়রা-এলঙ্গী বালুমহাল। খোকসা উপজেলার চাঁদট-ভবানীপুর-গণেশপুর-কোমরভোগ এবং ওসমানপুর বালু মহাল। ২০০৮ সালে স্থানীয় জেলা প্রশাসন থেকে সর্বশেষ বালু মহালগুলোর ইজারা ডাকা হয়। এরপর থেকে আর কোনো ইজারা দেয়া সম্ভব হয়নি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট-জেলা প্রশাসক ক্ষমতা বিধিমালা মতে, নদী, পাহাড়, খনিজ সম্পদ, বনভূমি রাষ্ট্রের সম্পদ। যার বৈধ মালিক হচ্ছেন রাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিটি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসক। নির্দিষ্ট সময়ে ধার্যকৃত টাকায় খোলা দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে প্রতি বছর নদী, ঘাট, হাট, খনিজসম্পদ তার কাছ থেকে আগ্রহী প্রার্থীকে ইজারাগ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনোরূপ অবৈধভাবে দখল-জোরপূর্বক ইজারা না নিয়ে উত্তোলিত সম্পদ বিক্রি করা শুধু অপরাধই না রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহী। কুষ্টিয়ার ২১টি বালু মহাল রাষ্ট্রের সম্পদ। এ সম্পদকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের নিযুক্ত সরকারি কর্মচারী থেকে সব সচেতন নাগরিকের। তাই এ সময়ে দাবি উঠেছে ওই দখলদারদের হাত থেকে কুষ্টিয়ার এ সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন চৌধুরি বলেন, যারা অবৈধভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মামলা জটিলতায় এসব বালুমহালে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিরসন করে খুব শীঘ্রই আমরা সরকারি রাজস্ব আয় নিশ্চিত করতে পারব। সেভাবেই আমরা এগুচ্ছি।”