ম্যারাডোনার সেই ব্যক্তিগত চিকিৎসক লিওপোল্ডো লুকে কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইচ্ছা করেই তাকে ফাঁসাতে এমন রিপোর্ট করা হচ্ছে।
২৫ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ম্যারাডোনা। ফুটবল রাজপুত্রের মৃত্যুতে সত্যিই চিকিৎসায় কোনও অবহেলা ছিল কিনা তার তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতেই মূলত রোববার লুকে’র বাড়ি এবং তার ক্লিনিকে তল্লাশি চালায় স্থানীয় পুলিশ। আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে এ খবর প্রচার করা হলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হ।
বুয়েনস আয়ার্সের বাড়িতে তাদের বাবার চিকিৎসা ঠিকমতো হয়নি, এ অভিযোগ তুলেছেন ম্যারাডোনার মেয়েরা। ফলে সন্দেহের আঙুল উঠেছে আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তির ব্যক্তিগত চিকিৎসক লুকের বিরুদ্ধে।
নভেম্বরের একেবারে শুরুতেই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করা হয় ম্যারাডোনার। ১১ নভেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। প্রথমে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নেয়া হয়। এরপর তাকে রাখা হয়েছিল বুয়েন্স আয়ার্সের উত্তরে তিগ্রেতে।
ম্যারাডোনার পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘দিয়েগোর দেখাশোনার দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের কাজে কোনও ঢিলেমি ছিল কি না, সেটা জানা জরুরি।’
আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, শিগগিরই লুকে’কে জেরা করতে পারে পুলিশ। ম্যারাডোনার এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, ‘তদন্ত চলছে। পরিবারের সদস্য এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ। পাশাপাশি আর্জেন্টিনার বিচার বিভাগও তদন্ত শুরু করেছে।’
লুকের বিরুদ্ধে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার দাবি, ম্যারাডোনার চিকিৎসায় সব ধরনের সাহায্য করেছেন।
লুকে বলেন, ‘পুলিশ আমার বাড়িতে আসায় খুব হতবাক হয়েছি। তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করতে রাজি। আমি জানি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কীভাবে দিয়েগোর জন্য লড়ে গিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বন্ধু মারা গেছে; কিন্তু এখন যা হচ্ছে সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দিয়েগোর মেয়েদের যথেষ্ট স্নেহ করি। তার পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক দিনের। কেউ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তাকে হাসপাতালে রাখার প্রয়োজন ছিল না। তাই কোনও রিহ্যাব সেন্টারে রাখার কথা ভাবা হয়েছিল। তবে তার জন্য দিয়েগোর অনুমতি লাগত; কিন্তু তিনি নিজেই বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন। কোনও কিছুই তার অনুমতি না নিয়ে করা হয়নি। এ ধরনের মাদকাসক্ত রোগীদের হার্টের সমস্যা থেকেই যায়। তাও আমরা চেষ্টা করেছিলাম যতটা সম্ভব তা কমানোর; কিন্তু পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং তার জন্য আমি গর্বিত।’
পাশাপাশি লুকে এও জানান, আর্জেন্টাইন সোসাইটি অব নিউরোলজির চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শের পরই তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ লুকের ক্লিনিক থেকে কিছু মেডিকেল রিপোর্ট, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছে বলে খবরে জানানো হয়েছে। ম্যারাডোনার আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে শনিবারই মুখ খুলেছেন তার আইনজীবী এবং বন্ধু অ্যানজেলো পিসানি। তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন বলেও জানান পিসানি।
তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ইতালিতে আয়করের ঝামেলা থেকে ম্যারাডোনাকে বাঁচিয়ে ছিলাম। আমার মনে হচ্ছে, শেষের দিনগুলোয় পরিবার বা ঘনিষ্ঠদের কাছে কোনও ভালোবাসা পাননি ম্যারাডোনা।’ এরপরই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন বুয়েন্স আয়ার্সের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে।