পুলক সরকারঃ
করোনা সংকটে কুষ্টিয়ার খোকসাতে বেড়েছে চুরি ও ছিনতাই। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাসা—বাড়িতে চোর ও ছিনতাইকারীর উপদ্রব বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। করোনা মহামারির কারণে সাধারণত রাতে পুরো খোকসায় নীরবতা নেমে আসে। রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশিও কিছুটা ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে দুর্বৃত্তরা সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত নিরিবিলি পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকায় চুরি,ছিনতাই ও ডাকাতি করে বেড়ায়। তবে পুলিশের ভাষ্য মতে চুরি—ছিনতাই আগের চেয়ে অনেক কমেছে। অভিযোগ কিংবা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলায় গ্রামগুলোতেও চোরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। জমির ফসল থেকে হালের বলদ— কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না চোরের হাত থেকে। এতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে কৃষকের। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাত জেগে ফসলের ক্ষেত আর গোয়ালের গরু পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা।
জানা গেছে বুধবার (১৭ই’মার্চ) দিবাগত রাতে জেলার খোকসা পৌরসভার থানাপাড়া ৬ নং ওয়ার্ড প্রবাসি পল্লীতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসাগ্রীর ডিলার, মামা ভাগ্নে এন্টার প্রাইজ এর গোডাউনে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটেছে ।
ভূক্তভোগী জিলেট কোম্পানির ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান সময়েয় কাগজকে বলেন, গত বুধবার(১৭’মার্চ)দিবাগত রাতে, খোকসা পৌর ৬ নং ওয়ার্ড থানাপাড়া( কুষ্টিয়া ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন) প্রবাসী পল্লীতে মূল কেচি গেটের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে নিচ তলার গোডাউনের তালা ভেঙ্গে আমার কোম্পানির প্রায় পাঁচ লক্ষাধীক টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। এবিষয়ে থানায় এজাহার করেছেন বলে জানান তিনি।
গত ১০ ই ফেব্রুয়ারী রাতে ওই একই বিল্ডিং থেকে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম রানা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ হাদিউজ্জামান কায়েশে এই দু’জনের দুইটি মটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এবিষয়ে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম রানা থানায় এজাহার করেছেন বলে জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম রানা সময়েয় কাগজকে বলেন, গাড়ী চুড়ির ঘটনায় খোকসা থানায় এজাহার দায়ের করেছি। গাড়ি উদ্ধার করার জন্য কিন্তু এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত গাড়ী উদ্ধার বা চোর চক্র সনাক্ত হয়নি।তিনি দ্রুত এই চোর চক্রের সদস্যদের সনাক্ত করে গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় এনে শাস্তীর দাবী জানান।
এছাড়াও গত শনিবার(১৩’ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার পাতেলডাঙ্গী রাস্তার পাশ থেকে খোকসা উপজেলার কুঠি মালিয়াট গ্রামের ফরহাদ (১৪) নামের এক ভ্যান চালককে জুস খাওয়ানোর পর তার ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুই ছিনতাইকারী ।
আর ছ্যাচড়া চোরের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে পরেছেন খোকসা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের মাস্টার পাড়া ও কালীবাড়ি পাড়ার বাসিন্দারা। রাতে ঘরের জানালায় উকি মেরে সুযোগ বুঝে বাসাবাড়ির রাখা জিনিসপত্র জানালা দিয়ে চুরি হচ্ছে।
এভাবে একের পর এক চুরির ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের টহল কিংবা নৈশ প্রহরীদের প্রহরা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন মানুষ।
এলাকাবাসীরা জানান, মাদকের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে চুরির ঘটনা। খোকসাতে প্রতি রাতেই কোথাও না কোথাও চুরির ঘটনা ঘটছেই। মাদকসেবিরা টিউবওয়েলের মাথা, বিদ্যুতের তার, গরু এবং বাসাবাড়ির আঙিনায় রাখা জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এসকল চোরের দল পরিকল্পিত ভাবে বিশেষ করে চাকুরীজীবিদের বাসা বাড়ীতে তারা কখন বাড়ীতে থাকেন না কিংবা অফিসে যান ,এসময় তাদের হানা শুরু হয় । তাদের লক্ষ্য নগদ টাকা কিংবা স্বর্নালংকার। কোন প্রকার মালামাল নয় । অপরদিকে,মোটর সাইকেল চোরদের টার্গেট অপেক্ষাকৃত ভাল এবং দামী মোটর সাইকেল । ফলে মানুষ বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি সংঘবদ্ধ এ চোরদের কাছে । তবে চুরি ঠেকাতে পুলিশি নজরদারী বাড়ানোর দাবি স্থানীয়দের।
চুরির ঘটনায় খোকসা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার মুঠোফোনে সময়েয় কাগজকে জানান, চোর চক্র সনাক্ত করতে পুলিশিং কার্যক্রম আগের তুলনায় জোরদার করা হয়েছে,পুলিশিং টহলও বাড়ানো হয়েছে । চোর চক্র যতই শক্তিশালী হোক না কেন তাদের (চোর চক্র) দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।