মামুনুল হক এই মুহুর্তে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত মানুষ। সোনারগাঁও হোটেল এন্ড রিসোর্ট ঘটনার পূর্ব সময় পর্যন্ত তার পজিশন চিন্তা করে তাকে হোটেল কক্ষ থেকে বের করে আনা মানুষগুলোর আচরণ আরো প্রফেশনালিজম হওয়া উচিত ছিলো এই কারণে যে, বিষয়টি সত্য বা মিথ্যা যেটাই হোক সাংগাঠনিকভাবে শুধু হেফাজত কেন, সকল সাংগাঠনিক গোষ্ঠীই এটার মোকাবেলা সাংগাঠনিকভাবেই করবে এটা স্বাভাবিক। ঘটনা লাইভে যেহেতু প্রচারিত হচ্ছে, সকলেই দেখছে। অন্যান্য দলের মতোই তার অনুসারীরা কিছুতেই মেনে নেবে না। সাংগাঠনিক পর্যায় থেকে অন্য যে কোনো দলের কোনো নেতার অসম্মানও কেউ মেনে নিতে পারে না। এখন যেটা হচ্ছে, সেটাই হবার কথা। প্রথমে মামুনুল হককে ডিটেক্ট করার পর হোটেলেই কালক্ষেপণ করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক উৎসুক জনতা ভিড় করবে এটা অনপ্রিভেত নয়। তাছাড়া, একটি দোকান থেকে একটি বাচ্চাও একটি কলা বা রুটি চুরি করে ধরা পড়লে, আশেপাশে লোকজন যে গণধোলাইয়ে কত সিদ্ধ তা আমরা অহরহই টের পাই। গণধোলাই দিতে আমরা বেশ পারঙ্গম।
ইসলাম এখানে মোদ্দা কথা হয়ে দাড়াবে, কিন্তু মামুনুল হকই ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করেন কি না সেটাও ভেবে দেখা উচিত ছিলো। মাঠে ময়দানে এমন অনেক দলের অনেক নেতাই গলা বাড়িয়ে মাইক ফাটিয়ে ফেলেন কিন্তু বাস্তবে তাদের প্রয়োজনীয় জায়গায় পাওয়া যায় না।
যেহেতু মামুনুল হক এই মুহর্তে উচ্চ কন্ঠে কথা বলছেন, সেহেতু তার উপর সবচেয়ে বড় আঘাত আসবে এটাও সত্যি। কিন্তু ভাল হয়ে না জেনে কারো চরিত্র নিয়ে কথা বলাটাও ভব্যতার মধ্যে পড়ে না। অবশ্য আমাদের কলুষিত বিকারগ্রস্থ রাজনীতিতে এটা এখন আর কেউ প্রত্যাশাও করেন না।
মামুনুল হক কেন, যে কেউ কোনো অপকর্মে লিপ্ত হলেই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। এখানে কোনোমতেই ছেড়ে দেয়া উচিত হয়নি। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া প্রয়োজন ছিলো। তাহলে আইনের শাসনকে সাধারণের মধ্যে আরো বিশ্বাসযোগ্যতা পেতো। যেভাবে সোনারগাঁও হোটেল এন্ড রিসোর্টে হামলা করে, ভাঙচুর করে মামুনুল হককে বের করে নিয়ে এসেছে সেটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ঐক্যবদ্ধতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। সাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে এর চাইতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোনো অপরাধেও কখনোই এটা সম্ভব ছিলো না।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মি. নরেন্দ্র মোদি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বর্তমান সময়ে হেফাজত বনাম সরকারের মধ্যে যে উত্তপ্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে সেটার কোনো না কোনোভাবে একে অপরকে ঘায়েল করবে এটাও অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু সার্বিকভাবে এই বিষয়টা আমাদের জাতীয় জীবনে যেন কোনো প্রতিফলন না ঘটে সেটাই কায়মনে প্রার্থনা করি। অদৃশ্য তৃতীয় শক্তি সব সময়ই ওৎ পেতে থাকে সেটাকে নিয়েই সবচেয়ে বড় ভয়! ওরা দায়িত্ব নেবে না, কিন্তু অশান্তি বাঁধিয়ে ফায়দা হাসিল করতে বেশ পারঙ্গম। তাদের পেতে রাখা ফাঁদে পা দেয়া একেবারেই বারণ। হেফাজত ও সরকারের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়লে তারাই হবে বেশি ভয়ংকর। তছনছ করে দিতে পারে ইসলামের নাম করে বা সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নাম করে।
বাংলাদেশ অতিদরীদ্র থেকে ৫০ বছরে হাটি হাটি পা করে একটি পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব জুড়ে অনেকের কাছে সেটা গাত্রদাহেরও কারণ হয়ে পড়ছে। এই অগ্রযাত্রাকে কোনো মতেই নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না।
