. পাশের বাসার আন্টির মেয়ে নিপা আমার সমবয়সীই। আমাদের বাসায় এসে প্রায় আড্ডা দেয় খেলে। তাদের সাথে আমাদের বেশ ভালো সম্পর্ক। একদিন আন্টি বাসায় ছিল না বিধায় সন্ধ্যার পর পর্যন্ত ও আমাদের বাসায় ছিল। আমরা লুডু খেলছিলাম। কিছুক্ষণ পর আম্মু আমাকে দেখে অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে বলল, এই দেখ তোর বাবার জন্য এই চিপসটা এনেছে। নে খেয়ে নে। খেয়ে তারপর ওই রুমে যাবি।
চিপস এর অর্ধেক শেষ হওয়ার আগেই কলিংবেলের শব্দ পেলাম। দেখলাম নিপার আম্মু নিপাকে নিতে এসেছে। আন্টির হাতভর্তি ব্যাগে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার। ওদের চলে যাওয়ার পরপরই আম্মু বলল, দেখলি ওরা কেমন! ওতগুলো খাবার এনেছে। আর তোকে চোখেই দেখলো না। জানি না এগুলো কি ধরনের মানুষ!!
২. লিলির ভাই সহ আরও কয়েকটি ছেলেপেলে আমাদের উঠোনে এসে কয়েকদিন ধরে ক্রিকেট খেলে। ওদের ওখানে ব্যাডমিন্টন এর নেট টানানো থাকায় খেলতে পারে না। একদিন খেলার সময় বল উঠোনে রশিতে থাকা ভাইয়ার একটা গেঞ্জিতে লাগে। ভাইয়া প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওদের বকাঝকা করে। আর এই উঠোনে না আসার ব্যাপারে শাসিয়ে দেয়।
ওই দিন বিকেল বেলায় আমি লিলির বাসায় ব্যাডমিন্টন খেলতে যাই। দূর্ঘটনাবশত আমি ওদের নেটের মাঝামাঝিতে ছিড়ে ফেলি। লিলি বলে, দিলে তো ছিড়ে! ভাইয়া তখন পাল্টা বলে উঠে, ছোট মানুষ না বুঝে করেছে!! এমন করিস কেন!?
৩. নানুর বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পর একদিন সকালবেলা চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভেঙে যায়। আমি আবার সকালে অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠি। এত চিৎকার চেঁচামেচি শুনে উঠে দেখি, নানু মামীকে বকাঝকা করছে ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে। মামি রাতে মাথা ব্যথায় ঘুম না হয় সকালবেলা উঠে নাস্তা বানাতে পারেনি। তারপর মামী নাকি মুখ ফসকে বলে, আপা কি আজকের জন্য কষ্ট করে নাস্তাটা বানাতে পারল না! তারপরই চিত্কার শুরু হয়েছে। নানু বলছে ওরে কি কামের বেটি মনে হয়? কাম করতে আইছে নাকি!!নানুর আর কোন কথার উত্তর দেয়নি মামী আমার রুমে এসে চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছে। নানুর বকাঝকা থেকে মামার সাপোর্ট না পাওয়াটা তাকে বেশি আঘাত দিয়েছে।
সেদিন বিকেল বেলায় আমার খালা জামাই বাড়ি থেকে চলে আসে। তার শাশুড়ি আর জামাই নাকি তাকে বাজে কথা বলেছে। কি বাজে কথা! কেন? কেন বলেছে!! তারপর খালা বললো, তার ননদরা নাকি তাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। ননদের জামাই আর ছেলে-মেয়েদের অত খাবার সে রান্না করতে পারবে না। নানু আর মামা তখন ফোন দিয়ে খালু আর দাদিকে (খালামণির শাশুড়ি) কতক উচ্চবাচ্য শুনিয়ে দিল।
৪. সিএনজিতে করে একদিন মামীর বাসায় যাচ্ছিলাম। আমি আব্বু আর আম্মু পিছনে তিন সিট নিয়ে বসেছি। সামনে ২ সিট পূর্ণ হলেই গাড়ি ছেড়ে দিবে। এমন সময় এক মহিলা এলেন, তিনি আব্বুকে বললেন,
_ভাই একটু সামনে বসবেন। আমার একটু তাড়া আছে। পেছনে সিএনজিগুলো ভরতে এখনো অনেক দেরি হবে।
_এত তাড়া থাকলে সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে যান।
এইটুকু বলেই আবু মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
আরেকদিন মোহাম্মদপুর যাওয়ার সময় ফুফুর সাথে দেখা হয়ে গেল। তিনি ওইদিকেই যাবেন। পুরো সিএনজিতে তখন ভরে গেছে। আবু পিছনের সিট থেকে উঠে ফুফুকে বসতে বললেন। না না করা সত্বেও জোর করে বসালেন। দেন আব্বু অন্য সিএনজিতে উঠে গেলেন।
৫. আমাদের ক্লাসরুম শিক্ষা ক্লাস নেন নাসিমা ম্যাডাম। তার মেয়েও আমাদের সাথেই পড়ে। তার মেইন কাজ হল ক্লাসে এসেই বই চেক করা। যারা বানায় তাদেরকে কান ধরে বেঞ্চের উপর দাড় করিয়ে রাখেন তিনি। তবে যদি তার মেয়ে বই না আনে তাহলে তিনি তার মেয়েকে কখনোই শাস্তি দেন না। এমনকি তিনি পরীক্ষার হলে গার্ড দেওয়ার সময় যদি দেখেন, তার মেয়ে দেখা দেখি চেষ্টা করছে। তাহলে, দেখেও না দেখার ভান করেন।
শুধু কি এই পাঁচটি ঘটনাই? নাহ…………!!!
আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত এরকম অনেক অনেক ঘটনা ঘটেই চলেছে। আপনি দেখেন নি! আশেপাশে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন। আপনার পাশে এমন অনেক চরিত্র রয়েছে। আবার হতেও পারে যে আপনি এই চরিত্রগুলোরই অন্তর্ভুক্ত। সো………প্লীজ!!