শহিদুল ইসলাম, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধিঃ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার সামনে ব্যস্ততম ঢাকা খুলনা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বিআইডব্লিউটিএর হেবিকল ওয়েগ্রিজ স্কেল ( ট্রাকের ওজন পরিমাপক যন্ত্র) যেন রোগীদের মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাড়িয়েছে।
অপরিকল্পিত ভাবে মহাসড়কের ঝুঁকিপুর্ন স্থানে স্কেলটি নির্মানের ফলে প্রতিদিন সেখানে পন্যবাহি ট্রাকের লম্বা লাইন লেগে যায়। এতে পাশেই অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ের প্রবেশপথ প্রায়ই অবরুদ্ধ হয়ে পরে।
বিশেষ করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন শতশত রোগী আসে এখানে। কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে থেকেই ট্রাকের দীর্ঘ সারি পরে যায় ফলে এ্যাম্বুলেন্স সহ রোগিদের বহনকৃত অন্যান্য গাড়ি হাসপাতালের গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না। তাছাড়া রাস্তা সরু হওয়ায় একপাশ দিয়ে ট্রাক থাকে অন্য পাশ দিয়ে বাস আসে এর ফলে বিপরীত দিকে আসা কোন যানবাহন সামনে আগাতে পারেনা। অনেক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এই অপেক্ষাই কোন কোন রোগীর জন্য মরন ফাদ হয়ে দাড়িয়েছে।
কিছুদিন আগে ওয়েট স্কেলের জ্যামে পড়ে অটো রিকশার মধ্যে
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের শাহাজদ্দিন বেপারী পাড়ার মো. লুৎফর মোল্লার স্ত্রী রেহেনা (৩৫)খাতুনের গর্ভপাত হয়।
রেহেনা বেগম নয় মাস শেষ হওয়ায় তার পেটে হালকা ব্যাথা উঠার কারণে তার স্বামী অটোরিকশায় করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে যাওয়ার সময় জমিদার ব্রীজ নামক এলাকায় গেলে প্রসূতি মায়ের পেটের ব্যাথা প্রচন্ড বেড়ে যায়। তখন তারা অটোরিকশাটি ঘুরিয়ে গোয়ালন্দ হাসপাতালে দিকে আসতে গেলে গোয়ালন্দ উপজেলার সামনে ঢাকা খুলনা মহাসড়কের পাশে ওয়েট স্কলের কারণে ট্রাকের দীর্ঘ জ্যামের সৃষ্টি হয়। আর সেই জ্যামে পড়ে রাস্তার মধ্যে প্রসূতি মায়ের ডেলিভারি হয়ে যায়। জ্যাম থাকায় সে সময় মত গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে নিতে ব্যর্থ হন।
গত ১৯ ই আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) ব্যাপারী পাড়া নিবাসী গোলজার মন্ডল গোয়ালন্দ থানা মসজিদে নামাজ শেষে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে তাকে তাড়াতাড়ি অটোরিকশা করে হাসপাতালে আনার সময় উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জ্যাম পড়তে হয় এবং প্রায় আধা ঘণ্টা বিলম্ব হয় হাসপাতালে পৌঁছাতে। এই অবস্থায় তিনি অটোরিকশার মধ্যেই মারা যান। হয়তো সময় মত পৌঁছাতে পারলে তিনি বেঁচে যেতেন।
রোগীর সাথে থাকা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গোয়ালন্দ ঘাট থানা মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় আমার ভাইয়ের হার্ট অ্যাটাক করে আমরা তখন সেখান থেকে তাকে দ্রুত অটোরিকশা করে হাসপাতালে নিয়ে আসি কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও হাসপাতালের গেট এ আসতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লেগে যায় এর ফলে সে অটোরিকশায় মারাযায় কিন্তু যদি সময়মত নেওয়া যেত তাহলে হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হত।
এটা প্রায় প্রতিদিনের দৃশ্য গোয়ালন্দ জমিদার ব্রিজ বা রেলগেট থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত। এরফলে ঢাকা খুলনা মহাসড়কে এপাশে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত জ্যাম পড়ে যায়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, আসলে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ ভূমি অফিস এবং বেশ কয়েকটি অফিসে আমরা যারা আসি প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে রাস্তা পার হতে হয়। এই ওয়েট স্কেলটি ঘাটের দিকে কোন নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ অন্যান্য স্থানে যারা আসেন তারা রক্ষা পেতেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সির বলেন, এই ব্যাপারে আমি কয়েকবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি বিআইডব্লিউটিএর সাথে কথা বলাসহ উপজেলার আইন শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে বারবার বিষয় টি তোলার পরও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। বিআইডব্লিউটিএর লোকজন জানানো হলেও তারা শুধু আশ্বাস দেন কিন্তু পরে আর কোন কাজ হয়না।
তিনি ক্ষোভের সাথে আরো বলেন প্রতিদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আসা রোগী সহ প্রায় সবাই কষ্ট ভোগ করে। যারা ভূমি অফিস সহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য অফিসে আসছে। তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে আমার ভাগিনা সহ চার-পাঁচ জন একটা অটোরিকসায় উপজেলা কমপ্লেক্স এ আসার দাড়িয়ে থাকা ট্রাকের সারিকে সাইড দিতে অটোরিকশাটি উল্টিয়ে পরে যায় এরফলে কয়েকজন আহত হলেও সে পঙ্গু হয়ে যায়।