পুলক সরকার :
কুষ্টিয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়ের(বিচুলি) দাম। এতে জেলায় চরম সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য খড়ের। দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপাকে পড়েছেন জেলার খামারি ও সাধারণ কৃষকেরা। আর এতে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এই খড়। গো-খাদ্য খড়ের চড়া দাম এ যেন খড়ের বাজারে আগুন লাগার মতো। ফলে মাথায় হাত পড়েছে জেলার গরু খামারিসহ প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায় প্রতি শত আটি (ছোট) খড় বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকায়। সরেজমিনে জেলার খোকসা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কয়েকজন খুচরা খড় বিক্রেতার সাথে কথা বলে খড়ের এমন দাম জানা গেছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানান , আমরা গ্রাম থেকে প্রকারভেদে ৩১০-৩৬০ টাকা দরে প্রতি শত খড় ক্রয় করছি এবং পরিবহনে খরচ হয় ২০-৩০ টাকা । তাই আমরা প্রতি শত আটি ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি করছি। এসময় বেশ কয়েকজন বিক্রেতাও এমন কথা জানায়।
খোকসার খড় বাজার ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো: সালেহীন শাহীন জানান, খড়ের দাম গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ। একদিকে দুধের দাম কম আর অন্যদিকে গো-খাদ্য খড়ের দাম বেশি। এতে আমাদের খামারিদের টিকে থাকায় কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, গুড়া-ভুসির পাশাপাশি ধানের খড় গরুর জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য। গুড়া-ভুসির সঙ্গে খড় কেটে ভিজিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। গরুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য এই খাদ্যের বিকল্প নেই। তাই খামার অথবা ব্যক্তিগত গরু পালনকারীদের সারা বছরের জন্য খড়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছেই।
শুধু খামারিরা নয় স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য দু-একটা গাভি বাড়িতে লালন-পালন যারা করেন তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়ের বাজার।
কুমারখালী উপজেলার এক দিন মজুর জানান,আমরা দিন মজুর। যা আয় রোজকার হয় এতে কোনোমতে আমাদের সংসার চলে। বাড়িতে দুধের চাহিদা এবং বাড়তি আয়ের জন্য দু- একটা গরু পালনে বর্তমানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে খড়। বাজারে ৩০ আটি খড় কিনতে হচ্ছে ১৪০-১৮০ টাকায়। এভাবে যদি খড়ের দাম বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের গরু পোষা বাদ দিয়ে দিতে হবে।
জেলার খোকসা উপজেলার গাভি পালনকারী ইব্রাহীম খলীল জানান, একটি গরুর সারা বছরের খাবার হিসেবে খড়ের বিকল্প নেই। আবাদি জমিতে ঘাস নেই বললেও চলে। বর্তমানে আবাদি জমির পরিমান কমে গেছে । তাই খোলা মাঠে গো চারণের কোন স্থান নেই। গরুর তিনবেলা নিয়ম করে অন্যান্য খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি খড় দিতে হয়। এভাবে যদি খড়ের বাজার বাড়তে থাকে তাহলে আমরা সাধারণ গরু পালনকারীরা কিভাবে চলব।
খোকসা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র রায় খামারিসহ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, খামারি ও কৃষকদের খড় সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। যেহেতু খড়ের পুষ্টিগুণ মান কম সেহেতু বেশি পরিমানে উন্নত জাতের ঘাস চাষ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে খড়ের পরিবর্তে কচুরিপানা, কলাগাছ খাওয়ানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন উপজেলার এই কর্মকর্তা।